Myth and lies around national mourning month

Minar Rashid

মিথ্ আর মিথ্যায় ঢাকা শোকাবহ আগষ্ট

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের শোকাবহ ঘটনা থেকে আমরা চল্লিশ বছর পার করে এসেছি। তারপরেও এই ঘটনাটি নিয়ে ঠান্ডা মস্তিস্কে গবেষণা করার মত পরিবেশ এদেশে এখনও সৃষ্টি হয় নি।

দিন দিন তা যেন আরো জটিল ও স্পর্শকাতর হয়ে পড়ছে। শরীর বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান সহ সকল বিজ্ঞানকে আমরা টুরি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছি। একান্ত ব্যক্তিগত শোক বুকে ধারণ করার পরেও শেখ হাছিনা -শেখ রেহানার গলা দিয়ে চল্লিশ দিন পরেই ভাত ঢুকেছে কিন্তু ভক্তের গলা দিয়ে চল্লিশ বছর পরেও তা ঢুকছে না। সেই ভক্তকে চল্লিশ বছর পরে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখে ভাতের লোকমা তুলে দিয়েছেন সরকারের উচ্চ পদস্থ একজন কর্মকর্তা। এই ধরনের দৃশ্য পৃথিবীতে সম্ভবত এই একটিই সৃষ্টি হয়েছে।

আমেরিকার মাটিতে এযাবত কালের সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাশী হামলার পরপরই এই বিষয়ে স্বাধীনভাবে গবেষণা করা সম্ভব হয়েছে। এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে তাদের এক ভয়ংকর প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবাকে অভিযুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। স্বাধীন গবেষকগণ তাদের গবেষণার স্বার্থে সরকার ও জন মতের বিপক্ষেও অবস্থান নিতে সক্ষম হয়েছেন।

আমাদের দেশে অর্ধ শতাধিক বছর পার হলেও সেসবের অনেক কিছু নিয়ে স্বাধীনভাবে গবেষণা করা সম্ভব হবে না। । ফলে যার যেদিকে ইচ্ছা সেদিকেই ঘটনা টেনে নিতে সক্ষম হচ্ছে । কোন সাপোর্টিং ডকুমেন্ট বা তথ্য উপাত্ত্যের প্রয়োজন পড়ছে না। যার যা মনে আসছে তাই বলে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তাঁরই মন্ত্রী পরিষদের প্রায় সকল সদস্য মোশতাকের মন্ত্রী সভায় যোগ দিয়েছিলেন। সেনা প্রধান তার কমান্ডার ইন চীফকে পেছনের রাস্তা দিয়ে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। রক্ষী বাহিনী প্রধান তোফায়েল আহমেদ কী পরামর্শ দিয়েছিলেন তা এখনও জানা সম্ভব হয় নি। মোশতাকের সরকার টিকে ছিল আশি দিন। এই সময়ে মালেক ওকিল লন্ডনে গিয়ে বলে এসেছেন, ফেরাউনের রাজত্বের অবসান হয়েছে। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে যে লন্ডন নামক জায়গাটি বঙ্গভবনে অবস্থানরত ফারুক রশিদের বন্দুকের ডগার অনেক বাইরে ছিল।
তাছাড়া জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীর মত ব্যক্তিত্ব মোশতাকের উপদেষ্টা হয়েছিলেন। শোনা যায়, মাওলানা ভাসানীর অাশীর্বাদও খানেকটা পেয়েছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভিলেন এই খন্দকার মোশতাক আহমেদ। সম্মুখের সবাইকে বাদ দিয়ে এখন অভিযোগের আঙুল উঠেছে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে। যার অবস্থান তখন অনেক অনেক পেছনে ছিল। মজার ব্যাপার হলো, মোশতাকের সেই শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন বর্তমান সরকারেরই একজন উপদেষ্টা! সেই শপথ অনুষ্ঠানে কয়েক শত মানুষ উপস্থিত থাকলেও শহীদ জিয়া উপস্থিত ছিলেন না।

ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়, জিয়া কখনই ক্ষমতার প্রেমে পড়েন নি, ক্ষমতা গড়াগড়ি করে তাঁর উপরে গিয়ে পড়েছিল। কাজেই চাপাবাজি কিংবা কোন হামানদিস্তা দিয়ে ইতিহাসকে পাল্টানো যাবে না।

একটা কথা প্রচলিত আছে যে The killers always remain in the first row of mourners. এই কথাটি বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আরো বাস্তব সত্য হিসাবে ধরা দিয়েছে। ১৬ই আগষ্টে যারা ট্যাংকের উপর নাচানাচি করেছিল তারাই আজ বড় বড় mourner হয়ে পড়েছে।

চল্লিশ পঞ্চাশ বছর পরেও আমরা আমাদের দৃষ্টিকে উন্মুক্ত বা প্রসারিত করতে পারি নি। দিন দিন তা আরো সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

আমাদের এই মানসিকতা বা দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে সম্ভবত তৃতীয় কোন শক্তি। কারণ করিমের মাথায় পেছন থেকে টোকা পড়লেই পেছনে দাঁড়ানো রহিমের নাকে গিয়ে ঘুষি মারবে। তৃতীয় কেউ এই টোকাটি মারতে পারে ক্ষণেকের তরেও আমাদের এই করিমদের মনে এই ভাবনাটি উদয় হবে না।

কাজেই এই রহিম- করিমকে নিয়ে সুন্দর খেলা শুরু হয়ে গেছে। এই রহিম করিমের বাইরে যদুমধুর অস্তিত্বটি দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে । যাদের দরকার এই দেশ ও জাতিকে দাবিয়ে রাখা। এই দেশের গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অকেজো করে দেয়ার মধ্যেই এই যদুমধুর স্বার্থ লুকিয়ে আছে ।
আমাদের অস্তিত্বের স্বার্থেই এই সব ঘটনা নিয়ে নির্মোহ গবেষণা চালানো উচিত । তা না হলে ষোল কোটি মানুষ ও তাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম আরো হুমকির মুখে পড়ে যাবে।

এই কথা যেমন সত্য যে আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের নেত্রীকে হত্যার জন্যে ২১শে আগষ্টের এই ভয়ংকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে না, তেমনি করে সত্য যে চারদলীয় জোট সরকার নিজেদের পায়ে কুড়াল মারার জন্যে এই কাজটি করতে পারে না। কারন সেদিনের ঘটনায় শেখ হাছিনার আরো ভয়ংকর কিছু হলে নির্ঘাত সরকারের পতন হয়ে যেতো।

আমাদের ভাবনার লাঠিমটিকে অন্য অনেক দিকে ঘুরালেও কেন যেন এই দিকে ঘুরাতে চাই না। অথচ আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান ভাবনার এই পথটি দিয়েই আসতে পারে।

1 COMMENT

Comments are closed.