Despite blockades Hefazate Islam followers’ stream into the city

বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে ঢাকায় জনস্রোত : ফরিদপুরের ভাঙ্গায় হামলা, পুলিশের গুলিতে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু

হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও মহাসমাবেশ বানচাল করার জন্য পথে হামলা এবং বাধা দেয়া হয়। ঢাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য এলাকার সড়ক, রেল ও নৌপথ বন্ধ করে ঢাকাকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। এসব বাধার পাহাড় ডিঙিয়েই হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে যোগ দেয় প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। রাজধানী বা শহরতলিই শুধু নয়; সুদূর কুমিল্লা, নরসিংদী, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হেঁটে হেঁটে তৌহিদি জনতা যোগ দেয় মহাসমাবেশে। সরকার ও সরকারি দল-আশ্রিত সন্ত্রাসী-মাস্তানদের বাধা এবং যানবাহনের অভাবে যারা ঢাকায় আসতে পারেননি, তারা নিজ নিজ এলাকায় সড়কে বসেই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সমাবেশে আসা লোকজনের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগকর্মীরা হামলা করে। এতে নিহত হয় ছাত্রলীগের এক কর্মী।
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও মহাসমাবেশ ঠেকানোর হীন উদ্দেশে শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার হরতাল ডাকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ ২৭টি সংগঠন। একই সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ২২ ঘণ্টা রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি দেয় গণজাগরণ মঞ্চ। কিন্তু হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি শুরুর আগে শুক্রবার সকাল থেকেই দূরপাল্লার, এমনকি শহরতলি ও সিটি সার্ভিসের বাসগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়। পরিবহন মালিক শ্রমিকরা যৌথ সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস, ট্রাক বন্ধ রাখেন। কথিত নাশকতার আশঙ্কা জানিয়ে বন্ধ রাখা হয় ঢাকামুখী বিভিন্ন রুটের ট্রেনও। চাঁদপুর-বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী লঞ্চ, স্টিমার, ট্রলার বন্ধ করে দেয়া হয়। সরকারি মদতে নানা শক্তি প্রয়োগ করা হয় লংমার্চ ও সমাবেশে আসা লোকজন ঠেকানোর জন্য। এরপরও হাজার হাজার জনতা শহীদ হওয়ার শপথ নিয়ে কাফনের কাপড় পরে হেঁটে নিদারুণ বিড়ম্বনা ও কষ্ট স্বীকার করে ঢাকায় পৌঁছেন; সফল করেন সমাবেশ। লংমার্চ-পরবর্তী মহাসমাবেশ শেষে ফেরার পথেও হামলা, গ্রেফতার শুরু হয়। মাইলের পর মাইল হেঁটে পাঞ্জাবি, পায়জামা ও টুপি-পাগড়িধারী হাজার হাজার মানুষ ঢাকায় পৌঁছেন। তাদের কারও মধ্যে ছিল না ক্লান্তিবোধ; বরং তাদের মধ্যে ছিল ইসলাম এবং রাসুল (সা.) অবমাননার তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ। খোদাপ্রেমী এসব আশেকে রাসুলের স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত ছিল গোটা ঢাকা মহানগরী।
লংমার্চে জনস্রোত ঠেকাতে ঢাকা থেকে দেশের সবক’টি রুটের বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এমনকি ঢাকার বাইরে আন্তঃজেলা বাসগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়। কুমিল্লা-চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ সব এলাকার অভ্যন্তরীণ রুটের বাসও বন্ধ রাখে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা।
