Record setting torture on Bangladeshi journalists – Bengali

গণমাধ্যম ও সাংবাদিক দলন-পীড়নে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার। গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত এক মাসে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে ও হামলা চালিয়ে অন্তত ৪৮ সাংবাদিককে আহত করেছে সরকারের পেটোয়া বাহিনী পুলিশ ও দলীয় ক্যাডাররা। এ সময় ক্যামেরা ভাংচুর ও হামলার শিকার হয়েছেন অনেক সাংবাদিক।
আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রায় তিন মাস তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রয়েছেন। তথাকথিত শাহবাগ আন্দোলন থেকে প্রকাশ্যে তাকে খতম করা, গ্রেফতার ও পত্রিকা বন্ধের হুমকি দেয়া হয়েছে। জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে নয়া দিগন্ত পত্রিকার কার্যালয় ও প্রেসে। দেশের বিভিন্ন স্থানে দিগন্ত টিভির সম্প্রচার বন্ধ, আমার দেশসহ কয়েকটি পত্রিকার কপিতে অগ্নিসংযোগ, বিক্রিতে বাধা ও পত্রিকা লুট করেছে সরকারদলীয় ক্যাডাররা। বর্তমানেও এটি অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রামে আমার দেশসহ কয়েকটি গণমাধ্যম অফিসে ভাংচুর এবং ল্যাপটপ-কম্পিউটার লুট করেছে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। এছাড়া সত্য লেখার কারণে শাহবাগ ও ১৪ দলের সব অনুষ্ঠানে কয়েকটি গণমাধ্যমের নামোল্লেখ করে তাদের সংবাদ সংগ্রহের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে—যা সংবাদপত্র জগতে নজিরবিহীন ঘটনা।
তথাকথিত শাহবাগ আন্দোলনের শুরু থেকে সবচেয়ে বেশি খড়্গ নেমে এসেছে আলোচিত পত্রিকা আমার দেশ-এর ওপর। সত্য সংবাদ প্রকাশের কারণে গত এক মাসে আমার দেশ-এর সার্কুলেশন বেড়ে যখন আড়াই লাখ ছুঁয়েছে, অনলাইন পাঠকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০ লাখে, তখন পাঠকরা যাতে অনলাইনে আমার দেশ পড়তে না পারে, সেজন্য ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এজন্য অনলাইনে চার দিন ধরে সারাদেশের পাঠক তাদের জনপ্রিয় আমার দেশ পত্রিকা পড়তে পারছেন না। একই সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীদের গ্রেফতার, রিমান্ড ও নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। চলতি সপ্তাহেও সংগ্রাম ও অনলাইন পত্রিকা নতুনবার্তার কয়েক সাংবাদিককে গ্রেফতার, রিমান্ড ও ডিবি অফিসে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সোনার বাংলা ব্লগ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সব কার্যক্রম এবং নির্বাচিত কমিটি স্থগিত করে দেয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দেশের সব প্রান্তে নাজেহাল হচ্ছেন সাংবাদিকরা। সংবাদকর্মীদের ওপর নির্যাতন এখন পুলিশ ও দলীয় ক্যাডারদের নিত্যকর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশসহ আন্দোলনকারী ও আন্দোলনবিরোধীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। সাংবাদিকদের প্রতি পুলিশের আগ্রাসী আচরণ দিন দিন সহিংস হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে সংবাদকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি, তাদের হাতে লাঞ্ছিত বা রাজনৈতিক দলের কর্মীদের হামলায় কোথাও নিরাপদে নেই সংবাদকর্মীরা। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের গুলি ও হামলার শিকার হচ্ছেন তারা।
দেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিক দলন-পীড়নের এমন অবস্থায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশিষ্ট সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার কথা মুখে বললেও তারা যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই গণমাধ্যম ও সাংবাদকিদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যায়। গত চার বছরে সারাদেশে ১৯ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। অসংখ্য মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর আগে ১৯৭২-৭৫ সালেও পত্রিকা বন্ধ করা হয়েছিল। বর্তমানেও মিডিয়া বন্ধ করা হচ্ছে ও আক্রান্ত হচ্ছেন সাংবাদিকরা। এ অবস্থায় সব ভেদাভেদ ভুলে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে গণমাধ্যমবিরোধী এ ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
গুলি ও হামলায় আহত ৪৮ সাংবাদিক : গত ২২ ফেব্রুয়ারি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে রক্ষা পাননি সাংবাদিকরাও। রাজধানীতে পুলিশের গুলি, রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জে আহত হন অন্ততপক্ষে ২৫ জন সংবাদকর্মী। পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন আমার দেশ-এর চিফ ফটোসাংবাদিক মীর আহাম্মদ মীরু। তার পায়ে সাতটি গুলি লাগে। পরে অস্ত্রোপচার করে তার গুলি বের করেন চিকিত্সকরা।
