We need democracy for cricket while cricket is needed for democracy

Minar Rashid

 ক্রিকেটের জন্যে দরকার গণতন্ত্র আবার গণতন্ত্রের জন্যে দরকার ক্রিকেট

আমার এক সুহৃদ আমেরিকা থেকে একটি ব্যক্তিগত মেইল পাঠিয়েছেন। জাতির জীবনে ক্রিকেটের এই স্পন্দন বা ছোঁয়াটিকে একটু ভিন্ন অাঙ্গিকে তিনি তুলে ধরেছেন । তাঁর সেই ভাবনাটি পাঠকদের সম্মুখে তুলে না ধরে থাকতে পারলাম না। সেই সুহৃদের কথার সারমর্ম হলো, ডক্টর ইউনূসকে পৃথিবীর যত মানুষ চিনে কিংবা জানে তাঁর শতকরা বিশ ভাগও তাঁর দেশের জাতির পিতাকে চিনে না বা জানে না। জাতির বুবুজান, জাতির ভাইজান বা চাচাজান বা মামাজানদের তো কোন কথাই নেই।

এই আনকমফর্টেবল ট্রুথটিই মাইক্রোলোনের প্রবর্তক বেচারা ইউনূসের জন্যে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে । এটা দেখে তিনি আমাদের দেশের ক্রিকেটারদের নিয়েও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

সময় মতো কয়েকটি উইকেট ফেলে দেয়াতে অান্তর্জাতিক পরিসরে শুধু রুবেলই নায়ক হচ্ছেন না, তার ছ্যাকা খাওয়া হ্যাপিও অান্তর্জাতিক নায়িকা হওয়ার পথে অগ্রসর হয়েছেন । এরকম আরো কয়েকটি খেলা খেলে বিশ্ববাসীকে হ্যাপি করতে পারলে এই রুবেল-হ্যাপিকে নিয়ে হলিউডেও সিনেমা তৈরি হতে পারে। তখন শুধু রুবেলকে নয়, বেচারী হ্যাপিকেও ডক্টর ইউনূসের ভাগ্য বরন করতে হতে পারে।

এই সুহৃদ যে ঈঙ্গিতটি দিয়েছেন তা অত্যন্ত স্পষ্ট। আমাদের ক্রিকেটের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্যে যেমন গণতন্ত্র দরকার তেমনি গণতন্ত্রের বিকাশের জন্যে দরকার এই ক্রিকেটের। হিরক রাজা বা রাণীর অধীনে ক্রিকেট বেশিদূর যেতে পারবে না।

ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। মজার কথা হলো, ক্রিকেট গণতান্ত্রিক বিশ্বের খেলা। কম্যুনিষ্ট রাশিয়া বা চায়নাতে ক্রিকেট খেলা একেবারেই প্রসার লাভ করতে পারে নি। পূর্ব ইউরোপের কোন দেশ কখনই ক্রিকেট খেলে না। একদা ব্রিটিশ কলোনী হলেও ক্রিকেটে মনোযোগ নেই মিয়ানমারেরও । যে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে জনগণ তার নেতার উদ্দেশ্যে হর্ষধ্বনি দেয় সেই উত্তর কোরিয়ায় ক্রিকেট কোনদিন প্রবেশ করতে পারবে না। কারন জনগণের ছক্কা পেটানোকে ডিক্টেটররা দারুন ভয় পায়। এই কারনেই মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্র অধ্যুষিত অঞ্চলটিতেও ক্রিকেট খেলা চালু হতে পারে নি।

খেলার সাথে রাজনীতির সম্পর্ক না থাকলেও ক্রিকেট আর গণতন্ত্রের সাথে একটা নিকট সম্পর্ক অনুভব করা যায়।
ইংল্যান্ড,অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি দেশে শক্তি সালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর ইন্ডিয়া হলো বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ । শ্রীলংকার গণতন্ত্রও পরিপক্কতার পানে অগ্রসর হচ্ছে। মাঝখানে হোচট খেলেও পাকিস্তান এখন নব উদ্যমে গণতন্ত্রের দিকে ছুটে চলেছে। জিম্বাবুইয়ের জনগণ সেখানকার স্বৈর শাসক মুগাবের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রামটি অব্যাহত রেখেছে।

কাজেই এই সিদ্ধান্তে সহজেই উপনীত হওয়া সম্ভব যে, যে সব দেশে ক্রিকেট অনুপ্রবেশ করবে সেখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র না এসে থাকতে পারে না।

বাংলাদেশে যারা এক দলীয় শাসনের স্বপ্ন দেখছেন তারা সম্ভবত কোথাও ভুল করছেন।
আমার মনে হচ্ছে আমাদের দেশে ক্রিকেট আর গণতন্ত্র হাত ধরাধরি করে অগ্রসর হবে। একটি না থাকলে অন্যটির অগ্রযাত্রা থেমে যাবে। এই দেশের জাগ্রত ও ক্রিকেটপ্রিয় জনগণ তা কখনই হতে দিবে না। সুযোগ সুবিধা মতো ডিক্টেটরকে ছক্কার মত পিটিয়ে মাঠের বাইরে বের করে দিবে। নাজুক এই মুহুর্তে ক্রিকেট আমাদের আত্মবিশ্বাসটি ফিরিয়ে দিয়েছে।

আজ ক্রিকেট খেলায় যেমন করে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছি। একদিন গণতন্ত্রের সূচকেও এদেরকে হারাতে পারব । আমার মনে হচ্ছে যে দিন আমরা ক্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হব, সেদিন গণতন্ত্রের সূচকেও প্রথম সারিতে থাকব।

ক্রিকেট খেলায় যেভাবে আশাতীত জয়টি এসেছে গণতন্ত্রের সংগ্রামে আমাদের কাঙ্খিত বিজয়টি তেমন করেই আসবে, ইনশাআল্লাহ।