Unique Efforts of Enam Medical College Hospital

enam-medical
আহত মানুষকে চিকিৎসা দিতে গতকাল দিনভর এ রকম প্রাণান্ত পরিশ্রম করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিত্সক ও শিক্ষার্থীরা

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফটকে ট্রলি, স্ট্রেচার আর হুইলচেয়ার নিয়ে প্রস্তুত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। ঘেমে-নেয়ে একাকার। কারও অ্যাপ্রনে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। একটার পর একটা অ্যাম্বুলেন্স রোগী নিয়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এসে দাঁড়াচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স ঢোকামাত্রই ট্রলি ঠেলে ছুটে যাচ্ছেন এই হবু চিকিৎসকেরা। ফটক থেকে নেওয়া হচ্ছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সেখান থেকে অবস্থা অনুযায়ী পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগে।
গতকাল বুধবার সকালে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর থেকেই একনাগাড়ে বিনা পয়সায়, কোনো প্রকার নিবন্ধন বা আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সেবা দিয়ে চলেছেন সাভারের এনাম মেডিকেলের চিকিৎসক, শিক্ষার্থীসহ সব কর্মীরাই। আশপাশের ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতেও কিছু রোগী নেওয়া হয়। তবে ওই এলাকার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল হওয়ায় এনামেই সাত শয়ের মতো আহত ব্যক্তিকে নেওয়া হয়।
ভবন ধসের পর পরই ওই ভবনে অবস্থিত পোশাক কারখানার শ্রমিকদের খোঁজে আসা মানুষের ঢল নামে ওই এলাকায়। সাভারের ফুলবাড়ী এলাকা থেকেই সকাল পৌনে ১০টার দিকে মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় তরুণ ও পোশাক শ্রমিকেরা উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন। কেউ ঘটনাস্থল থেকে আহত ব্যক্তিদের বের করার কাজ করছিলেন, আর উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের বিনা ভাড়ায় হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছিল সাভার সেনানিবাস, ফায়ার সার্ভিস, এনাম মেডিকেল, আদ্দ্বীন, মারকাজুল ইসলাম, সীমা মেডিকেল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। স্থানীয় তরুণেরা বাঁশি ও লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের জন্য রাস্তা ফাঁকা রাখছিলেন, স্বজনের খোঁজে আসা মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করছিলেন।
এনাম মেডিকেল ও পাশের চারটি বেসরকারি হাসপাতালে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সাভার সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়া হয়।
এনাম মেডিকেলের পরিবহন কর্মকর্তা আবদুল ওহাব বলেন, সকালে চালক না থাকায় তিনিই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বের হয়ে যান। ঘটনাস্থল থেকে পৌনে এক কিলোমিটার দূরের এনাম হাসপাতালে অন্তত ৩০ বার যাতায়াত করেছেন। প্রতিবারই তিন থেকে চারজন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় তরুণেরা অ্যাম্বুলেন্সের দরজায় লাঠি আর বাঁশি নিয়ে ঝুলতে ঝুলতে রোগী বহনে সাহায্য করেছেন। তাঁদের বাঁশি আর অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজিয়ে তিরবেগে হাসপাতালের দিকে চলছিল অ্যাম্বুলেন্সগুলো।
ঘটনার দুই ঘণ্টার মধ্যেই এনাম মেডিকেলে আহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। প্রতি মিনিটেই আসতে থাকে অ্যাম্বুলেন্স। রোগী নিয়ে দৌঁড়াতে থাকেন চিকিৎসকেরা। জরুরি বিভাগে ঢোকানোর আগেই বেছে বেছে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল অপারেশন থিয়েটার ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। আর মৃতদের লাশ রাখা হয় হাসপাতালের স্টোমাক ওয়াশ কক্ষে। তিন ঘণ্টার মধ্যে কক্ষটি ভরে যাওয়ার পর হাসপাতালের পেছনের গ্যারেজে সারিবদ্ধ করে রাখা হয় লাশগুলো। বেলা তিনটা পর্যন্ত দুই কক্ষে ৬২টি লাশ জমেছিল।
