Hefajat’s grand rally held in Sylhet and Mymenshingh

সিলেট ও ময়মনসিংহে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে বক্তারা : বাতিল এসেছে শেখ হাসিনার বেশে : ১৩ দফা পূরণ ছাড়া ঘরে ফিরব না : মাহমুদুর রহমান হকের পতাকাবাহী, অবিলম্বে মুক্তি দিন

Sylhet-O-Moymanshing

সিলেট ও ময়মনসিংহে গতকাল মহাসমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। দুটি মহাসমাবেশই জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সিলেটে হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত মহাসমাবেশে বক্তারা বলেছেন, যুগে যুগে বাতিল এসেছে। বর্তমানে বাতিল এসেছে শেখ হাসিনার বেশে, আর এই সময়ে হক এসেছে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বেশে। অন্যদিকে ময়মনসিংহে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে বক্তারা বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শফী যে ১৩ দফা দাবি দিয়েছেন, তা মৌলিকভাবে ঈমান রক্ষার ১৩ দফা; দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার ১৩ দফা। আগামী ৫ মে’র মধ্যে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির বাস্তবায়ন না হলে সারাদেশকে অচল করে দেয়া হবে।
সিলেট সিটি পয়েন্টে আয়োজিত এই মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জনসমুদ্রে আলেমরা বলেন, তাদের আগের ১৩ দফা দাবির সঙ্গে আরও এক দফা যোগ হয়েছে—আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি। এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। আমরা আমাদের দাবি আদায়ের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছি। বক্তারা বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের কিছু হলে দেশে আগুন জ্বলবে। লেজ গুটিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম চলে গেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যে জবাবে বক্তারা বলেন, মাহমুদুর রহমানের মুক্তিসহ ১৪ দফা দাবি পূরণ না হলে দুর্বার আন্দোলনে সরকারই লেজ গুটিয়ে যেতে বাধ্য হবে।
বেলা ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১০টা থেকেই হেফাজত কর্মীরা সমবেত হতে থাকেন। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে থেকে একের পর ইসলামি সঙ্গীত পরিবেশন চলতে থাকে। জাগরণ শিল্পীগোষ্ঠী, কলরব, চেতনা, ইসলামী সংস্কৃতি পরিষদের আবদুল করিম দিলদার, মোস্তফা আল ফাহাদ, আবদুল্লাহ আল ফাহিমসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের তরুণ শিল্পীরা মাতিয়ে তোলেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃহত্তর সিলেটে বিভিন্ন স্থান মিছিল-সমবেশস্থলে আসতে থাকে। মিছিলের প্ল্যাকার্ডে লেখা স্লোগানের মধ্যে ছিল ‘নাস্তিক মুরতাদদের ফাঁসি চাই, ১৩ দফা দাবি মানতে হবে, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চাই। সমবেশে অধিকাংশ শ্রোতার হাতে আমার দেশ পত্রিকা দেখা যায়।’
বাদ জোহর থেকে সিটিপয়েন্ট থেকে পশ্চিমে সুরমা পয়েন্ট ও দক্ষিণে কোর্টপয়েন্ট হাজার হাজার জনতার স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। সমাবেশের কারণে নগরীর কেন্দ্রস্থলে যানচলাচল বন্ধ ছিল।
স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা সংহতি জানাতে মঞ্চে আসেন। তবে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা বক্তৃতা দেননি। মাইকে ঘোষক তাদের আগমনের কথা জানান দিয়ে শুকরিয়া প্রকাশ এবং মহান আল্লাহর রহমত কামনা করেন।
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সমবেশস্থল ছিল ভিড়ে ঠাসা। আশপাশের ভবনগুলোর বারান্দায় অনেকে সমবেত হয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বক্তৃতা শোনেন। তরুণের মাথায় ‘নাস্তিক মুরতাদের ফাঁসি চাই’ লেখা কাপড় এবং কারও হাতে ছিল ছোট ছোট জাতীয় পতাকা।
