এমবেডেড জার্নালিজম এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার কফিনে শেষ প্যারেক

Minar Rashid

অত্যন্ত গুণী পুত্রধন তো বেজায় খুশী । উচ্ছসিত হয়ে বাবাকে জানায়, ‘ গত বছর স্যারেরা আমাকে এক ক্লাস উপরে না তুলে আরেক ক্লাস নিচে নামিয়ে দিয়েছিল । এবছর অনেক ভালো করেছি । শুধুই ফেল , কাজেই আগের ক্লাসটিতেই থাকা যাবে , বাবা । ‘
এই ধরনের উচ্ছাস নিয়ে দৈনিক যুগান্তর , ইত্তেফাক , কালের কন্ঠ , জনকন্ঠ সহ তথাকথিত প্রথম শ্রেণীর কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা একটি শিরোনাম করেছে । শিরোনামটি হলো , গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি ।

বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে গত বছর হয়েছিল ১৪৬ তম , এবার হয়েছে ১৪৪তম । তাতেই শিরোনামের এই উল্লাস !! এরাই জাতির গুণধর ও যোগ্য পুত্র পুত্রী ।

একই সময়ে সরকার গণমাধ্যমের টুটি আরেকটু চেপে ধরার জন্যে সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া প্রকাশ করেছে । সেটা নিয়ে এদেশের গণমাধ্যমে তেমন কোন টেনশন পরিলক্ষিত হচ্ছে না ।

আমেরিকার নেতৃত্বে ইরাক আক্রমণের সময় প্রথমে এমবেডেড জার্নালিজম শব্দটির সাথে আমাদের পরিচয় হয় । সেই জঘন্য এমবেডেড জার্নালিজম বা বাটপাড়ি সাংবাদিকতা শুরু হয়ে গেছে এদেশে । রিমান্ডে থাকা একজন সাংবাদিকের স্বীকারোক্তির নামে বিভিন্ন কথাকে শিরোনাম করছে । যে বিষয় গুলি স্বাধীনভাবে যাচাই করা দুরূহ হয়ে পড়েছে ।

বায়বীয় অভিযোগে শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপি নেতা জনাব সামসুজ্জামান দুদু ঠিকই বলেছেন , যে শফিক রেহমান মাছি মারতে পারেন না , তার বিরুদ্ধেই আনা হয়েছে হত্যার ষড় যন্ত্র মামলা । তাই সাধারণ মানুষ তো বটেই – ইমরানের মত শাহবাগী গাজাখোরও ( তার এক প্রাক্তন সহযোদ্ধা তাকে এভাবে চিত্রিত করেছেন ) এটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ।

সরকারের সর্বোচ্চ জায়গা থেকে স্পষ্ট দাবি করা হয়েছে যে এফবিআই কর্তৃপক্ষ শফিক রেহমান এবং মাহমুদুর রহমানের জডিত থাকার কথা জানিয়েছে । কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো এর হুবহু বিপরীত । ইনফরমেশন সুপার হাই ওয়ের যুগে এমন বাটপাড়ি সবাইকে বিস্ময়ে হতবাক করেছে । বিশ্ব বেহায়ার খেতাবটি এরশাদ দখল করলেও বিশ্ব বাটপাড় পদকটি অচিরেই জুটে যেতে পারে ।

জানা গেছে সজীব ওয়াজেদ জয় এই মামলায় নিজেকে ভিক্টিম হিসাবে প্রতিপন্ন করতে অনেক চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু মার্কিন আদালত তার এই দাবি গ্রহন করে নি । যুক্তরাষ্ট্রের আদালত জয়কে অপহরন ও হত্যার অভিযোগটি স্পষ্টতই নাকচ করে দিয়েছে । বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত সিজার সহ তিনজনের সাজা হয়েছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্য ঘুষের বিনিময়ে হস্তগত করার জন্যে । এখানে কেঁচোটি হলো সিজারের সাজা এবং সাপটি হলো যে তথ্যটি আদায় করতে গিয়ে তিনি আমেরিকার এই আইনটি ( ঘুষ দিয়ে তথ্য আদায় ) লঙ্ঘন করেছিলেন । আমেরিকার আদালত স্পষ্ট করেছে যে সিজার এবং তার সঙ্গীদের কর্মকান্ড কোনভাবেই কাউকে শারীরিক আক্রমণের ইন্টেনশন নির্দেশ করে না । মার্কিন আদালত তা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছে । সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান পুরো বিষয়টি খোলাসা করে দিয়েছেন ।