৪০ কি.মি. পথ হেঁটে শাপলা চত্বরে : ‘হজ করেছি। ঈমানি দায়িত্ব পালনে রাজপথে নেমেছি। সরকারি লোকজন গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে। তাই ৪০ কিলোমিটার পথ হেঁটে এসেছি,’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এসে হাঁপিয়ে ওঠা ৭৬ বছরের বৃদ্ধ হাজী মো. সামছুল আলম কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে আমার দেশ-এর স্টাফ রিপোর্টার মাহমুদা ডলিকে বললেন এসব কথা। গতকাল আনুমানিক সকাল ৭টা ১৪ মিনিটে রাজধানীর প্রবেশপথ টঙ্গী ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে এ কথা বলেন তিনি। হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার কষ্টের জন্য মুসল্লিরা র্যাব-পুলিশ, সরকারি ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এসব মুসল্লি ঘোড়াশাল, নরসিংদী, কালিয়াকৈর, জয়দেবপুর, টঙ্গীর নতুনবাজার, বোর্ডবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানান তারা। পরনে পাঞ্জাবি-পায়জামা, মাথায় টুপি, হাতে তসবিহ, কণ্ঠে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ জিকির করতে করতে সামসুল আলমের মতো কয়েক লাখ মুসল্লি হেঁটে শাপলা চত্বরের দিকে ছুটছিলেন। টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ফজরের নামাজের পরপরই হেফাজতে ইসলামের ডাকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। মিছিলের সঙ্গে সমানতালে হাঁটতে না পারায়, বিছিন্নভাবে ৫/১০ জন থেকে শুরু করে ৫ হাজার, কখনও ১০ হাজার, কখনও ৫০ হাজার মুসল্লির মিছিল রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেখা যায়। দূর-দূরান্ত থেকে হেঁটে আসা মুসল্লিরা টঙ্গী ব্রিজ, আবদুল্লাপুর চৌরাস্তায় অবস্থান নিয়ে একযোগে যাত্রা করেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ৪০/৫০ কিলোমিটার পথ হেঁটে রাজধানীতে প্রবেশ করেন। সকাল ৬টায় প্রায় ৫ হাজার মুসল্লির একটি মিছিল জামিয়া গাফুরিয়া মাখযানুল উলুম মাদরাসার ব্যানারে এয়ারপোর্ট রোডে পৌঁছে। এতে অংশগ্রহণকারী আলেমরা জানান, ভোর ৫টার পর তারা গাজিপুর চৌরাস্তা থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন। কয়েক হাজার মুসল্লির একটি মিছিল সিলেট গোলাপগঞ্জ হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা আবদুল গাফফারের সভাপতিত্বে ঘোড়াশাল থেকে হেঁটে আসেন। মিছিলে অংশগ্রহণকারী মুসল্লি সাইয়েদুর রহমান, আবদুল্লাহ, জুবায়ের রহমানসহ আরও অনেকে জানান, তাদের ২০টি গাড়ির মধ্যে ৮টি গাড়ি র্যাব-পুলিশ ঘোড়াশালে আটকে দেয়। এরপর নরসিংদী পুলিশ আটকে দেয় আরও ৭টি গাড়ি। তারা হেঁটে রাত ৪টায় টঙ্গীতে পৌঁছেন। এখানে তারা ফজরের নামাজ শেষে শাপলা চত্বরের উদ্দেশে রওয়ানা হন। জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর, কাশিমপুর, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মুসল্লিরা টঙ্গী ব্রিজের ওপর রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন ফেস্টুন হাতে অবস্থান নেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মুসল্লিদের ভিড়। বিভিন্নপাড়া-মহল্লা অলি-গলি থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে জড়ো হয়ে পরিণত হয় বিরাট সমাবেশে। টঙ্গী থেকে বিভিন্ন মসজিদের খতিবদের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল ফজরের পরই রওয়ানা হয়। টঙ্গী ব্রিজের কাছে মুফতি মাসউদুল করীমের নেতৃত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। তারপর সকাল ৮টার দিকে লাখো মুসল্লির মিছিলটি রওয়ানা হয় রাজধানীর উদ্দেশে। এ সময় তারা আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ জিকির করতে করতে অগ্রসর হন। গাজীপুরের দিক থেকে ঢাকামুখী মুসল্লিদের পানি ও শুকনো খাবার পরিবেশন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে স্থানীয় বিএনপি।
ঢাকার প্রবেশ মুখগুলোতে বাধা : ঢাকার মিরপুর, আমিনবাজার, কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা, রূপগঞ্জ, নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে লংমার্চের উদ্দেশে আসা লোকজনের ওপর হামলা চালায় সরকার দলের সমর্থকরা। হেফাজতে ইসলাম নেতারা জানান, শনিবার সকালে রাজধানীর মিরপুর পূরবী সিনেমা হলের সামনে লংমার্চের উদ্দেশে যাওয়া মুসল্লিদের আক্রমণ করে হরতাল সমর্থক ও সরকারদলীয় সংগঠনের কর্মীরা। সেখানে লংমার্চের মধ্যে একটি ককটেল নিক্ষেপ করে হামলাকারীরা। আমিনবাজারে পরিবহন শ্রমিক লীগের হামলার মুখে পড়েন লংমার্চে আসা লোকজন। তবে তারা বাধা পেরিয়ে মতিঝিলের দিকে যাত্রা করেন বলে জানা গেছে।