গুলিবিদ্ধ ও আহত অন্য সাংবাদিকরা হলেন আমিনুল হক ভুইয়া, এনটিভির রিপোর্টার ফাহাদ মাহামুদ, মাছরাঙা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার আবদুল্লাহ তুহিন, গাজী টিভির রিপোর্টার মাসুদুর রহমান, আমার দেশ-এর কোর্ট রিপোর্টার সরোজ মেহেদী, ৭১ টিভির রিপোর্টার আরিফুজ্জামান পিয়াস, ইনডিপেন্ডেন্ট টিভির নুরুল ইসলাম, জনকণ্ঠের ফটোসাংবাদিক মামুন, সংবাদের রিপোর্টার সাইফ বাবলু, নিউএজের রিপোর্টার নিতাই রঞ্জন, জিটিভির রিপোর্টার মাসুদুর রহমান, ইনডিপেন্ডেন্ট টিভির ক্যামেরাম্যান নুরুল ইসলাম, এটিএন বাংলার ক্যামেরাম্যান জাহিদুজ্জামান, বাংলাভিশনের পলাশ ও বিটিভির এক ক্যামেরাম্যান। এদের বেশিরভাগইই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া ইটিভির এক ক্যামেরাম্যানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে হলের ভেতরে নিয়ে মারধর ও ক্যামেরা ভাংচুর করে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। বায়তুল মোকাররম এলাকায় আন্দোলনরত বিক্ষুব্ধ মুসল্লিদের হামলায়ও আহত হন কয়েকজন সাংবাদিক। বায়তুল মোকাররম ছাড়া সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে মুসল্লিদের হামলায় বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী আহত হন। বায়তুল মোকাররম এলাকায় বেপরোয়া পুলিশের নির্বিচার গুলিতে অনেক সাংবাদিক আত্মরক্ষার্থে রাস্তায় শুয়ে পড়েও রেহাই পাননি। একই দিন রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয় লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালালে আহত হন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির আপ্যায়ন সম্পাদক ও আমাদের অর্থনীতির সিনিয়র রিপোর্টার আমিনুল হক ভূইয়া। রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন স্থানে সংবাদকর্মীরা সেদিন হামলার শিকার হন। চট্টগ্রামে হামলায় আহত ৮ জনের কয়েকজন হলেন যুগান্তরের ফটোসাংবাদিক রাজেশ চক্রবর্তী, ইনকিলাবের কুতুব উদ্দিন, মাছরাঙার ক্যামেরাম্যান রবিউল টিপু, বণিকবার্তার প্রতিনিধি ওমর ফারুক। সিলেটে আহত ৭ জন হলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর নাজমুল কবির, সংলাপ-এর আবদুল মাজিদ, চ্যানেল ২৪-এর শফি আহমদ, উত্তর-পূর্ব এর নুরুল ইসলাম, সময় সংবাদের সিলেট ব্যুরো প্রধান একরামুল করীম এবং দৈনিক সংবাদের দুই ফটোসাংবাদিক আবু বক্কর ও ইদ্রিস আলী আহত হন।
অপরদিকে এদিন চট্টগ্রামে আমার দেশ ও দিগন্ত টিভির অফিসে ব্যাপক হামলা ও লুটপাট চালায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। আমার দেশ-এর চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিসে ভাংচুর করে সেখান থেকে হামলাকারীরা কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ মালামাল লুট করে।
গত ৮ মার্চ রাজধানীর মিরপুর এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ছাত্র ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় চ্যানেল আই’র স্টাফ রিপোর্টার শাকিল আদনান ও ভিডিও ক্রু মো. সুলতান আহত হন। একই দিন সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে শাহবাগিদের হাতে লাঞ্ছিত হন অনলাইন নতুন বার্তা ডটকমের দুই রিপোর্টার। গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের রোষানলে পড়েন ৫ সাংবাদিক। এরা হলেন, দৈনিক সকালের খবরের ফটোসাংবাদিক আজহার উদ্দিন, রাবি প্রতিনিধি সুজন নাজির, জনকণ্ঠের ফটোসাংবাদিক সেলিম জাহাঙ্গীর, নিউ এজ’র নাজিম মৃধা ও ডেইলি সান-এর সাঈদ শুভ। লাঞ্ছিত করার পর নাসিম আহম্মেদ সেতুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ওই ৫ সাংবাদিককে পিস্তল দেখিয়ে গুলি করার হুমকি দেয়। গত মাসে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের সময় দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হন দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী ড. আনিসুজ্জামান। এ সময় তাদের বহনকারী গাড়ির জানালার কাচ ভেঙে যায়।