এ যেন সেই আই ডোন্ট নো গল্পের মত । প্রকৃত শিক্ষিত লোকটি সাদা দিলে বাটপাড় প্রতিপক্ষের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন । জিজ্ঞাসিত হয়ে ‘ আই ডোন্ট নো ‘ বাক্যের অনুবাদ করেছিলেন – আমি জানি না । কিন্তু চতুর প্রতিপক্ষ গ্রামবাসীকে দেখিয়ে বলে , দেখলেন তো আপনারা ! সে আমার প্রশ্নের জবাবে জানিয়ে দিয়েছে , সে জানে না । কাজেই প্রমাণ হলো , আমিই গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে জানলে ওয়ালা শিক্ষিত লোক ।
মা -ছেলে দেশবাসীকে হুবহু এই গ্রামবাসীর মত অজ্ঞ মূর্খ ঠাহর করেছে । মার্কিন আদালত বলেছে এক জিনিস , বুঝিয়েছে এক জিনিস , আর তারা দেশবাসীকে জানাচ্ছে ভিন্ন কিছু । তারা মনে করেন ডেবিড বার্গমানের লেখা কিংবা ইন্টারনেট থেকে মার্কিন আদালতের রায়টি দেখা ও বোঝার মত লোক এই অজ্ঞদের দেশে কম রয়েছে । এদেশের অধিকাংশ মানুষের দৌড মুন্নী সাহা, জ. ই. মামুন এবং মাসুদা ভাট্টি প্রমুখ পর্যন্ত । এরা সবাই অত্যন্ত নির্লজ্জ ভাবে একজন গ্রেফতারকৃত কলম সেনাপতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন । অন্যরা গীবত করলেও মুন্নী সাহা শফিভাইয়ের বহুত বহুত প্রশংসা করেছেন । তিনি সকল বিপদে একাশি বছর বয়স্ক শফিভাইকে অবিচল থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন । কিন্তু এই গ্রেফতারের নিন্দা বা আশু মুক্তি কামনা করেন নি তার গুণে ও প্রতিভায় মুগ্ধা এই মহিলা সাংবাদিক ।
মুন্নী সাহার এই লেখাটি পড়ে আমার এক দোস্ত ক্যাপ্টেন মাকসুমুল হকের অত্যন্ত প্রিয় একটি চুটকির কথা মনে পড়ে যায় ।
বিভিন্ন মানসিক চাপ এবং উল্টাপাল্টা খাওয়ার কারণে বাসর ঘরে কনে হঠাৎ বাতাস দুষিত করে ফলে । নতুন স্বামীর সম্মুখে বিব্রত অবস্থা কাটাতে কনে তার বরকে জিজ্ঞেস করে , আপনারা কয় ভাই ? বর জবাব দেয় , ছেলাম তো পাঁচ ভাই । কিন্তু যে পা– দিয়েছো তাতে এখন কয়জন বাঁচে আর কয়জন মরে , সেটাই দেখার বিষয় ।
তেমনি করে মুন্নী সাহারা এদেশের সাংবাদিকতা জগতে যে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছেন , তাতে কয় জন শফিক রেহমান অবিচল থাকতে পারেন বা বেঁচে থাকতে পারেন , সেটাই দেখার বিষয় । মনে হচ্ছে , স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার কফিনে শেষ প্যারেকটিই এই জ.ই. মামুন ও মুন্নী সাহারা মারছেন ।