খোঁচাখুঁচি ; শরীক ‘নো’, প্রতিপক্ষ ‘ইয়েস’

মহাজোটের শরীকদের নিয়ে খোঁচাখুঁচি না করার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ এই খোঁচাখুচি কর্মটি একটু বেশি করাতে কেঁচো খুড়তে আস্ত একটি সাপ বের হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে এই সাপটি আমাদের রাজনৈতিক আঙিনায় অনেকটা স্বাচ্ছন্দে বিচরণ করেছে। সেই সাপটিকেই আবার খাঁচায় ভরে ফেলতেই তাঁর এই সতর্ক নির্দেশনা।

তবে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে , এদেশে খোঁচাখুঁচি কর্মটি কোন কেন্দ্র থেকে এবং কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। মূলতঃ এই ধরনের খোঁচাখুচি করেই জাতির অনেক মূল্যবান সময় ও শক্তির অপচয় করা হয়েছে, এখনও হচ্ছে। গত চল্লিশ বছর এই খোঁচাখুঁচি করা হয়েছে এবং আগামী চল্লিশ বছরের খোঁচাখুঁচির রসদ জোগাড় করা হয়েছে।

এই খোঁচাখঁচি কর্মটির জন্যে প্রাণী জগতে বানরের নামটি প্রথম চলে আসে। কাজেই এই খোঁচাখুঁচি কর্মটি ভালোভাবে সম্পাদনের জন্যে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক সুষমার আড়ালে কিছু বানর বা ‘বান্দর’ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই ‘বান্দর ও বান্দরি ‘রা কখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে খোঁচা মেরেছে , কখনও পারিবার নামক চারাগাছটি উপড়ে ফেলতে চেয়েছে । কখনও বিশাল জনগোষ্ঠির রাজনৈতিক আবেগে মরিচের গুড়া ঢেলে দিয়েছে।

সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমন একটি খোঁচা মেরেছেন এদেশের সবচেয়ে সফল প্রেসিডেন্ট এবং স্বাধীনতার মহান ঘোষককে। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশকারী। ‘

এখানে উল্লেখ্য, বিশেষ চেতনার এই মাংকিগণ এজাতির গর্ব সেক্টর কম্যান্ডারদের অধিকাংশকেই এই ধরনের খোচা মেরেছেন। এদের কথামত স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া পাকিস্তানের চর। মেজর জলীল ছিলেন রাজাকার। একে খোন্দকারও কিছু সত্য কথা বলার কারণে রাজাকার বনে গেছেন। একই কারণে কাদের সিদ্দিকীও রাজাকারের খাতায় নাম লিখিয়েছেন । এরা সবাই যদি রাজাকার হয় তবে বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন , মুক্তিযুদ্ধটি করল কারা ? শুধুমাত্র কলকাতার শরনার্থী শিবিরে পিকনিক করে এই দেশটিকে স্বাধীন করা সম্ভব হয় নি।

এখন এই সব রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মাংকি দিয়ে এদেশের সবচেয়ে সৎ ও সফল একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে খুঁচিয়ে সৈয়দ আশরাফরা চাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকে জাতির সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করে ফেলতে । এদেশে জিয়াকে একটি গালি দিলে শেখ মুজিবের জন্যে অন্ততপক্ষে আরো দুটি গালির সবন্দোবস্ত হয়ে পড়বে । এই সত্য কথাটি সৈয়দ আশরাফরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন, এই জাতির ভাগ্যাকাশ থেকে কালো মেঘগুলি তত তাড়াতাড়ি কেটে যাবে।

