আজমেরীর ‘১৮ খুনের’ কথা ফাঁস করবেন আইভী

selina

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের ভাই নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান ১৮টি খুন করেছেন। আজমেরীর এসব খুনের কথা তিনি সবার সামনে তুলে ধরবেন। এ জন্য তিনি মৃত্যুকে বরণ করতেও প্রস্তুত।

আজ সোমবার দুপুরে বন্দরের দড়িসোনাকান্দা এলাকায় মদনগঞ্জ থেকে নবীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজের উদ্বোধন করার সময় আইভী এসব কথা বলেন। গত মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন নিয়ে একাত্তর টেলিভিশনের লাইভ টক শো ‘একাত্তর সংযোগে’ সেলিনা হায়াত্ আইভীর সঙ্গে সাংসদ শামীম ওসমানের বাগবিতণ্ডা হয়। সেখানে আইভীর ব্যক্তিজীবন এবং পরিবারকেও আক্রমণ করেন শামীম। অনুষ্ঠানের মাঝবিরতি এবং শেষে উত্তেজনা আরও বাড়ে। বিরতির সময়ের দৃশ্য সরাসরি দর্শকেরা দেখতে না পেলেও পরে তা  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

আমি তথাকথিত নারী নই

আজকের সড়ক নির্মাণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আইভী টক শোতে শামীম ওসমানের দেওয়া বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন।

আইভী বলেন, তিনি যাতে নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা না বলেন সে জন্য শামীম ওসমান তাঁকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। সুযোগ পেলেই অপমান করছেন। তবে তিনি কোনো হুমকি ধমকিতে মাথা নোয়াবেন না বলে সাংবাদিকদের জানান।

মেয়র বলেন, ‘আমি তথাকথিত নারী নই যে তার (শামীম ওসমান) কথা শুনে দল ছেড়ে চলে যাব বা ইনঅ্যাকটিভ হয়ে যাব। আমি নাজমা রহমান নই যে তার কথা শুনে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে চলে যাব। আমি এস এম আকরাম নই যে তার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দল ছেড়ে চলে যাব। আমি গিয়াস উদ্দিন না যাকে বাধ্য করা হয়েছে অন্য দলে চলে যেতে। কামাল মৃধাকে মারা হয়েছে, মামলা দেওয়া হয়েছে, দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। আমি আরাফাত নই। আমি আনোয়ার সাহেব নই যে আমাকে নানান ধরনের কথা বলা হবে, লোভ দেখানো হবে আর আমি অন্য দলে চলে যাব। আমি আওয়ামী লীগে আছি, আওয়ামী লীগে থাকব। আওয়ামী লীগে থেকেই চাঁদাবাজির, সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করব।’

আজমেরী ওসমান ১৮টি খুন করেছেন

আজমেরী ওসমান ১৮টি খুন করেছেন উল্লেখ করে আইভী বলেন, ‘আজমেরী ওসমান যে এই অল্প বয়সে ১৮টা খুন করেছে তার হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা আমি অবশ্যই তুলে ধরব। এতে যদি আমার মৃত্যু হয়, তবে আমি মৃত্যুকেই বরণ করে নেব। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, আমার মৃত্যুর পর আমার জানাজায় অংশ নিয়ে আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার মৃত্যুর পর আমার লাশটা যাতে আমার বাবার পাশে দাফন করা হয়, সেটাও আমি বলে গেলাম।’

খুন-চাঁদাবাজির কথা না বলার জন্য অপমান করা হচ্ছে

আইভী বলেন, ‘এলজিইডি, ড্রেজার, ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট, পিডব্লিউডি সব সরকারি কাজের নিয়ন্ত্রণ নারায়ণগঞ্জের গডফাদারের দখলে। সেখানে টেন্ডার শিডিউল কেনা তো দূরের কথা, তার লোকের বাইরে কাউকে সেখানে যেতেও দেওয়া হয় না। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের টেন্ডার নিয়ে এসব কখনো হয় না। কারণ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে স্বচ্ছ টেন্ডারের মাধ্যমে যে কাজ পায়, সে-ই কাজ নেয়। যদি কোনো কাজের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তাহলে আমি এলাকাবাসীর জুতা নেওয়ার জন্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকব। আমার কাউন্সিলরদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করার জন্য, আমি যাতে খুন-চাঁদাবাজির কথা না বলি, এ কারণে আমাকে এভাবে অপমান করা হচ্ছে।’

তার মা লজ্জায় মুখ লুকাত

টক শোতে শামীম ওসমানের আচরণ উল্লেখ করে আইভী বলেন, ‘আমি জানতে চাই, যে গডফাদার একজন নারীকে এভাবে লাঞ্ছিত করছে সে কি কোনো মায়ের পেট থেকে জন্ম নেয়নি ? তার কি কোনো মেয়ে নাই? তার কি কোনো বউ নাই, বোন নাই? তাহলে কীভাবে একজন নারীকে সে বেইজ্জতি করছে এইভাবে? তাকে যে মা জন্ম দিয়েছে, সেই মা যদি সেদিন সামনে থাকত তাহলে সে লজ্জায় মুখ লুকাত।’

গডফাদারের কাছ থেকে চরিত্রের সার্টিফিকেট নিতে হবে না

মেয়র আইভী নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমানের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাকে যতই বলেন না কেন আমি দুশ্চরিত্রের নারী, আমি দুশ্চরিত্রের নারী হয়েই নারায়ণগঞ্জ শহরে কাজ করব, আপনার মতো গডফাদারের কাছ থেকে আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট নিতে হবে না। যতটা খারাপ কথা আপনি আমাকে বলবেন, ততটা খারাপ কথা আপনার মেয়ের ওপরে ফলবে। আমারও সন্তান আছে। তাই আমি আপনার মেয়েকে কিছু বলব না। আমার বাপকে নিয়ে আপনি যেসব কথা বলেছেন, আমি আপনার বাপকে নিয়ে সে কথা বলব না। আপনি আমার দাদাকে নিয়ে যেসব কথা বলেছেন, আমি আপনার দাদাকে নিয়ে সেসব কথা বলব না। তিনি বলেছেন আমার রক্ত খারাপ। মানলাম আমার রক্ত খারাপ। আর আপনার রক্ত রাজকীয়। আপনি রাজকীয় রক্ত নিয়ে এই শহরের মানুষের টাকা শোষণ করে, নারায়ণগঞ্জের শত শত ছেলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে, চাঁদাবাজ বানিয়ে সন্ত্রাসী বানিয়ে আবার তাদের ক্রসফায়ারে হত্যা করে সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, নিজেকে রাজকীয় রক্তের লোক দাবি করেন, তাহলে এমন রাজকীয় রক্ত আমার দরকার নেই। দাউদকান্দি থেকে তারা কীভাবে এসেছিল, কীভাবে শত কোটি টাকার মালিক হলো, তা নারায়ণগঞ্জবাসী জানে। আমি এটা বলতে চাই না।’

Source: Prothom-Alo