১০ সাংবাদিক আটক, তিনজনকে রিমান্ডে নির্যাতন : গত ৪ ও ৫ মার্চ দৈনিক সংগ্রামের সহকারী বার্তা সম্পাদকসহ ৭ জনকে আটকের পর নির্যাতন চালায় পুলিশ। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এরআগেও কয়েকবার সংগ্রাম অফিসে তল্লাশি চালায় পুলিশ। গত ৪ মার্চ রাত ১২টার দিকে রমনা থানার এসআই হারুন ও এসআই জুবায়েরের নেতৃত্বে সাদা পোশাকধারী একদল পুলিশ সংগ্রাম অফিসে হানা দেয়। তারা গেট খোলার জন্য দারোয়ানকে পিস্তল ধরে গুলি করার হুমকি দেয়। এতে ভীত হয়ে তারা গেট খুলে দিলে নিচে কর্মরত ডেচপাস ইনচার্জ আবদুল হামিদকে আটক করে সাদা পোশাকের পুলিশ। পরে দোতলায় গিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় পত্রিকাটির দ্বিতীয় সংস্করণের জন্য কর্মরত সহকারী সম্পাদক সা’দত হুসাইন, খায়রুল ইসলাম, কম্পিউটার ডিজাইনার পলাশ, টেলিফোন অপারেটর আবু বকরসহ ৭ জনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাদা কাগজে মুচলেকা নিয়ে ওই সাতজনকে ছেড়ে দেয়া হয়। ফলে ওইদিন সংগ্রামের দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয়নি। এ ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ। গত ৭ মার্চ দুপুরে দৈনিক সংগ্রামের প্রধান ফটোসাংবাদিক আবদুর রাজ্জাককে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর এলাকার একটি হাউজিং কোম্পানির অফিস থেকে বিনা কারণে গ্রেফতার করে মিরপুর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরের দিন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। ঢাকার সিএমএম আদালত দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ডে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। এ ঘটনার নিন্দা জানান বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন। গত ৮ মার্চ শাহবাগের কথিত প্রজন্ম মঞ্চের সংবাদ কাভার করতে গেলে নতুন বার্তা ডটকমের স্টাফ রিপোর্টার ইমদাদুল হক ও কাজী মুস্তাফিজকে আটক করে ডিবি পুলিশ। কি অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে সে সম্পর্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। পরে ডিবি অফিসে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একজনকে ছেড়ে দেয়া হলেও আরেকজন বর্তমানে ডিবি কার্যালয়েই রয়েছেন।
নয়া দিগন্ত অফিস প্রেসে আগুন, আমার দেশ-এ হামলার হুমকি : গত ১২ ফেব্রুয়ারি ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর নগ্ন হামলার শিকার হয় দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকা। রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত পত্রিকাটির প্রধান কার্যালয় ও নিচে গাড়িতে এবং জুরাইনে পত্রিকাটির প্রেসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ওইদিন দুপুরে ১৫-১৬ জনের একদল দুর্বৃত্ত জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে পত্রিকা অফিসের সামনে নির্বাহী সম্পাদকের গাড়িতে আগুন দেয়। এতে ‘নোয়া’ ব্র্যান্ডের একটি জিপ ভস্মীভূত হয়। আগুনে পুড়ে যায় নিচ তলার প্রেসে রাখা বিপুল পরিমাণ কাগজ। ইটপাটকেল ছোড়া হয় চারতলার বার্তা কক্ষেও। এর কিছুক্ষণ পর জুরাইনে পত্রিকার প্রধান প্রেসেও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। আগুনে গাড়ি ও ছাপানোর জন্য রাখা কাগজের রোল ভস্মীভূত হয়। পরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ পত্রিকা অফিসে ঢুকে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। পুলিশের হাতে সাংবাদিক কর্মচারীরাও নাজেহাল হন। প্রেস কর্মীকে আটক করে নিয়ে যায় পুুলিশ। এরআগে তথাকথিত শাহবাগ আন্দোলন থেকে আমার দেশ, নয়াদিগন্ত, সংগ্রাম ও দিনকাল পত্রিকা ও দিগন্ত টিভি বর্জন ও হামলার ফ্যাসিবাদী উসকানি দেয়ার তিন দিনের মাথায় পত্রিকা অফিসে ওই হামলা ও আগুনের ঘটনা ঘটে।
শাহবাগের ওই হুঙ্কারের পর সরকারের বিভিন্ন মহল থেকেও ভিন্নমতের কয়েকটি গণমাধ্যম বন্ধের ও সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের গ্রেফতারের হুমকি দেয়া হয়। তারপর ধারাবাহিকভাবে নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, বগুড়া, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রংপুর, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জ, লালমনিরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আমার দেশ সহ কয়েকটি পত্রিকার কপিতে অগ্নিসংযোগ ও দিগন্ত টিভির সম্প্রচার বন্ধ ও সংবাদপত্রের গাড়ি থেকে পত্রিকার বান্ডিল নামিয়ে পত্রিকা লুট করে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। অবশ্য এর প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে হকাররা অন্যসব পত্রিকার বান্ডিলে আগুন দিয়ে ও রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায়।
