এখন বাংলাদেশের মানুষের দাঁড়ানোর কোথাও জায়গা নেই : ফখরুল

Daily Nayadiganta

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর – ফাইল ছবি

এখন বাংলাদেশের মানুষের দাঁড়ানোর বা আশ্রয় নেয়ার কোনো জায়গা নেই মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাষ্ট্র যখন নিপীড়নকারী হয়ে যায় তখন যাওয়ার জায়গা থাকে না।

শুক্রবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাষ্ট্র যখন নিপীড়নকারী হয়ে যায়, রাষ্ট্র যখন নির্যাতনকারী হয়ে যায়, রাষ্ট্র যখন আপনাকে ডিনাই করে ন্যায়বিচার থেকে তখন আপনার যাওয়ার জায়গাটা কোথায় থাকে। আমরা এই কথাটা বলছি যে, সুপরিকিল্পভাবে, সুচিন্তিতভাবে বাংলাদেশকে একটা অকার্য্কর রাষ্ট্রের পরিণত করা হচ্ছে। এখানে কোনো সুশাসন থাকবে না, এখানে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না, আমাদের সংবিধানে যেসমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। ওদিকে নিয়ে চলেছে রাষ্ট্রকে আজকে যারা ক্ষমতায় আছে তারা।’

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। আইনের শাসনের কথা বলে আইনকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় আসাকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, আপনারা বেশিরভাগই এটাকে বলেছেন হেফাজতের তাণ্ডব। আমি এই শব্দটার সাথে একেবারেই একমত নই। তাণ্ডব তো করেছে সরকার। অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে তারা এই তাণ্ডবটা করেছে এবং নাম দিয়েছে হেফাজতের তাণ্ডব।’

দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তার ব্যাপারে হঠাৎ করে একটা মিথ্যা অডিও ক্লিপ ছাড়া হয়েছে। আপনারা ভালো করেই জানেন, যেকোনো জিনিস তৈরি করা কোনো কঠিন কাজ না। সেটা তারা (সরকার) করে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে বাসা থেকে গ্রেফতার করা হলো। তারপর রিমান্ডে নিয়ে গেলো। সেই রিমান্ড আর শেষ হয় না, ১০ দিন, ৫ দিন, ৭ দিন রিমান্ড। আবার তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। একজন নারী, অ্যাডভোকেট, রাজনীতিবিদ, কাম ফ্রম ভেরি গুড ফ্যামিলী, সোশ্যাল স্ট্যাটাস যেকোনো মানুষের চাইতে উপরে তাকে গত তিন মাস যাবত কারাগার, থানা বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে চরম হয়রানি করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে। একমাত্র কারণ তার অপরাধ হচ্ছে তিনি নারী। তুমি এতো অ্যাকটিভ কেনো? তুমি হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়ে, তুমি এতো কথা বলো কেনো আমাদের বিরুদ্ধে?’

কারাবন্দি দলের যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসলাম চৌধুরীর কী অপরাধ? যেটা দেখতে পাই ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করেনি। তাই বলে তাকে আজকে পাঁচ বছর জেলে রাখা হয়েছে। বিচার তো হচ্ছে, বিচার হবে।’

‘আর আপনাদের ওই যে অ্যাডভাইজর, যিনি করোনা নিয়েও আমাদের সাথে প্রতারণা করলেন, যার হাজার হাজার কোটি টাকা লোন হয়ে আছে, একটা দিনের জন্যও তাকে গ্রেফতার করলেন না। উপরন্তু তাকে পুরস্কার দিয়েছেন সরকারি গাড়ি-বাড়ি দিয়ে।’

এসময় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, কেন্দ্রীয় নেতা আসলাম চৌধুরী, নিপুণ রায় চৌধুরীসহ দলের নেতৃবৃন্দের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান তিনি।

সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ অবস্থার জন্য সরকারের ‘নিষ্ক্রিয়তা’কে দায়ী করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সীমান্তবর্তী এলাকায় যে করোনা ছড়াবে তা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। আমরা চিৎকার করে বলেছি। কোথাও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমাদের ঠাকুগাঁও জেলার হাসপাতালে কোনো আইসিইউ নেই, অক্সিজেন নেই। আজকেও পত্রিকায় ছবি বেরিয়েছে রাজশাহীতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে সবাই হাঁসফাঁস করছে।’

ফখরুল বলেন, ‘ভারতে, পশ্চিমবঙ্গে এগুলো হচ্ছে- এই অবস্থা তো আমরা দেখেছি। তারপরেও সম্ভিত ফিরেনি। ইউ আর প্রোটেক্টিং দোউস পিপলস। ওই চোরগুলোকে, ডাকাতগুলোকে আমরা প্রোটেক্ট করতেছি- দিস ইজ ভ্যারি আনফরচুনেট।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের মানুষের দাঁড়ানোর কোথাও জায়গা নেই। একটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোথাও গিয়ে যে আশ্রয় পাবে, একটু রিলিফ পাবে- কোথাও জায়গা নেই।’

পুলিশকে নির্বাচনী পদক প্রদান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম পুলিশকে নির্বাচনী পদক দেয়া হচ্ছে। ২০১৮, ২০১৪ ও ২০০৮ সালের জন্য। কারণ কী? কোনোদিন শুনিনি এই পৃথিবীতে যে, নির্বাচন করার জন্য পুলিশকে পদক দেয়া হয়।’

‘একটাই কারণ- তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়েছে। সেজন্য এসপি সাহেবরা বলেন, দেশটা আমরা চালাই। পুলিশের কনস্টেবল বলে- মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ।’

সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, নিপুণ রায় চৌধুরীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারও বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে দলের কেন্দ্রীয় নেতা রিয়াজ উদ্দিন নসু, তাইফুল ইসলাম টিপু, শেখ রবিউল আলম, শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।