নারীর আচ্ছাদন – ছেঁড়া জাল থেকে শত কোটি টাকার হিরের পোশাক

দুটি নারী আচ্ছাদন সম সাময়িক ইতিহাসে তুমুলভাবে আলোচিত হয়েছে কিংবা সামনে আরো হবে । এই দুটি আচ্ছাদনের একটি পরিধান করেছিলেন ১৯৭৪ খ্রীষ্টাব্দে উত্তরবঙ্গের বাসন্তী । অন্যটি পরিধান করেছেন ২০১৬ খ্রীষ্টাব্দে ইন্ডিয়ার ধনকুবের মুকেশ আম্বানীর কন্যা ইশা আম্বানী । পরিধানকারীনিদের সামাজিক অবস্থান , পরিস্থিতি, প্রেক্ষাপট কিংবা তৃপ্তি-অতৃপ্তির মাত্রা ভিন্ন হলেও পরিণাম এসে ঠেকেছে একই জায়গায় – পোশাক হিসাবে দুটোই শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হয়েছে । অপটিক্যাল সাইন্স কিংবা আলোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এবং নারী শরীরের স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় মাছ ধরা ছেড়া জালের ছিদ্র আর হিরার পোষাকের ছিদ্রের মধ্যে কোন তফাত নেই । আকর্ষণের মাত্রা ভিন্ন হলেও দুটি ফ্যানোমেনাই নারী শরীরকে অত্যন্ত ভালগার বা উৎকটভাবে উন্মুক্ত করেছে । একটিতে কালপ্রিট ছিলো রাষ্ট্রশক্তি বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা , অন্যটিতে কালপ্রিট হয়েছে সমাজব্যবস্থা । সৃষ্টির সেরা মানবজাতির জন্যে উভয় আচ্ছাদনই বেদনাময় এবং কলংকময় ।

মাত্রাতিরিক্ত লুটপাটের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ যেমন করে এই বাসন্তীদেরকে মাছ ধরা জাল পরিধান করতে বাধ্য করেছিল , নৈতিকতার দুর্ভিক্ষ তেমনি করে ইশা আম্বানীদের বড় বড় ছিদ্রযুক্ত হিরের পোশাক পরিধান করাচ্ছে । মাছ ধরার ছেড়া জালটি যেমন করে বাসন্তীর লজ্জা ঢাকতে ব্যর্থ হয়েছিল , নব্বই কোটি টাকার পোশাকটিও ইশা আম্বানীর শরীর ঢাকতে তেমনভাবেই ব্যর্থ হয়েছে ।

ইন্ডিয়ার ধনকুবের মুকেশ আম্বানীর কন্যা ইশা আম্বানীর হিরের পোশাকটি সঙ্গত কারণেই নেট জগতে ভাইরাল হয়ে পড়েছে । ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পেছনে আদিম এই সুড়সুড়িটি বা পোশাক হিসাবে এই আচ্ছাদনের ব্যর্থতাটুকুই অনেকাংশে দায়ী ।

অত্যন্ত দামি এই পোশাকটি পরে দুনিয়ার সবচেয়ে আহ্লাদি মেয়ে ইশা যখন তার বিখ্যাত বাবার সম্মুখে উপস্থিত হবেন , তখন বাবা হিসাবে মুকেশ আম্বানীর চোখে ও মনে কি রাসায়নিক বিক্রিয়া কিংবা ভাবের উদয় হবে জানি না । তিনি কি মাথা চাপড়িয়ে বলবেন , হায়রে কপাল ! নব্বই কোটি টাকার পোশাক পরানোর পরেও এই অভাগাকে নিজের মেয়ের শরীরের স্পর্শকাতর জায়গাগুলি অবলোকন ( uneasy acceptance )করতে হয় !
নাকি অন্য এক গর্বিত পিতা মহেশ ভাটের মত গর্ব করে বলবেন , পূজা আমার মেয়ে না হলে তাকেই বিয়ে করতাম !
এতে কোন সমস্যা ছিল না । ধর্ষণের দেশ হিসাবে সদ্য পরিচিতি পাওয়া ( এজন্যে অমিতাভ বচ্চনও আফসোস করেছেন ) এই দেশটির সমস্যা অন্য জায়গায় । আল্ট্রা স্মার্ট এই মহেশ ভাট বা অত্যন্ত সফল এই মুকেশ আম্বানীর দেশ থেকেই কিছুদিন পর পর নরপশু বাবার হাতে নিজ নিজ মেয়ের সর্বনাশের রোমহর্ষক খবর পাওয়া যায় । সেগুলি শুনে মানবতা আৎকে ওঠে , মানবসভ্যতা লজ্জায় মুখ ঢাকে । ঐ সব নরপশু বাবা তৈরি করতে এ ই মহেশ ভাট কিংবা মুকেশ আম্বানীরা সরাসরি ভূমিকা রাখছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই ।

সেই দেশটির সাথে রক্তের সম্পর্ক পাতাতে পারলে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সহ সব কিছু বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত আমাদের শাহরিয়ার কবির গণ । আশা করা যায় যে এই সম্পর্কটি আরেকটি পোক্ত করতে পারলে (মাঝখান থেকে চীন বাগড়া না দিলেই হয় ) এদেশেও অনেক মহেশ ভাটের সৃষ্টি হবে , যারা নিজেদের ঔরসজাত মেয়েকে বিয়ে করতে না পেরে মিডিয়ার সামনে বসে আফসোস করবেন । আমাদের মিডিয়া সগৌরবে সেই সব কাহিনী ছাপাবে এবং জাফর স্যারেরা এই সব স্মার্ট এবং ডিজিটাল বাবাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবেন । কখনও কখনও হাল্কা অভিমানের কারণে রোমান্টিক প্রতিবাদে সস্ত্রীক বৃষ্টিতে ভিজবেন । কিন্তু অগণিত আনকুথ বাবা কর্তৃক মেয়ে ধর্ষিতা হওয়ার বেরসিক কাহিনী কিংবা মাঝে মাঝে বদরুলদের হাতে খাদিজাদের কোপানি দেখে চুপ মেরে যাবেন । পেটে ডুবুরি নামিয়ে দিলেও এই সব স্যারদের মহান ও বিশাল হৃদয়ের কোথাও তখন তনু বা খাদিজাদের জন্যে সহানুভূতির ‘স’ অক্ষরটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না ।

বদ নসিবের কারণে মাঝে মাঝে দুয়েকজন বদরুলের বিচার হবে । কিন্তু যারা বিভিন্ন কায়দায় বদরুলদের তৈরি করবেন – তাদের কিছুই হবে না । জাতির বিবেকগণ টিভির টক সো তে বসে কিংবা বদরুলদের জন্যে বিশেষ বাক্স বানিয়ে সেই বাক্স থুথু দিয়ে ভরে ফেলবেন । কিন্তু বদরুল তৈরির ফ্যাক্টরির মূল মালিকদেরকে যথারীতি স্যালুট করবেন । কাউকে কাউকে দেবেন গান স্যালুট ।

গণতন্ত্রের মানস কন্যাগণ প্রমোশন পেয়ে গণতন্ত্রের হেড মাষ্টার বা হেড মিষ্ট্রেজ বনে যাবেন । চোখ গরম করে প্রতিপক্ষকে কিংবা দেশবাসীকে গণতন্ত্রের বানান জানে কি না তা জিজ্ঞেস করবেন । যে জাতি গণতন্ত্রের বানানই জানে না, সেই অধম জাতিকে গণতন্ত্র দিয়ে আর কী হবে ?