Both ladies getting sidelined (minus 2) in the latest upheavals

নিজেদের কৌশলে দু’জনই মাইনাস হয়ে যাচ্ছেন

49927_sp

অমিত রহমান: যে কোন আড্ডায় প্রথম প্রশ্ন দেশটা যাচ্ছে কোথায়? দ্বিতীয় প্রশ্ন শেখ হাসিনা কি চাচ্ছেন? তৃতীয় প্রশ্ন খালেদা কি পারবেন ঘুরে দাঁড়াতে? চতুর্থ: বিকল্প কোন শক্তির কি উত্থান ঘটবে? আরেকটু এগিয়ে গিয়ে অনেকেই বলেন, সঙ্কট সমাধানের পথ তো সামনে দেখা যাচ্ছে না। সুড়ঙ্গের ওপারে কোন আলো নেই, আলো ছাড়া একটা জাতি টিকে থাকে কি করে? তাই একটা না একটা কিছু হবে এমন আশাবাদও শোনা যায় আড্ডা থেকে। নতুন হিসাব নিকাশ শুরু হয়েছে হেফাজতকে নিয়ে। রাতে দিনে হরতাল ডেকে সরকার সমর্থকরা হেফাজতের যাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিল। বাস, ট্রাক, লঞ্চ, ফেরি আর রেল বন্ধ তো নতুন কোন কাহিনী নয়। এর আগেও হয়েছে ভিন্ন কৌশলে। হেফাজত প্রমাণ করেছে তারা একটা শক্তি। কেউ কেউ অবশ্য ভিন্ন হিসাব মেলাতে চেয়েছিলেন শুরুতে। তারা জামায়াত শিবিরের এক্সটেনশন বলে এক ধরনের ফতোয়া দিয়ে বসেছিলেন। এখন তারা বলছেন, তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যায় না হেফাজতকে। হেফাজতের লংমার্চ নতুন এক বার্তা নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। বিদেশী সংবাদ মাধ্যমও হেফাজতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাদের কৌতূহল এটা কি নয়া কোন ইসলামী বিপ্লবের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ নিয়ে চটজলদি কোন উত্তর হয়তো এখনই পাওয়া যাবে না। তবে ভণ্ড আর লুটের রাজনীতির খেলা বন্ধ না হলে মানুষ সে দিকে ঝুঁকতে পারে এমনটা বলা যায় অনায়াসে। একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজে ধর্ম আফিমের কাজ করে। দেশে দেশে আমরা তাই দেখে এসেছি। প্রায় দু’মাস আগে একটি লেখায় ইঙ্গিত করেছিলাম তাহরির স্কোয়ারের বিপ্লব ইসলামী ব্রাদারহুডকে ক্ষমতায় এনেছে। বাংলাদেশে শাহবাগ গণজাগরণ কাকে ক্ষমতায় আনবে। এখন তো কিছুটা খোলাসা হয়ে গেছে কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব জানালা খুলে দিয়ে বসেছেন। একটি বন্ধ হয়। আরেকটি খুলে যায়। জামায়াত-শিবিরকে সাইজ করতে গিয়ে বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানালেন সংঘাতে। এটা কি সঠিক কৌশল। যুদ্ধাপরাধের বিচার কৌশলে হলেও বিএনপি দাবি করে আসছিল। বিএনপিকে হিট করার পর এই দুই শক্তি মাঠে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্লগার ইস্যু হেফাজতকে সামনে এনেছে। মাত্র তিন বছর আগে এই সংগঠনটি জনসমক্ষে এসেছে। এর সঙ্গে জড়িত অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে ৯৩ বছর বয়সী আল্লামা আহমেদ শাহ শফি কোনদিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। মাদ্রাসার ছাত্র আর আলেমদের মধ্যে তার কি যে প্রভাব রয়েছে তা লংমার্চ দেখলেই বোঝা যায়। শত ইন্ধন আর প্রলোভনের মধ্যেও তিনি হটকারিতাকে বেছে নেননি। চাপ ছিল তাকে ১৩ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাপলা চত্বরে বিপ্লবের সূচনা করতে। সতীর্থদের তিনি বলেছেন, সরকারকে সময় দিতে হবে। দেখি না সরকার কি করে? একমাস পর ভাববো কি করা যায়। শাহবাগের গণজাগরণ বিতর্কিত হয়েছে স্থায়ীভাবে বসার কারণে। ব্লগার রাজিব হত্যার পর প্রতিবাদ জানিয়ে উঠে গেলে এর প্রভাব থাকতো অনেকদিন। এটার দরকার ছিল। দলীয় ডিটেকশন উপেক্ষা করে ইমরান এইচ সরকার যদি স্থির থাকতে পারতেন তাহলে অন্য ইতিহাস হতে পারতো। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেমনটা হয়েছিল জাসদের। বঙ্গবন্ধুকে উৎখাত করতে গিয়ে হটকারিতার পথ বেছে নিয়েছিল জাসদ। মাঝখান দিয়ে অন্য শক্তি সুযোগ নিয়ে ইতিহাস পাল্টে দেয়। এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা কি ভাবছেন কেউ বলতে পারবে না। একটাই দৃশ্যমান তিনি যে করেই হোক ক্ষমতায় থাকতে চান। এ জন্য দেশী-বিদেশী শক্তির সহযোগিতায় গাদ্দাফি কিংবা আসাদের পথকে বেছে নিচ্ছেন। এটা তো ভুল পথ। মনে করতে হবে তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। দিনের শেষে তার কোন ভুলের জন্য যদি দেশটার গায়ে কোন