ঢাকার প্রবেশপ্রথ কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেতু দিয়ে গতকাল ভোররাত থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে কেরানীগঞ্জ, দোহার, নবাবগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর ও দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেতু বন্ধ থাকায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরাসহ সাধারণ মানুষ হেঁটে ও ইঞ্জিন নৌকায় নদী পার হয়ে মতিঝিলে পৌঁছান। তবে পরিবহন শ্রমিক লীগ বুড়িগঙ্গা নদীর বেশিরভাগ খেয়া নৌকা দিয়ে যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখে। বহু নেতাকর্মী হেঁটে সমাবেশস্থলে যান।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর থেকে দক্ষিণাঞ্চল থেকে আটটি লঞ্চ ঢাকায় এসেছে। আর ঢাকা থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে দুটি লঞ্চ। সদরঘাটে প্রবেশ করতে না পারায় কেরানীগঞ্জ ও ফরাশগঞ্জ ঘাটে যাত্রী নামাতে বাধ্য হয়েছে লঞ্চগুলো।
গাবতলীতে এমপি আসলামের নেতৃত্বে সশস্ত্র মহড়া, গুলি : রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের লংমার্চ ও সমাবেশে আসার পথে গাবতলীর প্রবেশপথে বাধা দিয়েছে পুলিশ এবং সরকারি দলের লোক। গতকাল সকালে রাজধানীর গাবতলীর মাজার রোডের সামনে দলীয় ক্যাডারদের নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলাম অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছেন। তার সঙ্গে মহড়ায় ছিলেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। তারা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রবেশপথে ক্যাম্প করেন। একপর্যায়ে মুখোশধারী এক অস্ত্রধারী ক্যাডার শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় সংসদ সদস্য আসলামুল হকের হাতেও অস্ত্র ছিল। তিনি অস্ত্র হাতে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশস্থলে আসা কর্মীদের বাধা দেন। গতকাল সকালে মাজার রোডে কয়েকজন মিডিয়াকর্মীকে তাদের ক্যামেরা চালু না করার পরামর্শ দেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অস্ত্রটিসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রাডো গাড়িতে চড়ে মিরপুরের দিকে চলে যান।
মিরপুরে মাদরাসায় আওয়ামী লীগের তালা : হেফাজতে ইসলামের লংমার্চে ছাত্রদের যোগ দেয়ার কারণে মিরপুর ১৪ নম্বরের একটি মাদরাসায় গতকাল তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে আওয়ামী ক্যাডাররা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল ১২টার দিকে মিরপুর ১৪ নম্বরে অবস্থিত জামেউল উলুম মাদরাসার পরিস্থিতি দেখতে যান কাফরুল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইসমাইল। তিনি সেখানে উপস্থিতি কম দেখতে পেয়ে কিছু না বলে চলে আসেন। এরপর স্থানীয় ক্যাডার আজগরসহ কয়েকজন গিয়ে সাড়ে ১২টার দিকে মাদরাসার গেটে তালা দেয়। পরে অবশ্য আওয়ামী লীগেরই কয়েকজন গিয়ে তালা খুলে দিয়ে আসে।
টঙ্গীতে আওয়ামী ক্যাডারদের ব্যারিকেড : এদিকে সকাল ৯টায় রাজধানীর প্রবেশমুখ টঙ্গীতে আওয়ামী ক্যাডাররা ব্যারিকেড দিয়ে লংমার্চের বিভিন্ন যানবাহন আটকে দেয়ার চেষ্টা করেন। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে পিপলস সিরামিক মোড়ে রাস্তার ওপর দুটি ট্রাক মুখোমুখি রেখে ব্যারিকেড দেয় তারা। ট্রাক মালিক শাহজালাল (কুমিল্লা-ট ২০৮১) গাড়ি রাখতে না চাইলে তাকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ব্যারিকেড ভেঙে মুসল্লিরা গাড়ি নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিলসহ রাজধানীতে প্রবেশ করেন। এ সময় রাজধানীর প্রবেশমুখ টঙ্গী মুসল্লিদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।