হেফাজতে ইসলাম সিলেটের ডাকে সিলেটের সিটি পয়েন্টে গতকাল শনিবার বিশাল শানে রাসুল (স.) সিলেট জেলা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা মুহিবুল হক গাছবাড়ীর সভাপতিত্বে এবং জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জমিয়তের সভাপতি মাওলানা শায়খ যিয়াউদ্দীনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবু নগরী।
মাওলানা মুশতাক খান, মাওলানা রেজাউল করীম জালালী, মাওলানা আবদুুল মালিক কাসেমীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সভাপতি খলিফায়ে মাদানী আল্লামা আবদুুল মোমিন শায়খে ইমামবাড়ী, প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান, অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুুর রকিব, মাওলানা শফিক উদ্দিন, মুনতাসির আলী, মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী, মুফতি আবুল কালাম যাকারিয়া, মুফতি রশীদুর রহমান ফারুক বর্ণভী, মাওলানা শায়খ আবদুশ শহীদ গলমুকাপনী, মাওলানা মজদুদ্দীন, মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী, মাওলানা নুরুল ইসলাম খান, প্রিন্সিপাল মাহমুদুল হাসান, মাওলানা আবদুুল মালিক চৌধুরী, মাওলানা আতাউর রহমান, মাওলানা নজরুল ইসলাম, মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান, মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, মুফতি নাসির উদ্দীন খান, মাওলানা সৈয়দ মাসুদ, মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারী, মাওলানা মুছলেহ উদ্দীন রাজু, মাওলানা মুফতি মুজিবুর রহমান, মাওলানা মাসরুর হবিগঞ্জী, ক্বারী সিরাজুল ইসলাম, হাজী ইমদাদ উল্লাহ, মাওলানা ফয়জুল হাসান খাদিমানী, মাওলানা আজিজুল কিবরিয়া ফুরকানী, মাওলানা খলিলুর রহমান, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিরাজী, মাওলানা শাহ মাশুক, মুফতি ফয়যুল হক, মাওলানা নাসির উদ্দিন, মাওলানা আবদুুল বাসিত বরকতপুরী, শরীফ খালেদ সাইফুল্লাহ, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আবদুুল মালিক মোবারকপুরী, মাওলানা আবদুুল বছির সুনামগঞ্জী, মাওলানা জাহিদ উদ্দীন চৌধুরী, মুফতি খন্দকার হারুনুর রশীদ, শাহ আশরাফ আলী মিয়াজানী, শাহ মমশাদ, মাওলানা আবদুুল হান্নান শায়খে পাগলা, মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আলীনুর, মাওলানা রুহুল আমিন নগরী, অধ্যক্ষ আবদুুল হান্নান, আবু সালেহ সাদী, মাওলানা আবদুস সালাম, মাওলানা শায়খ আবদুুল গনী হাড়ীকান্দি, একরামুল আজিজ, মাওলানা জয়নাল আবেদীন, মাওলানা আবদুুল মুছাব্বির, গোলাম আম্বিয়া কয়েস, মাওলানা আখতারুজ্জামান, তোফায়েল আহমদ উসমানী প্রমুখ।
সিলেটের বিশাল জনসমুদ্রে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরী বলেছেন, আমরা নই, দাবি-দাওয়া পূরণ না হলে সরকারই লেজ গুটিয়ে যেতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, হেফাজত নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন করা হলে সারাদেশে আগুন জ্বলবে। তিনি অবিলম্বে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানেরও মুক্তি দাবি করেন।
প্রায় ১৫ মিনিটের বক্তব্যে গণজাগরণ মঞ্চ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সাম্প্রতিক বক্তব্য, হেফাজতের ১৩ দফা এবং আমার দেশ সম্পাদকের গ্রেফতারের বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। আল্লামা বাবু নগরী বলেন, হক বাতিলের লড়াই পুরাতন। বাতিলের বিরুদ্ধে আল্লাহ যুগে যুগে নবী রসুল প্রেরণ করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে আল্লাহ হকের বেশে আল্লামা আহমদ শফিকে প্রেরণ করেছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক ডা. ইমরান এইচ সরকারকে নাস্তিকদের দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এ কারণে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া দরকার। হেফাজত নেতাকর্মীদের ইমরানের সতর্ক বাণী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের কিছু হলে দেশে আগুন জ্বলবে। লেজ গুটিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম চলে গেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যে জবাবে আল্লামা বাবু নগরী বলেন, আমরা নই, মাহমুদুর রহমানের মুক্তিসহ ১৩ দফা দাবি পূরণ না হলে দুর্বার আন্দোলনে সরকারই লেজ গুটিয়ে যেতে বাধ্য হবে।