আঁচড় লাগে তাহলে তাকেই দায়ী করবে জনগণ। ইতিহাসও তাকে ক্ষমা করবে না। বর্তমান খেলাটা নিছক ক্ষমতার যাওয়ার লড়াই নয়। এর পেছনে অন্য খেলা রয়েছে। যে খেলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশ যাতে ঘুরে দাঁড়াতে না পারে। বিরোধী নেত্রী বেগম জিয়াই বা কি করছেন? তিনি কি ভুল পথে হাঁটছেন না। তার মনে কষ্ট থাকতে পারে আগামী নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসার পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য। তিনি তো দেখছেন কঠিন হয়ে যাচ্ছে রাজনীতি। এই অবস্থায় তিনি একের পর এক হরতাল দিচ্ছেন। হরতালে সরকারের ক্ষতি যতটা না হয় তার চেয়ে বেশি হয় দেশের। দেশটার বারোটা এমনিতেই বেজে গেছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য হাসিনা মরিয়া। খালেদাও মরিয়া হবেন। তবে ভিন্ন কৌশল থাকা দরকার। মানুষ যদি রাজনীতির প্রতি আস্থা হারায় তখন বিপদ বাড়বে বাংলাদেশের। যে চেতনা সামনে নিয়ে দেশটি যাত্রা শুরু করেছিল তা শুধু ব্যাহতই হবে না। ওলোট-পালোট হয়ে যেতে পারে সব কিছু। ব্যর্থ রাষ্ট্রের স্থায়ী তকমা পেয়ে যেতে পারে। সরকার হটাতে খালেদা যদি কৌশল পরিবর্তন না করেন তাহলে কিন্তু তারও বিপদ বাড়বে। এমনিতেই বাজারে জল্পনা রয়েছে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এই অবস্থায় তিনি কি করবেন? তিনিও যদি শেখ হাসিনার মতো মনে করেন আমি যখন নাই তখন অন্যদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আপাতত দৃশ্যপট থেকে বিদায় নেবো তখন কি কেউ অপেক্ষা করবে। কোন কালে, কোন দেশে কি কেউ অপেক্ষা করেছে। শূন্যস্থান পূরণ হবেই। আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে নেপথ্যে কথা হয়নি তা কিন্তু নয়। যখনই কথা হয়েছে তখনই অন্য একটি শক্তি মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছে। তারা কোন অবস্থাতেই এই দুই শক্তির মধ্যে সমঝোতা চায়নি বা চায় না। যারা গণজাগরণ মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি নিষিদ্ধ করেছে ভিন্ন কৌশলে। শেখ হাসিনা এটা জানেন। কিন্তু বলতে পারছেন না। বঙ্গবন্ধুও হজম করেছিলেন। সময় মতো অ্যাকশনে যেতে পারেননি। পরিণতির কথা স্মরণ না করাই ভাল। একই শক্তি শেখ হাসিনাকে ঘিরে ফেলেছে। তার মন কাঁদে দেশের জন্য- অনেকেই হয়তো তা বিশ্বাস করবেন না, আমি বিশ্বাস করি। সাহস তাকে করতেই হবে বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশের কথা ভেবে। একটি প্রশ্ন শেখ হাসিনাকে এই লেখার মাধ্যমে করতে চাই-তিনি কি কখনও সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চনের ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ দেখেছেন? আমন্ত্রিত অতিথি প্রশ্নের জবাব না দিতে পারলে তিনি দর্শক কিংবা অন্য কোন বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা নিতে পারেন। এখানে দর্শক হচ্ছেন জনগণ। জনগণ কি চায় তাতো প্রধানমন্ত্রী জানেন। চার দেয়ালে বন্দি হয়ে গেলে অবশ্য অনেক কিছুই অজানা থেকে যায়। বাস্তবতা উপেক্ষিত হয় বারবার। ওয়ান-ইলেভেনের নায়করা মাইনাস টু করতে চেয়েছিলেন। পারেননি নানা কারণে। এখন তো দেখা যাচ্ছে দু’জনই মাইনাস হয়ে যাচ্ছেন রাজনীতির কূটকৌশলে। পলাশীর সঠিক ইতিহাস আমরা কিছুটা জেনেছি অনেক পরে। এখনও গবেষণা চলছে। বাংলাদেশের চলমান সঙ্কট কেবলমাত্র ক্ষমতা দখলের লড়াই যে নয় তা দুই নেত্রী যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন ততই মঙ্গল। সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ এখন বুঝতে পারছেন কি ভুল তিনি করেছিলেন। আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন এখন তিনি সরে যেতে চান। কিন্তু পারছেন না। তার প্রয়োজনে নয় অন্যদের প্রয়োজনে তাকে ক্ষমতায় থাকতে হচ্ছে। বড্ড বিলম্বিত বোধোদয়। ইতিহাসের বিচার এতোটাই নির্দয় এবং অনিবার্য যে তা শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতার মোহে বেমালুম ভুলে যায়। দেশে দেশে আমরা দেখতে পাই সুশাসন যখন বিদায় নেয়-তখন কুশাসন ভর করে। বিনয়ের মুখ তখন বদলে যায় ঔদ্ধত্যের রক্তচক্ষুতে। তখন শাসকগোষ্ঠী মানুষের আস্থা হারায়।

Source: Manab Zamin