সেবা দিতে প্রস্তুত তাঁরা: এনাম মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শুভ চক্রবর্তী বলেন, ‘সেবা দিতেই চিকিৎসা বিদ্যায় ভর্তি হয়েছি। যেহেতু চিকিৎসা দেওয়ার মতো উপযুক্ত হইনি। তাই আমরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা সবাই রোগীকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছি।’
জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা যায়, পেতে রাখা চেয়ারে শুইয়ে-বসিয়ে রাখা হয়েছে অল্প আহত ব্যক্তিদের। এঁদেরই কেউ ব্যথায় কাতরাচ্ছেন, কেউ চিৎকার করছেন। চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা এঁদের ব্যথানাশক ইনজেকশন ও ট্যাবলেট দিচ্ছেন। হাত-পায়ের ক্ষত ধুয়ে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিচ্ছেন। প্রত্যেক আহত ব্যক্তিকে ছাত্রছাত্রীরা এসে এক বোতল করে পানি দিয়ে যাচ্ছেন। কেউ মুঠোফোন নিয়ে এসে আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছেন। কেউ বা আহত ব্যক্তিদের কোলে করে বা ধরে সরিয়ে নিচ্ছেন বহির্বিভাগের অপেক্ষা কক্ষে।
বেশি আহত ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ১২তলা হাসপাতাল ভবনটির ওপরের তলাগুলোতে। একই বিছানায় একাধিক রোগী, মেঝেতে, বারান্দায় রোগীদের শুইয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওষুধপত্র, স্যালাইন সবই বিনা মূল্যে।
হাসপাতালের চেয়ারম্যান এনামুর রহমান বলেন, ৭৫০ কক্ষের এই হাসপাতালে এক হাজার রোগীর চিকিৎসা ভালোভাবেই দেওয়া সম্ভব। হরতালের কারণে রোগী ছিল দেড় শয়ের মতো। ওই হাসপাতালের ৪৫০ জন চিকিৎসা কর্মকর্তা, ৪২৭ জন নার্স, ৭৫০ জন ছাত্রছাত্রী, ১৫৭ জন শিক্ষকের সবাই গতকাল উপস্থিত থেকে চিকিৎসা দিয়েছেন। সকল প্রকার চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, ওষুধ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি দেওয়া হয়েছে বিনা মূল্যে।
এগিয়ে এসেছে সবাই: হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, দুই ঘণ্টার মধ্যেই হাসপাতালের জরুরি ওষুধ ও ব্যান্ডেজের মজুদ ফুরিয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কর্মীরা মোটরসাইকেলে বোঝাই করে ইনজেকশন, ব্যান্ডেজ আর ওষুধ নিয়ে হাসপাতালে আসেন।
আশপাশের মানুষ আসেন পানি নিয়ে আর রক্ত দিতে। ওই হাসপাতালের শিক্ষার্থীরাই প্রায় ২০০ ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন। বিকেলের দিকে স্থানীয় মাদ্রাসাগুলোর কয়েক হাজার ছাত্র রক্ত দিতে এনাম মেডিকেলের সামনে এসে ভিড় জমায়। ফটকের সামনে বসে রক্তদাতা ও কার কোন গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন তার তালিকা করছিলেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।
এনাম মেডিকেলের পরিচালক (হাসপাতাল) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সব চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও কর্মীরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালের ওষুধ বিক্রয়কেন্দ্রে বলে দেওয়া হয়েছে যার যেটা প্রয়োজন তাঁকে সেটা দিতে। শিক্ষার্থীরা ট্রলি ঠেলা থেকে শুরু করে ওয়ার্ডবয়ের কাজ করে চলেছেন।

Source: Prothom-Alo

1 COMMENT

  1. principal, administrator, doctors, students and all other staff of Enam medical college Savar have rise up to the call of humanity right in time when human massacre has occured in by a collapse of nine storied Rana Plaza there. we are spell- bound, Salvation from this havoc is the only job at this moment. hope we all extend our hand for salvation.

Comments are closed.