Investigation Department for Cricket Crime

ক্রিকেট ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট

cricket-crime

দায়া শেঠি, ক্রিকেট ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ইন্সপেক্টর। বিশ্বকাপের বাংলাদেশ-ভারতের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের ভিডিওটা আবার দেখালেন। ম্যাচের চল্লিশতম ওভারের চতুর্থ বলটা আসতেই এসিপি (অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশ) প্রদ্যুমান চিৎকার করে উঠলেন, ‘স্টপ! স্টপ!’ ভিডিওটা পজ করে দেওয়া হলো। এসিপি চিন্তিত, ‘কুছ তো গাড়বাড় হ্যায়, দায়া!’ দায়া হ্যাঁ–সূচক মাথা নাড়লেন। এসিপি টিভির দিকে দেখিয়ে বললেন, ‘দেখো, স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বল কোমরের নিচে ছিল। তবু থার্ড আম্পায়ারের সাথে কথা না বলে কেন নো বল ডাকা হলো! আমাদের জানতে হবে।’ এতটুকু বলে আবার ভিডিও প্লে করতে বললেন এসিপি।
ভিডিও চলছে। খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ ধরে আনন্দে আত্মহারা শিখর ধাওয়ান। কিন্তু স্লো মোশনে দেখা যাচ্ছে ধাওয়ানের পা বাউন্ডারি রোপ স্পর্শ করেছে। তবু আউট দিয়ে দিয়েছেন আম্পায়ার। দ্রিমদ্রিম আওয়াজ হচ্ছে সিসিআইডির হেডকোয়ার্টারে। সবাই খুব চিন্তিত।
‘এই দুই আম্পায়ার কারা?’
অভিজিৎ বলল, ‘আলিম দার ও ইয়ান গোল্ড, স্যার!’
এসিপি চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘দায়া, পাতা লাগাও!’
আলিম দার ও ইয়ান গোল্ডকে খুঁজতে সিসিআইডি টিম গেল তাদের হোটেল রুমে। রুমের দরজা বন্ধ। এসিপি হুকুম দিলেন, ‘দায়া, দরজা তোড় দো!’
দরজা ভাঙা হলো। কেউ নেই। তন্নতন্ন করে পুরো ঘর খুঁজেও কেউ কিছু পেল না। এসিপি নাক–মুখ কুঁচকে আবার উচ্চারণ করলেন, ‘দায়া, পাতা লাগাও! কোই না কোই তো সুরাগ (সূত্র) মিল জায়েগা!’ এসিপির হুকুমে আবার খোঁজ শুরু হলো। আলিম দারের রুমে একটা ব্লুটুথ ইয়ারফোন পাওয়া গেল। ইয়ারফোনে সামান্য রক্তের দাগ। কিসের রক্ত? এসিপি গম্ভীর মুখে স্বগতোক্তি করলেন, ‘ইয়ারফোনটা আম্পায়ার আলিম দারের!’
অভিজিৎ অবাক, ‘কী করে বুঝলেন, স্যার?’
‘বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ চলাকালীন আম্পায়ার আলিম দার নিজের গলা চুলকেছিলেন। হাতের নখ বড় ছিল বলে চামড়া কেটে রক্ত এসে লেগেছে। অতএব এই ইয়ারফোন আলিম দারের!’
বিস্ময়ে মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না অভিজিৎ ও দায়ার। এসিপি আবার বলতে শুরু করলেন, ‘কিন্তু ইয়ারফোনে আইসিসি ওয়ার্ল্ডকাপ ২০১৫–এর কোনো লোগো নেই। অতএব এটা আলিম দারের ব্যক্তিগত ইয়ারফোন। যেটা তিনি ম্যাচের সময় ব্যবহার করেছিলেন।’
তদন্ত চলছে। ডাক্তার সালুখে জানালেন, বাউন্ডারি রোপ নড়েছে। কারণ, স্পষ্ট দেখা গেছে, রোপে শিখর ধাওয়ানের পা লেগেছিল। সে সময় মেলবোর্নে যে বাতাস ছিল তাতে বাউন্ডারি রোপ এমনি এমনি সরে যাওয়া অসম্ভব। অতএব সেটা ছক্কা ছিল। ততক্ষণে এসিপির মুঠোফোনে খবর এল, আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড ও আলিম দারকে ধরা হয়েছে। হেডকোয়ার্টারে আনা হচ্ছে।
হেডকোয়ার্টারে এসিপির মুখোমুখি গোল্ড ও আলিম দার। এসিপি কোমরে হাত দিয়ে কড়া চোখে তাকিয়ে আছেন দুজনের দিকে। চোখ–মুখ কুঁচকে জানতে চাইলেন, ‘আউট হয়েছে তবু আউট দেননি; নো বল হয়নি, তার পরও নো বল ডেকেছেন! কেন?’
গোল্ডের মুখ বিকৃত, ‘আমি নো দিইনি! হাত ব্যথা করছিল বলে হাতটা একটু প্রসারিত করে ব্যায়াম করছিলাম।’
এসিপি ভীষণ ক্ষুব্ধ, ‘মি. গোল্ড, মিথ্যা বলার চেষ্টা করবেন না। ডাস্টবিনের সাথে বেঁধে রাখব কিন্তু! নাক ধরতে ধরতে হাত ব্যথা হয়ে যাবে। তবু নাক থেকে হাত সরাতে পারবেন না। বলুন, নো কেন ডেকেছিলেন?’
গোল্ড ভয়ে ভয়ে পাশে বসা আলিম দারকে দেখিয়ে দিলেন। আলিম দার ডাঙায় ওঠা কাতলা মাছের মতো মুখ হাঁ করে গোল্ডের দিকে তাকিয়ে রইলেন। হড়বড় করে সব বলে দিলেন গোল্ড।
ঘটনা পানির মতো পরিষ্কার। সবাইকে হেডকোয়ার্টারে ডাকা হলো ‘কেস ক্লিয়ার’ করে দেওয়ার জন্য। এসিপি গলা খাঁকারি দিয়ে বলতে শুরু করলেন, ‘ক্রিকেট এখন যতটা না খেলা, তার চেয়ে বেশি ব্যবসা। সে ব্যবসার জন্য ভারত হেরে বিদায় নিলে আইসিসির অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু তারা কী করবে? ভারত হলো বাংলা সিনেমার চৌধুরী সাহেব। তাদের অনেক টাকা। টাকা আর ক্ষমতা দিয়ে জয় কিনেছে তারা। সেটা বিক্রি করেছে আইসিসি। মাঠে আবার সেটা বাস্তব রূপ দিয়েছেন এই দুজন—আলিম দার ও ইয়ান গোল্ড। মাঠের বাইরে বসে সহযোগিতা করেছেন থার্ড আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস। এঁরা সবাই অপরাধী…’ কথা শেষ করার আগেই চিৎকার করে উঠলেন আলিম দার, ‘নো বল! নো বল!’ সবাই অবাক, আবার নো বল! আলিম দারের মুখে বিনীত হাসি, ‘নুন খেয়েছি তো, ভারতকে বোল্ড হতে দেখে অভ্যাসবশত গুণ গেয়ে ফেলেছি!’

Source: Prothom-Alo