শাহরিয়ার কবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি বাংলার মাদানী আল্লামা শফির সঙ্গে বেয়াদবি করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আলেম-ওলামার সঙ্গে বেয়াদবি করলে আল্লাহ তার চোখ উপড়ে ফেলবেন।
বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই—এ মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ দুটি সংগঠনের সঙ্গে আমাদের সাংগঠনিক কিংবা দলীয় কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপির সঙ্গে ৮৫ কোটি টাকার লেনদেন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহই আমাদের সাহায্যকারী। এর পক্ষে কেউ প্রমাণ দেখাতে পারবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
হেফাজতের নারী নীতিমালা স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট বলে তিনি মন্তব্য করেন। নারীরা পুরুষের মতো কাজ করতে পারবে। কিন্তু তাদের নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে সম্মানের সঙ্গে, পর্দা-হিজাবের সঙ্গে। ইভটিজিং বন্ধ এবং কর্মজীবন সুন্দর করার জন্য তারা নারীনীতিমালা ঘোষণা করেছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
হেফাজতের মহাসচিব বলেন, আমরা ব্লাসফেমি আইন করতে বলিনি। ইসলামদ্রোহী, খোদার দুশমন ও নবীজির অবমাননাকারীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখতে বলেছি। তিনি সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংযোজনের ওপর জোর দেন। মাহমুদুর রহমানকে আদর্শ সম্পাদক উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি হকের পতাকাবাহী ব্যক্তি। বিশাল সমাবেশে তিনি মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করেছেন। তিনি ঈমান রক্ষার আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, মহানবী (সা.)-কে কটাক্ষ যারা করেছে, আল্লাহকে অপমানিত যারা করেছে, ইসলামের বিধিবিধান নিয়ে যারা বিদ্রূপ করেছে, তারা মুসলমান নয়; তারা নাস্তিক, তারা মুরতাদ, তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। সারাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ যখন হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে নাস্তিকদের ফাঁসিসহ হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলন করছে, ঠিক ওই মুহুর্তে একটি চিহ্নিত মহল ১৩ দফাকে মধ্যযুগীয় বলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছে। নাস্তিকদের মদতদাতারা শত চেষ্টা করলেও বাংলার ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। ইসলামের ওপর যখনই আঘাত এসেছে, মুসলমানরা পরস্পরিক মতভেদ ভুলে গিয়ে ইসলাম ও ঈমান রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হযেছে। আজকের সময়ে বাংলাদেশের মুসলমানরা হেফাজতে ইসলামের নামে ঐক্যবদ্ধভাবে নাস্তিকদের ফাঁসিসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত রয়েছে। সরকার যদি আমাদের দাবির প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে, তাহলে তার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। আমরা আমাদের দাবি আদায়ের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছি। মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী আরও বলেন, হক ও বাতিলের লড়াই যুগে যুগে ছিল এবং থাকবে। বাতিল যখন এসেছিল, ফেরাউনের বেশে হক তখন এসছিল মুসা (আ.)