Site icon The Bangladesh Chronicle

The question of Islam has entered politics

রাজনীতিতে ইসলাম প্রশ্নের আবির্ভাব

ফরহাদ মজহার

টান টান উত্তেজনা ও আতঙ্কের সাময়িক অবসান ঘটিয়ে হেফাজতে ইসলামের ৬ এপ্রিলের সমাবেশ শেষ হয়েছে। এই সমাবেশের কয়েকটি শিণীয় দিক রয়েছে।

১. এই নষ্ট শহরে যেসব জালিম শ্রেণি এই দেশের জনগণকে শোষণ-লুণ্ঠন করে টিকে থাকে এবং যারা মনে করে এই দেশ শুধু তাদের, গণমানুষের পদভারে শহর প্রকম্পিত করে হেফাজতের জমায়েত বুঝিয়ে দিয়েছে তারা ছাড়াও বাংলাদেশে আরো কোটি কোটি মানুষ আছে। যে যুদ্ধ এই জালিম শ্রেণী শুরু করেছে, তার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে এর খানিক আভাস মাত্র তারা দিয়ে গেল।

২. হেফাজতে ইসলাম শুধু ঢাকায় সমাবেশ করতে চায়নি, তারা তাদের কর্মসূচিকে বলেছে ‘লংমার্চ’। মাও জে দংয়ের নেতৃত্বে চীনের নিপীড়িত লড়াকু শ্রমিক-কৃষকদের নিয়ে গঠিত গণসৈনিকদের যুদ্ধকৌশল হিশাবে এই দীর্ঘ পদযাত্রার সঙ্গে তাদের কর্মসূচির নামকরণে মিল রাখার মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলাম বুঝিয়ে দিয়েছে, মজলুমের যেকোনো লড়াইয়ের ধরণের সঙ্গে তাদের লড়াইয়ের ধরণের মিল থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তা ছাড়া তারা দাবি করেছেন, দীর্ঘ পদযাত্রার মধ্য দিয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করবার এই কৌশল কমিউনিস্টদের রণকৌশল বলা ঐতিহাসিক ভুল। কারণ ইসলামের ইতিহাসে এই ধরণের পদযাত্রার প্রচুর উদাহরণ রয়েছে।

৩. এই সমাবেশ পণ্ড করবার জন্য সরকার সব রকমের চেষ্টা করেছে। শেষ চেষ্টা ছিল সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং আরো ২৭টি সংগঠনকে মাঠে নামানো। হেফাজতে ইসলাম ‘প্রতিরোধ’ করবার জন্য হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচিও দেওয়া হয়েছে। ট্রেন, বাস, ফেরি, নৌকা, লঞ্চসহ সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার পরও লাখ লাখ মানুষের বৃহত্তম যে সমাবেশ ঢাকায় হয়েছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। ঢাকায় যারা আসতে পারেন নি, তারা সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করেছেন। যদি তাদের হিশাব নেওয়া হয় তাহলে দেখা যায় বড়োজোর এক-দশমাংশ মানুষ ঢাকায় পৌঁছতে পেরেছেন। যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে মাত্র ১০ ভাগের ১ ভাগ মানুষ সমাবেশে আসতে পেরেছেন। তাতেও যে লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় এসেছে তা রীতিমতো বিস্ময়কর।

৪. সমাবেশ আগাগোড়াই ছিল শান্তিপূর্ণ। হেফাজতে নেতৃবৃন্দ পুলিশ ও প্রশাসনকে যে কথা দিয়েছেন, সেই ওয়াদামাফিক সময়মতো তাদের সমাবেশ শেষ করেছেন। এতে স্পষ্ট বোঝা গেল কর্মীদের ওপর নেতৃবৃন্দের নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট শক্তিশালী। একটি শান্তিপূর্ণ লড়াইয়ের যাত্রা শুরু হলো।

এই সমাবেশের দুই-একটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্যের ইঙ্গিত দিয়ে শেষ করব।

এক. এ যাবৎকাল বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে থাকলেও এই প্রথমবার ইসলাম নিজের প্রাধান্য নিয়ে হাজির হোল। শেখ হাসিনা ইসলামি রাজনীতিকে নির্মূল করতে গিয়ে তাকে আরো প্রতিষ্ঠিত করে গেলেন। ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদের যে আধিপত্য গত ৪২ বছর আমরা বাংলাদেশে দেখেছি, তার দুর্বলতা ও য়ের দিকটাও এতে প্রকট হয়ে উঠল।

দুই. ইসলাম প্রশ্ন আগামি দিনে বাংলাদেশে রাজনীতির নির্ধারক হয়ে উঠবে। রাজনীতি যেভাবে গঠিত হতে থাকবে তার মধ্যে ইসলাম প্রশ্নের মীমাংসা গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হয়ে নানা ভাবে হাজির হতে থাকবে। কে কিভাবে করবেন তার ওপর তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। ইসলাম প্রশ্নের সঠিক মোকাবেলা না হলে রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রবণতা বাড়বে। অন্য দিকে এর সঠিক মীমাংসা বাংলাদেশের রাজনীতির বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটাতে পারে। অর্থাৎ বাংলাদেশের বৈপ্লবিক রূপান্তরের প্রশ্নও ইসলাম প্রশ্নের মীমাংসার সঙ্গে আরো সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়ল।

তিন. এই সমাবেশের তাৎপর্য হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির মধ্যে নয়, বরং সমাবেশে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে তাদের সাংগঠনিক মতা প্রদর্শন। হেফাজতে ইসলাম সমাবেশে তাদের ১৩ দফা দাবি পেশ করেছে। আমরা চাই বা না চাই, ভবিষ্যতে এই দাবির পিেবপে তর্কবিতর্ক ও জনমতই রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক হয়ে উঠবে।

Source: News From Bangladesh

Exit mobile version