আওয়ামী ক্যাডারদের মহাসড়কে ব্যারিকেড সৃষ্টির সংবাদে টঙ্গীতে হেফাজতে ইসলাম ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে তারা স্থানীয় মেঘনা রোড দিয়ে পালিয়ে যায়। প্রায় ২০ মিনিট অবরোধের পর চালকরা ট্রাক সরিয়ে ফেলেন। পাশের ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বিরৈ গ্রাম থেকে এসেছেন মাওলানা নুরুল ইসলাম। তিনি জানান, সরকার সড়ক, নৌ ও রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ায় তারা সারারাত হেঁটে এসেছেন। শুক্রবার রাত ৮টায় গফরগাঁও স্টেশনে আন্তঃনগর অগ্নিবীণা ট্রেন যাত্রা স্থগিত করায় তারা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বহু কষ্টে ঢাকায় যাচ্ছেন।
দাউদকান্দিতে বাধা : এদিকে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার উজানী গ্রাম থেকে আসা শাহাবুদ্দীন জানান, তারা গাড়ি নিয়ে রওয়ানা হলে দাউদকান্দি এলাকায় পুলিশ তাদের নামিয়ে দেয়। পরে হেঁটে মেঘনা-গোমতি সেতু পার হয়ে স্কুটারে মুন্সিগঞ্জের ভবের চর পৌঁছান। সেখান থেকে হেঁটে মেঘনা পার হয়ে সোনারগাঁ থেকে সিএনজি অটোরিকশায় কাঁচপুর এবং কাঁচপুর থেকে একটি কাফেলার সঙ্গে হেঁটে ঢাকায় আসেন। শেরপুর থেকে ঢাকায় আসা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শেরপুর থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস শুক্রবার সকাল থেকেই বন্ধ ছিল। পরে তিনি ‘ভটভটি’তে করে স্কুটার ও লোকাল বাসে ভাঙা ভাঙা জার্নি করে ঢাকায় পৌঁছান। ফরিদপুর আসা ওয়াক্কাস জানান, ফরিদপুর থেকে সরকার লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছে, ফেরি ও লঞ্চ পারাপার বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি লোকাল বাসে করে, ট্রলারে পদ্মা পার হয়ে, মাওয়া ফেরিঘাট থেকে সিরাজদিখান পর্যন্ত ভটভটি, সিরাজদিখান থেকে কদমতলী পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। অনেকে জানিয়েছেন, হরতাল-অবরোধে যেহেতু গাড়ি চলবে না, তাই তারা আগে-ভাগেই ঢাকা শহরে চলে আসেন।
ভাঙ্গায় হামলা-সংঘর্ষে নিহত ১ : ফরিদপুরের ভাঙ্গা বিশ্ব রোডের মোড়ে হেফাজতে ইসলাম ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে নওশের খাঁ নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত ও কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। নিহত নওশের খাঁ নাসিরাবাদ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বলে জানা গেছে। লংমার্চে যোগদানের উদ্দেশে হেফাজতে ইসলামের কয়েক হাজার নেতাকর্মী ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক হয়ে ঢাকার উদ্দেশে গতকাল সকালে রওনা দিয়ে ভাঙ্গার বিশ্ব রোডের মোড়ে পৌঁছলে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেয়া আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা করে। এতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হলে উভয়পক্ষের ৫ জন আহত হয়। পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রথম দফায় সংঘর্ষের পর বিশ্ব রোডের দু’দিকে দু’গ্রুপ অবস্থান নেয়। এরই একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে দু’গ্রুপের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ সংঘর্ষ থামাতে বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। প্রায় আধা-ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশের গুলিতে নওশের খাঁ নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী মারা যায়। আহত হয় কমপক্ষে ১৫ জন। আহতদের ভাঙ্গা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
জাবি গণজাগরণ মঞ্চের নামে চাঁদাবাজি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট ও সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা লাঠি এবং রড নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে মহাসড়ক অবরোধের ভিডিও ফুটেজ নিতে গিয়ে সাভারের একুশে টেলিভিশনের নাজমুল আহসান ও বৈশাখীর প্রতিনিধি আবদুল হালিমকে পিটিয়ে আহত করে তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে চাঁদাবাজরা। গণজাগরণ মঞ্চের নামে বিভিন্ন গাড়ির ড্রাইভারের কাছ থেকে রমরমা চাঁদাবাজি করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। রাত যতই গভীর হয়, ততই ছিনতাই আর চাঁদাবাজিতে মেতে ওঠে ছাত্রলীগের কয়েকশ’ নেতাকর্মী। রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী পথিকের কাছ থেকে মোবাইল, মানিব্যাগসহ প্রয়জনীয় জিসিনপত্র ছিনতাই করে নেয় তারা। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সের কাছ থেকেও টাকা নিতে দেখা যায়। এ সময় রোগীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। রাস্তা দিয়ে তরমুজ বহনকারী ভ্যান যাওয়ার সময় তরমুজ লুটপাট করে ছাত্রলীগের কর্মীরা।