-এর বেশে আর বর্তমানে বাতিল এসেছে শেখ হাসিনার বেশে। এ সময় হক এসেছে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বেশে। জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই—উল্লেখ করে বলেন, আমাদের ১৩ দফার অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সভাপতি খলিফায়ে মাদানী আল্লামা আবদুল মোমিন শায়খে ইমামবাড়ী বলেন, শাহবাগী নাস্তিকরা আল্লাহ ও রাসুলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ঈমানদারদের কলিজায় আঘাত দিয়েছে। এ আঘাতের জন্য তাদের ফাঁসির দাবিই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত। আল্লামা আবদুল মোমিন বলেন, মাহমুদুর রহমান আস্তিকদের পক্ষ নেয়ায় আজ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই আমরা আজকের সমাবেশ থেকে তার মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।
সিলেট জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জমিয়তের সভাপতি মাওলানা শায়খ যিয়াউদ্দীন আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পক্ষ থেকে হেফাজতের ১৩ দফার সঙ্গে আরও এক দফা দাবি যোগ করে বলেন, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। তিনি ১৩ দফার সঙ্গে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিটি সংযুক্ত করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বস্তরের জনতার প্রতি আহ্বান জানান।
মহাসমাবেশে প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান বলেন, ‘মুসলমানরা যখন আন্দোলন শুরু করে, সফলতা না দেখে ঘরে ফিরে না। আলেম-ওলামার নেতৃত্বে যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, সবক’টি আন্দোলনই সফল হযেছে। আমরা তসলিমাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছি, দাউদ হায়দার সরকার-আলাউদ্দিনসহ কোনো নাস্তিকেরই শেষ রক্ষা হয়নি। আসিফ মহিউদ্দিনসহ নব্য নাস্তিকরাও রেহাই পাবে না। সরকার যদি মুসলমানদের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা না জানায়, আর জনগণ যদি দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেয়, তাহলে তার দায়ভার সরকারকে অবশ্যই বহন করতে হবে। আমি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, কিছু কুচক্রী মহল আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা অপকৌশল করছে। আমি তার নিন্দা জানাই।
সভাপতির বক্তব্যে শায়খুল হাদিস মুফতি মুহবুিল হক গাছবাড়ী বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনীতি করি না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আমাদের আন্দোলন নয়। আমাদের আন্দোলন ইসলাম ও ঈমান রক্ষার আন্দোলন। এ আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলন বিবেচনা করে ১৩ দফা দাবি মানা না হয়, তাহলে তা জাতির জন্য শতাব্দীর নিকৃষ্টতম লজ্জা। হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত ১৩ দফা দাবি সম্পূর্ণ যৌক্তিক—এ দেশের মুসলমানদের হৃদয়ের দাবি। এ দাবি বাস্তবায়নে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। সফল না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাব না। হেফাজতে ইসলামের প্রধান আল্লামা আহমদ শফী সাহেবজাদা মাওলানা আনাস মাদানী বলেন, আল্লামা আহমদ শফীর আহ্বানে আজ সারাদেশের মুসলমান ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাংলার জনগণ ঘরে ফিরে যাবে না। শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের (রহ.) সাহেবজাদা ও হেফাজতে ইসলাম ঢাকার সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘আলেমরা টাকায় বিক্রি হয় না। যারা আলেমদের আন্দোলন নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছে, তারা কখনও জনগণের বন্ধু হতে পারে না, তারা ইহুদি-নাসারাদের চর নাস্তিকদের মদতদাতা। এদের চিহ্নিত করতে হবে। নাস্তিকদের ফাঁসির দাবি থেকে একচুল পরিমাণও পিছপা হব না।
