Ill- treatment to the BNP political inmates in Paltan jail

১১৯ জনের জন্য দুইটি টয়লেট; অর্ধেক বসলে বাকিদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়; হাজতেও পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি হাতে হ্যান্ডকাফ

পল্টন থানার সামনে শত শত স্বজনের ভিড়। এই থানার হাজতখানার দু’টি খুপরিঘরে বন্দী আছেন বিএনপির ১১৯ নেতাকর্মী। স্বজনদের কেউ কাঁদছেন, কেউ গালে হাত দিয়ে বসে আছেন, আবার কেউ চেষ্টা করছেন কারো মাধ্যমে বন্দী স্বজনের সাথে দেখা করতে পারেন কি না। তাদের মধ্যে অনেক মহিলাও রয়েছেন। সন্তান কোলে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন রিমান্ডে থাকা স্বামীর খোঁজখবর নিতে। অনেকে দালালকে টাকা দিয়ে কিছু খাবার পাঠিয়েছেন হাজতখানায়। পৌঁছেছে কি না জানেন না। থানার আশপাশ দোকানগুলোয় পণ্যের মূল্য আকাশছোঁয়া। এক লিটার পানির বোতল কিনতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। রুটির দামও বেড়েছে কয়েক গুণ। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, মানুষকে ঠেকিয়ে অর্থ আদায় করছেন দোকানিরাও। গতকাল শনিবার থানা এলাকায় গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ১১৯ জনের অবস্থান পল্টন থানায়। থানার দু’টি হাজতখানার মধ্যে একটিতে রয়েছেন ৭৬ জন। বাকিরা অন্যটিতে। দু’টি হাজতখানায় মাত্র দু’টি পায়খানা। নেই কোনো পানির ব্যবস্থা। ফ্যান নেই। একটি করে গেট। সেখানেই গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। সূত্র জানায়, ওই একটি হাজতখানায় ২০-২৫ জন বন্দীকেই থাকতে হয় গাদাগাদি করে। ২০-২৫ জন থাকলেই পাশাপাশি শুয়ে ঘুমানোর সুযোগ থাকে না। সেখানে রাখা হয়েছে প্রায় তিন-চার গুণ বন্দীকে।

সূত্র জানায়, গত বুধবার পুলিশের দায়ের করা দু’টি মামলায় পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতারকৃত বিএনপির ১৫১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিএমএম আদালত। তাদেরকে আট দিনের রিমান্ডে দেয়া হয়। আদালতের আদেশ পাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার বিকেলেই পল্টন থানা পুলিশ ঢাকা, কাশিমপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে তিনটি প্রিজনভ্যানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিএমএর সাবেক মহাসচিব ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি মোহাম্মদ শাহজাহান, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, হাবিবুর রহমান হাবিবসহ বিরোধী ১৫১ নেতাকর্মীকে পল্টন থানায় নিয়ে আসে। অভিযোগ রয়েছে, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের নামে সন্ধ্যার পর থেকেই নানা কায়দায় নির্যাতন শুরু হয় তাদের ওপর। তাদেরকে রাখাও হয়েছে খুব অমানবিক কায়দায়। ডা: জাহিদ, যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি মোহাম্মদ শাহজাহান, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, হাবিবুর রহমান হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, জামাল শরীফ হিরো, আবেদ রাজা ও জেড মর্তোজা তুলাকে ডিবি কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ২৪ নেতাকে রাখা হয়েছে রামপুরা থানাহাজতে। আর বাকি ১১৯ নেতাকর্মীকে রাখা হয়েছে পল্টন থানার দু’টি খুপরি হাজতখানায়। সূত্র জানায়, নিচতলায় পশ্চিম দিকের ছোট খুপরি কক্ষটিতে রাখা হয়েছে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুল হক নান্নুসহ ৭৬ জন নেতাকর্মীকে। ছোট একটি দরজা ছাড়া ভেতরে আলো বাতাসের কোনো ব্যবস্থা নেই। বসার স্থান সঙ্কুলানের অভাবে অর্ধেক দাঁড়িয়ে অর্ধেক বসে পালা করে অবস্থান করছেন। আবার অনেককে রাখা হয়েছে ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরিয়ে। দুর্ভোগের যেন কোনো সীমা নেই।

গত ১১ মার্চ রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে ককটেল হামলার পর নেতাকর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে এডিসি শেখ মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে দরজা ভেঙে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ ১৫৭ নেতাকর্মীকে আটক করে। সেখান থেকে লুটপাটেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পরদিন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং ১৫৪ জন নেতার বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করে ১৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। সিনিয়র কয়েকজন নেতা ছাড়া অন্যদের ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। বুধবার শুনানিতে তাদের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিএমএম আদালত।

