Government provided vitamin death scandal – Bangla

জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা কর্মকাণ্ডে স্বাস্থ্য প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোদ তেজগাঁও কেন্দ্রীয় ওষুধাগার (সিএমএসডি) থেকে দেশের কোথাও কোথাও নকল ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল সরবরাহ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। ক্যাপসুলের এরকমই একটি চালান যায় খুলনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। গত মঙ্গলবার দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন কর্মসূচি। ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেয়ে ওই দিন ও এর পরের দিন অর্থাত্ গত বুধবার দেশব্যাপী হাজার হাজার শিশু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গিয়েছে। গাজীপুরের কাপাসিয়ায় এক শিশু ও খুলনার ডুমুরিয়ায় আরেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অভিভাবকদের দাবি ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খেয়ে তাদের সন্তান অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। তবে এ ঘটনার পর সরকারের তরফ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের সমন্বয়ে গঠিত দল ভিটামিন ক্যাপসুল খেয়ে ওই দুই শিশু মৃত্যু হয়নি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

ফেসবুকের একটি পেজের মাধ্যমে প্রচার করা হয় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক বড়ি খেয়ে শত শত শিশু অসুস্থ ও কয়েকজন মারা গেছে। চট্টগ্রামের একটি মসজিদে শিশু মৃত্যুর খবর মাইকের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এর পরপরই চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলায় ছড়িয়ে পড়ে গুজব। অভিভাবকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা। গত বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর প্রেস ব্রিফিং করে করে জানায় ভিটামিন এ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক বড়ি খেয়ে কেউ মারা যায়নি। এটি নিছক অপপ্রচার ও গুজব।

ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন কার্যক্রম নিয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ের পর এখন প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল কার্যক্রমে কীভাবে নকল ক্যাপসুল আসলো। নোয়াখালীতে তৈরি গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কোম্পানির ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলের বড় চালান জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন কার্যক্রমে প্রবেশ করলো কীভাবে? এ বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দৈনিক ইত্তেফাকে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা নকল ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল সরবরাহের জন্য সরাসরি কেন্দ্রীয় ওষুধাগারকে দায়ী করেছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক এ ব্যাপারে ইত্তেফাককে বলেন, নকল ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল কীভাবে জাতীয় কার্যক্রমে প্রবেশ করলো তা তদন্ত করে দেখা হবে। এর পর নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ এমন যে হাজার হাজার শিশু অসুস্থ হয়েছে তাতে তাদের কী? নকল ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল সম্পর্কে জানতে চাইলে তাদের কেউ কেউ বলেন, বিষয়টি আমার নয়। কেউ কেউ বলেন, যারা দরপত্র গ্রহণের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের সঙ্গে কথা বলেন। কিংবা টেকনিক্যাল কমিটি বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।

মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ওষুধাগারে একটি শক্তিশালী চক্র আছে। তাদের নেটওয়ার্ক সকল সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল এবং সিভিল সার্জন কার্যালয় পর্যন্ত রয়েছে। কোটি কোটি টাকার ওষুধ এবং যন্ত্রপাতি কেনাকাটার নামে পুকুরচুরি করে আসছে এ চক্রটি। ওই চক্রটিই জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য নকল অননুমোদিত কোম্পানির ভিটামিন ক্যাপসুল সরববরাহ করেছে বলে উক্ত কর্মকর্তারা জানান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ বলেন, গ্লোব কোম্পানির তৈরি ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল কীভাবে খুলনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে গেলো তার বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠাতে গত বুধবার নির্দেশ দিয়েছি। এর সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়ার প্রশ্নই আসে না।

ঢাকার কেন্দ্রীয় ওষুধাগার থেকে গত ২৬ ডিসেম্বর সরবরাহকৃত গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির তৈরি ১৯ হাজার ৫শ’ ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল গ্রহণ করে খুলনার সিভিল সার্জন অফিস। (যার মেমো নং এ/৭০তাং ২৬.১২.২০১২)।

জেলার সিভিল সার্জন ডা. গোলাম মোর্তুজা সিকদার বলেন, খুলনার ৯টি উপজেলায় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল সরবরাহ করা হয়েছে। এ ক্যাপসুল জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন দিবসে শিশুদের খাওয়ানো হয়। গ্লোব কোম্পানির তৈরি ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল অন্য কোম্পানির ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ওষুধাগার থেকে সরবরাহ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। খুলনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্টোর কিপার আবু হাসানকে গত বুধবার রাতে ঢাকায় তলব করা হয়েছে। তিনিই সরবরাহকৃত ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল গ্রহণ করেছেন।

ইত্তেফাকের ডুমুরিয়া সংবাদদাতা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডা. অশোক কুমার দাসের কাছে গ্লোব কোম্পানির তৈরি ৪ হাজার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল সিভিল সার্জন অফিস থেকে সরবরাহ করা হয়। তিনি ৩১ ডিসেম্বর এই ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল গ্রহণ করেন। (যার মেমো নং ১১তাং ৩১/১২/২০১২)। ভিটামিন ‘এ’ দিবসে ১৪টি ইউনিয়নে এই ৪ হাজার ক্যাপসুল তিনি সরবরাহ করেছেন বলে ডা. অশোক কুমার দাস জানিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার বলেন, ২০১১ সালে হয়তো গ্লোব কোম্পানির ওষুধ কেন্দ্রীয় ওষুধগার থেকে সরবরাহ করা হতে পারে। এগুলো গত মঙ্গলবারের জাতীয় ভিটামিন-‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনে সরবরাহ করার কথা নয়।

একজন ওষুধবিদ বলেন, ২০১১ সালে যদি কোন ওষুধ জেলা ও উপজেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে তাহলেও ওই ওষুধের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। ঢাকার বাহিরে জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতাল কিংবা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ সংরক্ষণ করে রাখার ব্যবস্থা নেই। সেখানে অব্যবস্থাপনা দেখে ওষুধ রোগীদের মাঝে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ অবস্থায় ওষুধের গুণগত মান না থাকার কথা। ওই ওষুধ খেলে যেকোন জীবন ক্ষতি হতে পারে বলে তিনি জানান।

Source: Ittefaq