শাহবাগ ও ১৪ দলের অনুষ্ঠানে ভিন্নমতের মিডিয়া নিষিদ্ধ, রণহুঙ্কার : গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশের জনপ্রিয় পত্রিকা আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম ও দিনকাল পত্রিকা, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভিসহ কয়েকটি ভিন্নমতের মিডিয়াকে দলীয় সব অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। ১৪ দলীয় জোটের সব কর্মসূচিতে ভিন্নমতের এসব গণমাধ্যমের প্রতি বিষোদ্গার, পত্রিকা বন্ধ ও আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের হুঙ্কার দেয়া হয়। ওইদিন ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর অফিসে অনুষ্ঠিত ক্ষমতাসীন ১৪ দলের বৈঠক কভার করতে আসা এ ছয় মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিষেধাজ্ঞার খবর জানিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এছাড়া মিডিয়া ৬টির নাম উল্লেখ করে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি নোটিশ ধানমন্ডির অফিসে প্রবেশের প্রধান ফটকের সামনে টানিয়ে দেয়া হয়। এর আগে তথাকথিত শাহবাগ আন্দোলন থেকেও ভিন্নমতের কয়েকটি মিডিয়াকে বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান কভারের জন্য উল্লেখিত মিডিয়াগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল।
তিন মাস ধরে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ মাহমুদুর রহমান : বর্তমান সরকার গণমাধ্যম ও সাংবাদিক নিপীড়নের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আমার দেশ-এর সত্যনিষ্ঠ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম ও লন্ডন প্রবাসী ড. আহমদ জিয়াউদ্দীনের বিচারাধীন বিষয় নিয়ে স্কাইপি সংলাপের সত্য সংবাদ আমার দেশ-এ প্রকাশের জেরে সরকারের রোষানলে পড়ে গত তিন মাস ধরে তিনি অফিসে অবরুদ্ধ রয়েছেন। ওই সত্য সংবাদ প্রকাশের পর সরকার তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে। তিনি জামিনের জন্য আদালতের আশ্রয় নিলে বিচারকরা তাকে জামিন দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। ওই ঘটনার পর ১৩ ডিসেম্বর থেকে অফিসে অবরুদ্ধ রয়েছেন মাহমুদুর রহমান। নিরাপত্তার অভাবে এক মুহূর্তের জন্যও তিনি অফিস থেকে বের হতে পারছেন না। এছাড়া ৯ ফেব্রুয়ারি ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর থেকে তথাকথিত শাহবাগ আন্দোলনের আহ্বায়ক, ছাত্রলীগের সাবেক ও স্বাচিপ নেতা ডা. ইমরান এইচ সরকার, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার খুনি বাপ্পাদিত্য বসু ও ছাত্রলীগের নেতারা প্রকাশ্যে আমার দেশ বন্ধ, সম্পাদককে গ্রেফতার ও তাকে খতম করে দেয়ার হুমকি দেয়। তাছাড়া শাহবাগ আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমার দেশ বন্ধ ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়া হয়। বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারাও একই ধরনের হুমকি দেয় আমার দেশ ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে।
অনলাইনে আমার দেশ পড়তে বাধা : গত চার বছরে অনেক চেষ্টা ও হুমকি-ধমকি দিয়েও আমার দেশ বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর পত্রিকাটি নিয়ন্ত্রণের ডিজিটাল পদ্ধতি গ্রহণ করেছে সরকার। গত একমাসে পত্রিকার সার্কুলেশন বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে আড়াই লাখে এবং অনলাইন পাঠকের সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ। অনলাইনে যেন পাঠকরা আমার দেশ পড়তে না পারে সেজন্য সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা সরবরাহকারী সংস্থা বিটিসিএল, কিউবি, গ্রামীণফোন, সিটিসেল, রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংক, বাংলালায়ন, ওলোসহ বিভিন্ন আইএসপি ও ওয়াইফাই’র মাধ্যমে অনলাইনে আমার দেশ পড়তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এসব ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করে পাঠকরা আমার দেশ পড়তে পারছেন না। বিপুলসংখ্যক অনলাইন পাঠক তাদের জনপ্রিয় পত্রিকা পড়তে না পেরে আমার দেশ অফিস ও স্ব স্ব ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে ফোন করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেছেন, তারা এ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেননি। লিখিতভাবে কোনো নির্দেশনা না পাঠালেও সরকারের মৌখিক নির্দেশে এ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে বিটিআরসি ও ইন্টারনেট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরকে দেখিয়েছে। একজন অফিসার দেখিয়ে দিয়েছেন অন্য অফিসারকে। এরপরও থেমে নেই আমার দেশ পরিবার। এজন্য অবশ্য পাঠকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তাদের প্রতি মাহমুদুর রহমান দুটি পরামর্শ রেখে বলেন, আপনারা ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংস্থগুলোকে চাপ সৃষ্টি করতে পারেন, আমরা আমার দেশ পত্রিকা পড়তে চাই। আর তা নাহলে তাদের সেবা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। অন্যথায় পত্রিকার হার্ড কপি কিনে পড়তে পারেন। এছাড়া তিনি গণমাধ্যমের নতুন-পুরনো কর্মী ও মালিকপক্ষের প্রতি গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সরকারের অপচেষ্টা ও হুমকির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তাছাড়া চার বছরে আমার দেশ-এ সরকারি কোনো বিজ্ঞাপন দেয়া হয়নি। ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেও আমার দেশ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিতে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শাবি প্রেস ক্লাবের কার্যক্রম ও কমিটি স্থগিত : বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণের জন্য সাংবাদিকদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রেস ক্লাব ও সমিতির কার্যালয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ শুরু করে। ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠান প্রেস ক্লাবে অবৈধ হস্তক্ষেপ করে সব কার্যক্রম ও কমিটি স্থগিত করে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত প্রক্টর ড. হেমাদ্রী শেখর ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নাঈম হাসান। খোড়া অজুহাত হিসেবে অবশ্য প্রক্টর বলেন, প্রেস ক্লাবের কোনো নথিপত্র প্রক্টর অফিসে নেই। এজন্য তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। প্রক্টরের নগ্ন হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টররা। তারা পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, প্রেস ক্লাবের সব নথিপত্র প্রক্টর অফিসে ছিল। হয়তো বা খারাপ উদ্দেশ্যে এবং ভিন্নমতের সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণের জন্য সেগুলো নষ্ট করা হয়েছে। প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক আবু তাহের টোটন বলেন, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নগ্নভাবে নিয়ন্ত্রণ ও সাংবাদিকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশেই প্রেস ক্লাবে তালা, কার্যক্রম ও কমিটি স্থগিত করেছে প্রশাসন। অবশ্য পরে তালা খুলে দেয়া হলেও প্রেস ক্লাবের কার্যক্রম ও কমিটি স্থগিত রয়েছে। এরআগে প্রায় একই অজুহাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব সিলগালা করে দেয় প্রশাসন। যেটি বর্তমানেও অবরুদ্ধ রয়েছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৫ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ : বর্তমান সরকারের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ ও দলীয় নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে এক বছরেই বাংলাদেশ ১৫ ধাপ পিছিয়েছে। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ১৭৯টি দেশের মধ্যে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৪তম। এর আগের বছর এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২৯তম। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার প্যারিসভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স-২০১৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত জানুয়ারি মাসে সংগঠনটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গত চার বছরে ১৯ সাংবাদিক খুন, দেশের বরেণ্য সম্পাদকদের গ্রেফতার ও নির্যাতনসহ বহুবিধ পন্থায় গণমাধ্যম দলনে আওয়ামী লীগ সরকার যে অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে, সংগঠনটির প্রতিবেদন ওই চিত্রই প্রতিফলিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি সহিংসতা, সাংবাদিক নির্যাতনকারীদের কোনো শাস্তি না হওয়া, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকারীদের গ্রেফতার না করা এবং তদন্তে স্থবিরতা বাংলাদেশের অবস্থান পেছানোর কারণ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।