আট দিনের রিমান্ডে নেয়া ১৫১ জন নেতা হলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো: শাহজাহান, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, সোহেল রানা, মঞ্জুর হোসেন, এহসানুল হক, আজিজুল ইসলাম মুনির, আলাউদ্দিন মানিক, ইকবাল মোর্শেদ খান, কামাল আহমেদ, শাকিল, মনির হোসেন, তাইমুল ইসলাম, ইকবাল, নাঈম আহমেদ, মজিবর রহমান, মিঠু তালুকদার, মামুন, ওমর ফারুক, জুলফিকার আলী ভুট্টু, মামুন, দেলোয়ার হোসেন, রবিউল আউয়াল, জসিম উদ্দিন, মামুনুর রশিদ, ওয়াহিদুজ্জামান, আল আমিন, আবুল হোসেন, মাসুদ রানা রিয়াজ, আবুল কালাম, মিজান, বাচ্চু, কামরুজ্জামান ওরফে রিপন, লিটন, আবদুল মান্নান, শহিদ্জ্জুামান, আমির হোসেন জুয়েল, মো: রেজাউল ইসলাম, এম এ সোবহান, রফিকুল ইসলাম, মো: জুয়েল, আল আমিন, ওমর ফারুক, মিজানুর রহমান, শাহিন মো: শাহান শাহ, জাকির হোসেন, আজগর আলী, শাহজাহান, মুকুল সরকার, মাসুদ আহমেদ, খোরশেদ আলম, শাহজাহান পাঠান, শিহাব উদ্দিন, রবিউল, কামাল উদ্দিন, নাসির উদ্দিন, সবুজ, নিজাম উদ্দিন হাওলাদার, নাসির আহমেদ খোকা, অ্যাডভোকেট এ এন এম আবেদ রেজা, সোহেল, হাফেজ সাইফুল্লাহ, আবু সালেহ, সিরাজুল ইসলাম মানিক, মাহবুবুর রহমান ছানা, শাহিন, শামসুদ্দিন, কামরুল, এশাকুল ইসলাম লিন্টু, রুবেল মাহমুদ, মিয়া হোসেন, মেহেদি হাসান লিটু, শাহাবুদ্দিন, লিটন, সালাউদ্দিন, সেন্টু শেখ, আবদুল কাদের, আশিক, শাহমান শাহাদাত, জহিরুল ইসলাম, আনোয়ার, তোজাম্মেল হক সোহাগ, কাজী রওনাকুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন, মইনুল ইসলাম, আরেফিন আহমেদ খান সাজু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ফোরকান ই আলম, সাইফুদ্দিন আহমেদ, জামাল শরিফ হিরু, তাজুল ইসলাম, নাজমুল হোসেন রাসেল, মনিরুজ্জামান, শাহজাহান, আবদুল হালিম খান, জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল কাদির জিলানি ভূঁইয়া, রুহুল আমিন, খোকন এরশাদ, জিয়াউল হক জিয়া, ইকবাল হোসেন গনি, বশিরুল আলম টিটু, আল আমিন, অ্যানি, সুমন আহমেদ রাজ, জুয়েল, আসাদ্জ্জুামান শিমুল, এমএ বারি, আবদুল্লাহ, মনির হোসেন, রাসেল, নাসির তালুকদার, বাবুল শিকদার, হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, কায়সার, মোশাররফ হোসাইন, ওয়াসিম আলম, জাহিদুল আলম মিলন, মাসুদ রানা, সোহেল, সাইফুল্লাহ, আবুল কালাম, মালেক, এম এ কাশেম মজুমদার, এম এ জহিরুল ইসলাম, রতন মিয়া, বিলাল হোসেন, রেজাউল করিম, ইলিয়াস, জোনায়েদ ওসমান, আলমগীর, তুষার, ফরহাদ, দাউদ চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী, কে এম সাইফুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট জেড মোর্তজা চৌধুরী, এম আর আলী ফাহিম, নজরুল ইসলাম, প্রফেসর আবু তাহের, সম্রাট, আলমাস, আশরাফুল ইসলাম শুকুর, তানভির হায়দার, শাহিন, আবদুল্লাহ আল হাসান, ফেরদৌস ও ইমরুল কায়েস।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পুলিশ বিপুল অঙ্কের বাণিজ্য শুরু করেছে। দালালদের মাধ্যমে চলছে এই বাণিজ্য। পল্টন থানা হাজতের সামনে এক স্বজন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, তার স্বামী রিমান্ডে রয়েছেন। তার স্বামীকে মারধর করা হবে না এই অজুহাতে একজন তার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেছেন। তিনি ৫ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়েছেন। এভাবে বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, লোক মাধ্যমে পুলিশ তাদের কাছে টাকা দাবি করে আসছে। এ ব্যাপারে পল্টন থানার ওসির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

গত রাতে পল্টন থানার ডিউটি অফিসার বলেছেন, তাদের হেফাজতে এখন ৭৬ জন রয়েছেন। রামপুরা থানাহাজতে রয়েছেন ২৩ জন, ডিবিতে ৮ জন এবং একজন রয়েছেন হাসপাতালে। তিনি বলেন, এখন রিমান্ডে রয়েছেন ১০৮ জন। বাকিদের জেলে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 Source: Naya Diganta