এদেশে রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে এই খোঁচকদের অধিকাংশ মতলববাজ ও Fame seeker. সহজ পথে বিখ্যাত হওয়ার মানসে এই ধরনের খোঁচাখুঁচির কাজটি করে থাকে।
নিজেরা ব্যক্তিগত ও যৌনজীবনে সমকামী না হলেও বিদেশী খুঁদ কুড়ার আশায় এরা সমকামীতার পক্ষে কথা বলে। এটির প্রচার ও প্রসারে জীবন উৎসর্গ করার ঘোষণা দিয়ে বসে । বিয়ের বয়স একটু কমালে এরা আঁতকে উঠে। কিন্তু সমাজে যৌন অভিজ্ঞতার গড় বয়েস কমে গেলে এরা ঋষিবত মৌনতা পালন করে। অল্প বয়সে এই অভিজ্ঞতা যদি অকল্যাণের কারণ হয়, তবে এই দুটি ফ্যানোমেনার বিরুদ্ধেই তো অবস্থান নেয়ার কথা। বৈধভাবে কিছু করতে গেলেই এদের আপত্তি , তবে বিকৃত ও অবৈধ হলে কোন সমস্যা নেই।

ইন্ডিয়ান টিভি সিরিয়ালগুলি অনেকদিন যাবত এদেশের সমাজ জীবনে কুটনামি ও পরকীয়া প্রশিক্ষণের ট্রেনিং সেন্টার হয়ে পড়েছে। তার ফলন এবং সেই ফলনের দহনও সমাজের বিভিন্ন অংশে শুরু হয়ে গেছে। সেই দহন বা জ্বালা কমাতে এই পার্ভাটেড গ্রুপ আবার মলম বা ঝাঁড়ফুকের দোকান খুলে বসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক প্রফেসর
পরকীয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করার নসিহত দিয়েছেন । যিনি জাতিকে এই নসিহতটি দিয়েছেন তার স্ত্রীর সঙ্গে কেউ পরকীয়া করতে চাইলে এই ফেইম সিকার প্রফেসর এরশাদ শিকদারের মত সেই নাগরকে স্ত্রীর বিষ্ঠা খাইয়ে মারবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এরা জাতে মাতাল কিন্তু তালে ঠিক।

এদের কথায় কোন প্রজ্ঞা বা সমাজের বাস্তব চিত্র কিংবা মানব চরিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয় না। শুধু চমক সৃষ্টির জন্যেই এই ফেইম সিকাররা কথা বলেন।

ইন্টেলেকচুৃয়াল হাইট যত নিম্নেই থাকুক না কেন- সাংস্কৃতিক ও বিনোদন জগতের এক শ্রেণীর পারফর্মারদেরকে ইন্টেলেকচুয়ালস হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। এদের কেউ কেউ এখন জাতির ভাগ্যবিধাতা সেজে বসেছে। দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফ্যাসিবাদি শাসন প্রতিষ্ঠায় বড় সহায়ক শক্তি হয়ে পড়েছে মেধা ও প্রজ্ঞাহীন এই মাকাল ফলগুলো ।

এরা জানে না, প্রকৃত গণতন্ত্র কাকে বলে। এরা জানে না, আইনের শাসন কাকে বলে। এরা জানে না, বাক স্বাধীনতা কাকে বলে। এরা জানে না, নলেজ বেইসড সোসাইটি কীভাবে সৃষ্টি হয় । মেট্রিক পাশ না করেও এরা একেক জন বিরাট বুদ্ধিজীবী সেজে বসেছে। প্রাক্তন সচিব অাসাফ উদ্দৌলার কথামত, এরা সব তৃতীয় শ্রেণীর ব্যাক বেঞ্চার। অধিকাংশই মায়ে খ্যাদানো, বাপে তাড়ানো বখাটে।
সিঙ্গেল ইউনিটের চমৎকার জাতি রাষ্ট্রটিকে বিভক্ত করার মানসেই এই মাকাল ফলেরা ঘৃণার মেশিন হিসাবে কাজ করেছে। এই কাজটি এরা ভালো করে করতে পারে। এই সব মাংকিদের হাত থেকে দেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে উদ্ধার করাই এখন সময়ের দাবি।