সোনার বাংলাদেশ ব্লগ বন্ধ : গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সোনার বাংলাদেশ ব্লগ বন্ধ করে দেয় সরকার। ওইদিন দুপুর থেকেই ব্লগটিতে আর প্রবেশ করতে পারছেন না পাঠক ও লেখকরা। ব্লগটিতে প্রবেশ করলে দেখা যায় www.sonarbangladesh.com/hack/hack/hack/hack/hack/hack/। মূলত তথাকথিত শাহবাগ আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী নাস্তিক ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন ওরফে থাবা বাবা নিহতের পর ওই ব্লগটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় আটক করা হয় সোনার বাংলাদেশ ব্লগের বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আমিনুল ইসলাম মোহাইমেনকে। অ্যালেক্সার বাংলাদেশের ওয়েবসাইট র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশে সোনার বাংলাদেশ ব্লগের অবস্থান ছিল ৫২তম। বন্ধ করা ওই ব্লগটি সব মতের পাঠক ও লেখকদের মিলনমেলা হিসেবেও পরিচিত ছিল। তারপরও অযৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রিয় ওই ব্লগটি সরকার বন্ধ করে দেয়।
বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান মনিটরে সরকার : নির্বাচনী ইশতিহার থেকে শুরু করে ক্ষমতা গ্রহণের পর বিভিন্ন সময় সরকারের এমপি-মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছিলেন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের গণমাধ্যমগুলোকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। গণমাধ্যমে কোনো হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। অথচ তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বলেন, বেসরকারি টেলিভিশনে প্রকাশিত অনুষ্ঠান মনিটরিং করা হচ্ছে। বর্তমানে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সংবাদ ও টকশোসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান বিটিভির মাধ্যমে মনিটরিং করা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে মনিটরিং করার জন্য বিটিভিতে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি মনিটরিং সেল কাজ করছে। স্থায়ীভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ মনিটরিং সেল গঠনের প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া গত চার বছরে সারাদেশে ১৯ সাংবাদিক খুন, সহস্রাধিক সাংবাদিককে নির্যাতন, জাতীয় ও আঞ্চলিক প্রায় ২০০ পত্রিকা বন্ধ, সাংবাদিক গ্রেফতার, রিমান্ড ও নির্যাতন চালানো হলেও এরআগে তথ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, গত চার বছরে কোনো সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়নি।
গণমাধ্যমে হামলা ও সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে—সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতারা : গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর দলন-পীড়ন ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের বিশিষ্ট সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, আওযামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই সাংবাদিক নির্যাতন ও গণমাধ্যমের ওপর হামলার ঘটনা বাড়ে। গতকাল আমার দেশ-কে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় নিউজ টুডে’র সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত চার বছর ধরে গণমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি ও গণমাধ্যমকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। গণমাধ্যম দলনে আওয়ামী লীগের কালো অতীত রয়েছে। এরআগে ১৯৭৫ সালে চারটি রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে বন্ধ না করলেও মিডিয়া ও মালিক পক্ষকে দলীয় চাপে রাখা হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এ থেকে বিরত না থাকলে সাংবাদিকদের কঠোর হাতে প্রতিহত ও গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে শুধু সাংবাদিক দলন নয়, অনেক মিডিয়া বন্ধ, সম্পাদককে গ্রেফতার, পত্রিকার কার্যালয় ও কপিতে অগ্নিসংযোগসহ মিডিয়ার ওপর খড়গ নেমে এসেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সাংবাদিক নির্যাতনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। শাহবাগ থেকে পত্রিকার বন্ধ ও মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের হুমকি, তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা এসব কিছুই গণতন্ত্রকে বিলীন করার ষড়যন্ত্র। গণমাধ্যমে আঘাত করা বর্তমান সরকারের প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ ও দলীয় ক্যাডার দিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, গুলি ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় আমরা শঙ্কিত। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা না থাকলে গণতন্ত্র থাকবে না। এজন্য সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে গণমাধ্যম বিরোধী এ সরকারের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য প্রত্যেক মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

Source: Amar Desh