The whistle of civilization

Minar Rashid

মানবতার হুইসেল

সরকারের অন্যতম বড় মুখপাত্র ও জাদরেল মন্ত্রী নাসিম ঘোষণা করেছেন, আমাদের দেশটিতে এখন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচাইতে বেশি শান্তি বিরাজ করছে। তার এই ঘোষণাটি কর্ণকূহরে প্রবেশের পরপরই দেশটিকে নিয়ে একটি হুইসেল ( গৃহযুদ্ধের পথে দেশ) বাজিয়েছেন সুইডিশ ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটস, ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের ফরেন এফেয়ার্স এবং হিউম্যান রাইটস কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ল্যার অ্যাডাকটুসন। কাজেই কোন প্রক্রিয়ায় ( আগের বার মন্ত্রী থাকাবস্থায় হাইকোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিলে নেতৃত্বদানকারী) মোহাম্মদ নাসিম দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন তা শুধু দেশবাসীই নয়,বিশ্ববাসীও মালুম করে ফেলেছে।

গত বৃহস্পতিবার দেয়া ওই বিবৃতিতে তিনি মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশ এখন ভুল পথে হাঁটছে। বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতিকে নাজুক উল্লেখ করে তিনি বিবৃতি দিয়েছেন এবং আশংকা প্রকাশ করেছেন যে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশটি পুলিশী রাষ্ট্র অথবা গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

একই ধরনের সতর্ক বাণী দিয়ে গত ১৩ই জুলাই নয়া দিগন্তে একটি উপসম্পাদকীয় কলাম লিখেছিলাম। লেখাটির শিরোনাম ছিল ‘একটি জাতির আত্মহত্যার মহড়া’ । যা বোঝাতে চেয়েছি অধিকাংশ পাঠক তা বুঝতে পেরেছেন বলে খুব ভালো লেগেছে । সংবিধানের কিছু ধারা ও অনুবাদ সহ কিছু লেখার উদ্বৃতি উল্লেখ করায় লেখাটির সাইজ মাত্রাধিক বড় হয়ে পড়ে। এর পরেও অনেকে কষ্ট করে পুরোটা পড়েছেন। নয়া দিগন্তের নিজস্ব পেইজ ছাড়া আমার পেইজটিতেই লাইক পড়েছে প্রায় দশ হাজার। মন্তব্য পড়েছে চার শয়ের উপরে। লেখাটির মূল সুর কিছু সংখ্যক পাঠকের বুঝতে কষ্ট হয়েছে কিংবা তারা লেখাটি না পড়েই অনেকটা হাছান মাহমুদের স্টাইলে মন্তব্য করেছেন।
এই নগণ্যের প্রায় প্রতিটি লেখার উপরে প্রচুর মন্তব্য পড়ে। একজন অত্যন্ত ব্যস্ত পেশাজীবী হিসাবে সময়ের স্বল্পতার কারনে সবার মন্তব্যের জবাব দেয়া সম্ভব হয় না বলে আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। টক ঝাল মিষ্টি এই সব মন্তব্যের জন্যে সবাইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সন্দেহ নেই, এই সব মন্তব্যের মাধ্যমে আপনারা নেটজগতে একটা শক্তিসালী নাগরিক সমাজের সৃষ্টি করে চলেছেন।
কাজেই নতুন একটি লেখার মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে উথ্থাপিত প্রশ্নের জবাব দেয়ার চিন্তা ভাবনা করেছি। প্রথমেই বলে রাখি, লেখালেখি আমার পেশা নয়, নেশাও নয়। ভেতরের একটা তাগিদ থেকেই লিখে থাকি। এই লেখালেখির মাধ্যমে যেমন অসংখ্য সুহৃদ ও বন্ধু পেয়েছি, তেমনি শত্রুও মনে হয় খুব কম সৃষ্টি করি নাই।

এই কলাম বা পেইজটিতে নিজের সম্পর্কে কিছু লেখাকে পছন্দ করি না। তারপরেও অনেকের ভুল ভাঙাতে কিছু উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করছি । লেখার জন্যে কোন বিশেষ খুঁদ কুড়া নেয়া তো দূরের কথা- কলামিস্টদের জন্যে বরাদ্দকৃত সামান্য সম্মানীটুকুও আমি এযাবত বিনয়ের সাথে ফিরিয়ে দিয়েছি । শফিক রেহমানের অধীনে দৈনিক যায় যায় দিন এবং দৈনিক নয়া দিগন্ত – উভয় পত্রিকার বেলাতেই এই বিনয়টি দেখানোর সৌভাগ্য এই অধমের হয়েছে। এটা এ কারণে নয় যে আমার প্রচুর টাকা পয়সা রয়েছে । লেখালেখি করে আমি কোনদিন কোন টাকা পয়সা নেব না, এটাই আমার প্রতিজ্ঞা। কারন সংসার চালানোর জন্যে মোটামুটি চলনসই একটা পেশা আমার রয়েছে। জীবন ধারনের জন্যে এই অস্ত্রটি পেয়েছি আমার দেশের জনগণের টাকায় সৃষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে। সেই ঋণের কিছু ফিরিয়ে দিতেই জাহাজের লোহা লক্করের পাশাপাশি এই কলমটি হাতে তুলে নিয়েছি। টাকা নামক গরল বা তরলের উপর দিয়ে জীবন নামক নৌকাটি অনেকটা স্বাচ্ছন্দেই চালিয়েছি কিন্তু সেই নৌকার উপর তরল বা গরলটিকে কখনই উঠতে দেই নি। কাজেই সবাইকে অনুরোধ করব, আমার মত নগণ্য একজন ব্যক্তির ব্যাপারে চিন্তা না করে আমার লেখার বিষয়গুলিতে মনোযোগ দিন । সেখানে কোন ভুল থাকলে, কোন মিথ্যা তথ্য থাকলে, বিভ্রান্তিকর কিছু থাকলে ধরিয়ে দিন।