রূপগঞ্জে আ.লীগের হামলা : রূপগঞ্জে হেফাজত কর্মীদের মিছিলে হামলা চালিয়েছে যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা। এতে ১০ লংমার্চ কর্মী আহত হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ও রিকশার গ্যারেজে হামলা চালায় পুলিশ।
কাওড়াকান্দিতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ : মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌ-রুটে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল গত দু’দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়। এতে লংমার্চে যোগ দিতে যাওয়া দক্ষিণাঞ্চলের শত শত মুসল্লি কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হন। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প পথে ট্রলারে করে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছান।
যশোরের কর্মীদের ওপর দৌলতদিয়ায় হামলা : গতকাল সকালে জামিয়া ইসলামিয়ায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতারা শুক্রবারের ওই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। দৌলতদিয়া ঘাটে হামলাকারীদের গ্রেফতার দাবি করেছেন হেফাজতে ইসলাম নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দৌলতদিয়া ঘাটে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হেফাজতের কাফেলার ওপর হামলা করে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা। তারা হেফাজত কর্মীদের পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। একপর্যায়ে হেফাজত কর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে কাফেলা ঢাকা যেতে ব্যর্থ হয়ে যশোর ফেরার পথে ফরিদপুরে ফের আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়। হামলাকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে গাড়ি লক্ষ্য করে। হেফাজত নেতারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের যশোর শাখার নায়েবে আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম, সহ-সেক্রেটারি মাওলানা হারুনুর রশিদ, মুফতি ওবায়দুল্লাহ, কামরুল আনোয়ার নাঈম প্রমুখ।
নরসিংদীতে বাধা : যানবাহন না থাকায় গতকাল সকাল ১১টার দিকে নরসিংদী থেকে হেঁটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন হেফাজতে ইসলামের কয়েক হাজার নেতাকর্মী। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মৌলভীবাজার জেলা হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা ১২০টি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস নিয়ে রওনা দেন। নেতাকর্মীরা ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নরসিংদী শহরের ভেলানগর অতিক্রম করে দগরিয়া এলাকায় পৌঁছলে তাদের বাধা দেয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ফিরে যেতে অনুরোধ করে। তারা গাড়ি ঘুরিয়ে ভেলানগর জেলখানা মোড়ে মহাসড়কে জায়নামাজ বিছিয়ে অবস্থান নেন। অনেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নসিমন ও টমটমে করে সেখান থেকে লংমার্চের উদ্দেশে রওনা হন।
মুন্সীগঞ্জের সব রুট বন্ধ : মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে কোনো বাস চলাচল করেনি। এমনকি মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ নৌপথেও লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। হেঁটেই ঢাকার উদ্দেশে গেছেন লংমাচ কর্মীরা।

Source: AmarDesh