হাড্ডি আর চিকেন খাওয়ার গল্প

যুবলীগের ষাটোর্ধ সভাপতি এবং বর্তমান শাসক পরিবারের অত্যন্ত নিকটাত্মীয় জনাব মোহাম্মদ ওমর ফারুক দারুন আক্ষেপ করে বলেছেন , ” এমপি -মন্ত্রীরা চিকেন খায় , আর আমরা হাড্ডিটাও পাই না । অর্থাৎ কপালগুণে কেউ চিকেন পাচ্ছেন , কেউবা খালি হাড্ডি পাচ্ছেন আর কেউবা হাড্ডিও পাচ্ছেন না । অবশ্য এই মন্ত্রী এমপিরা বিচারপতি খাইরুল হকের প্রতি তাদের বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাতে পারেন। এই বিচারপতি মহোদয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে ২০৪১ সাল পর্যন্ত এই ভাবে নির্বিঘ্নে মন্ত্রী এমপিদের ‘চিকেন’ খাওয়ার সুবন্দোবস্ত করে গেছেন । তার এই মন্তব্য সারা দেশের মানুষের আক্ষেপ আর আগ্রহ উভয়টিই বাড়িয়ে দিয়েছে । দেশের সকল মানুষ নিজ নিজ মাথা খাটিয়ে এই চিকেন আর হাড্ডির তুলনামূলক সাইজটি বের করার চেষ্টা করছে । হাড্ডির সাইজটি মাঝে মাঝে গোচরে আসে । চিকেনের সাইজ বা আকার কল্পনা করতেও কষ্ট হয় । গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির তিন হাজার টাকা বেতনের কর্মচারী থেকে হলমার্কের মালিক বনে গিয়েছেন জনৈক তানভীর । তিনি সোনালী ব্যাংক থেকে যে হাড্ডিটি কুড়িয়ে পেয়েছিলেন – তার পরিমাণ ছিল মাত্র চার হাজার কোটি টাকা । সঙ্গত কারণেই এই হাড্ডিটিকে পিনাটের সাথে তুলনা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত । এতগুলি বেফাঁস কথা বলার পরেও এই ভদ্রলোকের চাকুরী এখনও কীভাবে টিকে আছে তা অনেকের বিস্ময়ের উদ্রেক করে । তিনি যে শুধু বিরোধী দলের গোলপোস্টে বল ঢুকিয়েছেন তা নয় , এযাবৎ বেশ কিছু মারাত্মক আত্মঘাতী গোলও তিনি দিয়েছেন । গত আট দশ বছরে দেশ থেকে মোট কত টাকা বেরিয়ে গেছে , বিভিন্ন রাষ্টায়াত্ব ব্যাংক থেকে কত টাকা লোপাট হয়েছে সেই হিসাবটি নিলে এই চিকেনের সাথে সাথে এই সব হাড্ডি গুড্ডির ওজন এবং আয়তন সম্পর্কে সামান্য একটু আন্দাজ করা সম্ভব হবে । এই গুলির মধ্যে আবার কোনটি যে চিকেন আর কোনটি যে হাড্ডি – তা ঠাহর করাও কষ্টকর । শেয়ার বাজার থেকে কারসাজির মাধ্যমে এক লাখ কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। মগজটাকে একটু ঠান্ডা করে আত্মস্থ করার চেষ্টা করুন , এই এক লাখ কোটি টাকার চিকেনটি আসলেই কতটুকু বড় ছিল ? এক লাখ কোটি টাকা মানে হলো , এক লাখ কোটিপতির টাকা একত্র করলে যা হবে তাই । এর মাধ্যমে শেয়ার বাজারের ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে দেয়া হয়েছে । রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাংকগুলি খালি হওয়ার বেশ কিছু রিপোর্ট পত্র পত্রিকায় এসেছে । কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে । সবচেয়ে মজার বিষয় হলো , এই সব ফিগারের কোনটিই দেখবেন হাজার কোটি টাকার নিচে নেই । প্রথম আলো পত্রিকা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি চারদলীয় জোট সরকারের প্রতি যতটুকু নির্দয় ছিল , ঠিক ততটুকুই সহানুভূতিশীল হয়েছে বর্তমান সরকারের প্রতি । এরাও মাঝে মাঝে মুখ খুলেন । তবে কতটুকু বাধ্য হয়ে কিংবা চাপ বালচক্ষু লজ্জায় পড়ে এরা সরকারের বিরুদ্ধে কোন তথ্য তুলে ধরে , তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না । গত ২৪শে জুন ২০১৬ তে সিপিডির একটি গবেষণা কর্ম প্রথম আলো তুলে ধরে । রিপোর্টটিতে দেখা যাচ্ছে যে ২০০৪ সাল থেকে দেশ থেকে টাকা পাচারের গ্রাফটি উর্ধমুখী হয়ে পড়েছে । ২০০১ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত গ্রাফটি কেমন ছিল , তার তুলনামূলক একটা চিত্র দেখালে রিপোর্টটি আরো পূর্ণ হতো । কিন্তু তুলনামূলক সেই চিত্রটি দেখিয়ে সেই সময়কার শাসক দল বিএনপি-জামায়াত জোটের এত বড় উপকার হয়তোবা প্রথম আলো- সিপিডি করতে চায় নি । রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা হয়েছে , গত দশ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়েছে সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা । গত দুই বছরে সুইস ব্যাংকে হিসাব বেড়েছে দ্বিগুণ । এই দুই বছর কারা চিকেন খেয়েছে , কারা হাড্ডি খেয়েছে আর কারা কিছুই খেতে পারে নি তা বের করার জন্যে খুব বড় বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। কিছু রাস্তাঘাট আর উড়াল সেতু বানিয়ে জাতিকে যে ভেলকি দেখানো হচ্ছে , তার মাধ্যমেই এই সব ব্যাংকের একাউন্ট ফুলে ফেপে ওঠছে – তাতে কোন সন্দেহ নেই । নেপোলিয়ন যথার্থই বলেছেন , অসৎ লোকের কর্মকান্ডে সমাজ ধ্বংস হয়না । সমাজ ধ্বংস হয় ভালো লোকের নিষ্ক্রিয়তায়। আমাদের ক্ষেত্রেও হুবহু তাই হচ্ছে । জানি না এ থেকে পরিত্রাণের উপায় টি কী হবে ?

1 COMMENT

  1. Your observations are absolutely correct. Thieves are making money out of projects some of which are not even necessary.

Comments are closed.