হেফাজতে ইসলাম ঢাকার সদস্য সচিব মাওলানা জুবায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না’, নাস্তিকদের দোসররা তাদের চরিত্রের পরিবর্তন করতে পারেনি। তারা আজ এককথা, কাল এককথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করে চলছে। তারা নাস্তিকদের রক্ষায় উঠে পড়ে লেগেছে। জনগণ জেগে উঠেছে, তাদের শেষ রক্ষা হবে না। মাদানী কাফেলার সভাপতি মাওলানা রুহুল আমীন নগরী বক্তৃতায় ১৩ দফা দাবিসহ আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করেন। সমাবেশে সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জমিয়তের সভাপতি মাওলানা শায়খ যিয়াউদ্দীন সমাবেশের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হেফাজতের ১৩ দফার সঙ্গে আমার দেশ সম্পাদকের মুক্তি দাবির বিষয়টি ১৪দফা দাবি হিসেবে ঘোষণা করেন।
ময়মনসিংহে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে বক্তারা
১৩ দফা মানা না হলে সারাদেশ অচল করে দেয়া হবে
ময়মনসিংহ ও বাকৃবি প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে বক্তারা বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শফী যে ১৩ দফা দাবি দিয়েছেন, তা মৌলিকভাবে ঈমান রক্ষার ১৩ দফা; দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার ১৩ দফা। অবিলম্বে এ ১৩ দফা মেনে নিয়ে ঈমান রক্ষায় এবং দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় ভূমিকা রাখুন। তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। আগামী ৫ মে’র মধ্যে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির বাস্তবায়ন না হলে সারাদেশকে অচল করে দেয়া হবে। সব ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজ নিজ এলাকার সব সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে রাখবে। যতদিন পর্যন্ত এ ১৩ দফা বাস্তবায়ন না হবে, ততদিন আন্দোলন চলবে। সরকার ক্ষমতা স্থায়ী করতে সংবিধান পরিবর্তন করতে পারলে ১৩ দফার আলোকে ইসলামের প্রয়োজনে আবার সংবিধান সংশোধন করতে হবে।
বক্তারা বলেন, মুসলামানদের কণ্ঠস্বর আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ইসলামের পক্ষে কলম ধরে তৌহিদি জনতাকে উদ্বুদ্ধ করায় সরকারের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেন তিনি। তাই তার নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে জালিম সরকার নাস্তিকদের খুশি করতে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে; আমার দেশ বন্ধের পাঁয়তারা করছে। আমরা বলতে চাই, মাহমুদুর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহী নন। তাকে যারা অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করছে, তারাই রাষ্ট্রদ্রোহী। হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেন, একজন মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে ইসলামকে ধ্বংস করা করা যাবে না। আজ সারাদেশে লাখ লাখ মাহমুদুর রহমান তৈরি হয়ে গেছে। কোনো রক্তচক্ষু এ আন্দোলন দমাতে পারবে না। অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি না দিলে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
গতকাল ময়মনসিংহের খাগডহর বাইপাস সড়কে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে হেফাজতে ইসলামের ‘শানে রিসালাত’ মহাসমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সমাবেশে বক্তারা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সমালোচনা করে বলেন, গণজাগরণ মঞ্চ জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে। অবিলম্বে গণজাগরণ মঞ্চ বন্ধ এবং এর মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, শাহরিয়ার কবিরসহ সব নাস্তিক ব্লাগারকে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তেব্যের সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, হেফাজতকর্মীরা লেজ গুটিয়ে চট্টগ্রাম পালিয়ে যায়নি। আপনি এসে দেখে যান, আপনার জেলা ময়মনসিংহে হেফাজতের কর্মীরা সিংহের গর্জন দিচ্ছে। রাশেদ খান মেননকে উদ্দেশ করে বক্তারা বলেন, হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে আর একটা উল্টোপাল্টা কথা বললে পিটিয়ে তক্তা বানানো হবে।
