কলসিন্দুরের মেয়ের গোলেই শিরোপা বাংলাদেশের

Bangladehsi players celebrate a goal during the final of AFC U-14 Girls' Regional Championship, played in Lalitpur, on Sunday, October 20, 2015. Courtesy: Goalnepal.com
Bangladehsi players celebrate a goal during the final of AFC U-14 Girls’ Regional Championship, played in Lalitpur, on Sunday, October 20, 2015. Courtesy: Goalnepal.com

নেপাল থেকে দারুণ এক খবরই উপহার দিল বাংলাদেশের ১৪ বছর বয়সী মেয়েরা। হিমালয় কন্যা নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে ‘হিমালয় জয়’ সম্পন্ন তাদের। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার নতুন চ্যাম্পিয়ন এখন বাংলাদেশ।
ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত অঞ্চল কলসিন্দুরের ১০ ফুটবলার দিয়েই সাজানো বাংলাদেশের ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের জাতীয় দল। সে কারণেই হয়তো জাতীয় দল হলেও এই দলের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে কলসিন্দুর গ্রামের নাম। দেশের প্রত্যন্ত এক অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত পরিবার থেকে উঠে আসা মেয়েরাই যে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৪ দলের প্রাণভোমরা। তাই বলে এই দলে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের ভুলে যাবেন না যেন। এই দলে আছেন রাজশাহী, রংপুর, রাঙামাটি, টাঙ্গাইল ও সাতক্ষীরার আরও ৮ ফুটবলার।
আজকের ফাইনালটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল সেই এপ্রিলে। এপ্রিলেই প্রতিযোগিতার অন্যান্য ম্যাচে দুরন্ত দাপট দেখিয়ে ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। ভুটানকে হারিয়েছিল ১৬-০ গোলে, ভারতের সঙ্গে খেলাটা হয়েছিল ১-১ গোলে ড্র। সেমিফাইনালে এশীয় ফুটবলের অন্যতম বড় শক্তি ইরানের মেয়েদের বিপক্ষে বাংলাদেশ জেতে ২-১ গোলে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে যে ইরানকে কোনো দিনই হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। নেপালের বিপক্ষে ফাইনালের দিনই প্রলয়ংকরী এক ভূমিকম্প ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে নেপালকে। খেলাটাও স্থগিত হয়ে যায়। আট মাস পর অনুষ্ঠিত ফাইনালে বাংলাদেশের মেয়েরা নেপালকে হারিয়ে প্রমাণ করল অনেক বড় কিছুকে লক্ষ্য বানিয়েই উঠে আসা তাদের।
কাঠমান্ডুর শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই ফাইনালে আগাগোড়াই ছিল বাংলাদেশের প্রাধান্য। প্রথম একাদশে কলসিন্দুরের ৬ খেলোয়াড়কে নিয়ে মাঠে নামা বাংলাদেশ প্রথম থেকেই আক্রমণে আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে ফেলে নেপালি দলকে। ম্যাচের ১৬ মিনিটে কলসিন্দুর গ্রামেরই মেয়ে মারিয়া বাম প্রান্ত থেকে দারুণ এক শটে পরাভূত করে নেপালি গোলরক্ষককে।
প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যেতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু অধিনায়ক কৃষ্ণা রানি সরকার নেপালি গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। তবে কৃষ্ণা পুরো ম্যাচে ছিলেন রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য। অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ডের মর্যাদা তিনি রেখেছেন দারুণভাবেই। কৃষ্ণা অবশ্য নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন দ্বিতীয়ার্ধের তিনি প্রায় একক প্রচেষ্টায় নেপালি ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে বক্সে ঢুকে তিনি যে শটটি নেন, তা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৭০ মিনিটের খেলায় বাংলাদেশের রক্ষণভাগ হয়ে গিয়েছিল চীনের প্রাচীর। নেপালি ফরোয়ার্ডদের আক্রমণগুলো তারা ফিরিয়ে দিয়েছেন দেয়াল তৈরি করেই।
হিমালয়ের দেশে গিয়ে এর চূড়া ছোঁয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। সেই প্রতিজ্ঞা তারা রাখল দুর্দান্ত খেলেই। একটা স্বপ্ন নতুন স্বপ্নের জন্ম দেয়। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ প্রতিযোগিতায় শিরোপা জিতে আরও বড় স্বপ্নে চোখ রাখুক মেয়েরা। শুভ কামনা সব সময়ই আছে তাদের জন্য।

আজ ফাইনালে যারা যারা খেলেছেন: শামসুন্নাহার, রুমা, নার্গিস, শিউলি, সানজীদা, মৌসুমী, কৃষ্ণা (অধিনায়ক), মার্জিয়া, স্বপ্না, মারিয়া, তাসলিমা।