আমার নিজস্ব কিছু বিশ্বাস বা ধারনা রয়েছে। একজন মানুষ হিসাবে নিজের পছন্দ বা অপছন্দকে ঢেকে রাখাকে আমি বুদ্ধিবৃত্তিক অসততা বলে জ্ঞান করি। যেমন আমি আমার ছেলেকে সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসি । আমার বাপও তাই করেছে। এটা প্রাকৃতিক, এখানে নিজের কোন হাত নেই। কিন্তু পিতৃ স্নেহের অন্ধত্ব কখনই একজন সচেতন পিতার কর্তব্য থেকে আমাকে বিরত রাখতে পারবে না। নিজের ছেলেকে স্নেহ করি বলেই অন্যের ছেলের হক মেরে নিজের ছেলেকে খাওয়াতে পারবো না। পিতৃস্নেহের বিপরীতে নৈতিক বোধ এখানে একটা চেক এন্ড ব্যালান্স সৃষ্টি করেছে।

তেমনি ভাবে রাজনৈতিক জীব হিসাবে কোন বিশেষ দল বা রাজনৈতিক বিশ্বাসের প্রতি দুর্বলতা থাকা অন্যায় কিছু নয়। কিন্তু আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক মহলে এটিকে ঢেকে রাখার একটা প্রবণতা দেখা যায়। এই ধরনের একটা আবহ তৈরি করার কারনেই আমাদের রাজনীতি আজ মেধাহীন ও বাক সর্বস্ব হয়ে পড়েছে। পলিটিক্সকে আমরা পলিট্রিক্স বানিয়ে ফেলেছি। মন্ত্রী আর পাগল এই দুই প্রজাতি এখন একই কিছিমের হয়ে পড়েছে।

সৌদি আরবে ধরা পড়া রাজনের হত্যাকারী কামরুল আর প্রাক্তন মন্ত্রী হাছান মাহমুদের মধ্যে কে বেশি অপ্রকৃতিস্থ তা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে । নরপিশাচ কামরুল মনে করে গণধোলাইয়ে রাজন মারা গেছে। আর হাছান মাহমুদ মনে করেন যে রাজনের মৃত্যুর জন্যে বেগম খালেদা জিয়া দায়ি।অবস্থা এমন বেগতিক হয়ে পড়েছে যে এই গোলকে যত অঘটন ঘটছে তার সবগুলির জন্যেই হাছান মাহমুদ বেগম জিয়াকে একের পর এক দায়ি করছেন। এসব কথার পুরস্কার স্বরূপ আবারও তিনি মন্ত্রী পরিষদ সচিবালয় থেকে বিশেষ ফোনের অপেক্ষায় রয়েছেন।

গোয়ানতে নামা বে তো আটক কৃত তালেবান এবং আল কায়েদার সদস্যদের উপর নির্যাতনের কথা ফাঁস হয়ে গেলে সেই দেশের সুশীল সমাজের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাই বলে সেই সমালোচকগণ আল কায়েদা বা তালেবান বলে গণ্য হয়ে পড়ে নি কিংবা তাদের দালাল বলে চিহ্নিত হন নি। কিন্তু আমাদের দেশে তেমন করেই ভাবা হয়। এটা একটা সর্বনাশা প্রচারনা।
সংবিধানের কাঁটা ছেড়া নিয়ে আমি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াকে বিশেষ কোন ছাড় দেই নি। আমি স্পষ্ট বলেছি, এটা হলো আমাদের সম্মিলিত পাপের ফসল। অন্যদের মত বঙ্গবন্ধু বা শহীদ জিয়াকে সম্মান দেখাতে তাদেরকে দেবতা বানানোর প্রয়োজন নেই। দোষে গুণে মানুষ মনে করেই আমি তাদের উভয়কেই শ্রদ্ধা করি। তাদের ভালো কাজকে ভালো এবং ভুলকে ভুল বলার সৎ সাহস আমার রয়েছে। ইতিহাসের মুখোমুখি হতে আমার কোন পিছুটান নেই। কোন উসখুস নেই। কারন আমি চাই এই দেশটির মঙ্গল হোক। যে কোন কিছুর বিনিময়ে এই অবস্থা থেকে জাতি উদ্ধার পাক।

আসুন, এক মাস সিয়াম সাধনার পর পবিত্র এই ঈদের দিনে পরম করুণাময়ের কাছে সবাই এক কন্ঠে দুই হাত তুলে ক্ষমা প্রার্থনা করি । দোয়া করি, আল্লাহ যেন আমাদের নেতৃত্বের হারানো হুঁশটি ফিরিয়ে দেন।

সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।