ইত্তেফাকুল ওলামা বৃহত্তর ময়মনসিংহের আয়োজনে মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী। ইত্তেফাকুল ওলামার সভাপতি আল্লামা আবদুর রহমান হাফেজ্জীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা তাজুল ইসলাম, মাওলানা সাজেদুর রহমান, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী, মাওলানা মানসুরুল হক খান, শাহ মোশাররফ হোসাইন পীর সাহেব, মুফতি মো. তৈয়ব, মাওলানা শরীফ মোহাম্মদ প্রমুখ। সমাবেশে ময়মনসিংহের বিএনপি নেতারা সংহতি প্রকাশ করেন।
মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী বলেন, ইসলামের পক্ষে কথা বলায় সরকার মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে এদেশের তৌহিদি জনতা তাকে যে কোনো মুল্যে মুক্ত করবে। তিনি আরও বলেন, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শফী যে ১৩ দফা দাবি দিয়েছেন, তা মৌলিকভাবে ঈমান রক্ষার ১৩ দফা; দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার ১৩ দফা। অবিলম্বে এ ১৩ দফা মেনে নিয়ে ঈমান রক্ষায় এবং দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় ভূমিকা রাখুন। তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। যতদিন পর্যন্ত এ ১৩ দফা বাস্তবায়ন না হবে, ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী বলেন, ১৩ দফায় নারীবিরুদ্ধ কোনো কথা বলা হয়নি; বরং নারীর সম্মান নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। সরকার ও শাহবাগিরা ১৩ দফার অপব্যাখ্যা করে নারীর হেফজতে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, মুসলমানদের এই দেশে নাস্তিকদেরর ঠাঁই নাই। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নাস্তিকদের সঙ্গে নয়; মুসলামানদের কাতারে এসে দাঁড়ান। মাহমুদুর রহমানকে অবিলম্বে ছেড়ে দিন, না হলে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।
মাওলানা জুনায়েদ আলী হাবিবী বলেন, মুফতি খালেদ সাইফুল্লাহ সাদীসহ ওলাময়ে কেরামদের গুলি করা হয়েছে। সহ্যের একটা সীমা আছে। আগামীতে যেখানে প্রতিরোধ, সেখানেই লড়াই হবে।
মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, আল্লাহ ও নবীপ্রেমীদের ময়মনসিংহ শহরে সমাবেশ করতে না দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে শহর থেকে দূরে পাঠিয়েছে সরকার। আমরা বলতে চাই, এখন প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়ে আলেমদের সমাবেশ করতে হয়। ভবিষ্যতে ওলাময়ে কেরামদের অনুমতি নিয়ে তোমাদের সমাবেশ করতে হবে। তিনি বলেন, হেফজাতের ৪২ জনকে গ্রেফতারে তালিকা হয়েছে। আমি বলতে চাই, ৪২ জন কেন ৪২ হাজার গ্রেফতার করেও এ আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।
জনতার সব স্রোত মহাসমাবেশ ঘিরে : মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরেই ময়মনসিংহের ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস ও উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সভায় যোগ দিতে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মানুষ উদগ্রীব হয়ে ছিল। শুক্রবার রাত থেকেই দলবেঁধে মানুষ আসতে থাকে খাগডহর বাইপাস এলাকায়। গতকাল ভোর থেকে বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যানে করে যে যেভাবে পারছেন, এসেছেন ওলামায়ে কেরামের মহাসমাবেশে। আশপাশের লোকজন ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে যোগ দেন সমাবেশে। ময়মনসিংহসহ আশপাশের সব জেলার সব রাস্তার মানুষের স্রোত এসে মিলিত হয় খাগডহর বাইপাস মোড়ের মহাসমাবেশে। সমাবেশে আসা লোকজনের হাতে হাতে ছিল আমার দেশ।
পথে পথে আপ্যায়ন, অভ্যর্থনা : মহাসমাবেশে আসা লোকজনকে পথে পথে অভ্যর্থনা জানায় খাগডহরসহ আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষ। দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজনের মাঝে ঠাণ্ডা পানি, শরবত, শুকনা খাবার, শসাসহ নানা ধরনের খাবার বিতরণ করেন এলাকাবাসী।

Source: Amar Desh Online