যারা সিঙ্গাপুর বনে যাবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন

Minar Rashid

 

১৯৭৩ সালের ২রা আগষ্ট থেকে ১০ই আগষ্ট । স্থান কানাডার অটোয়া । কমনওয়েলথভূক্ত সরকার প্রধানদের সম্মেলন চলছে। সিঙ্গাপুরের অবিসংবাদিত নেতা লি কুয়ান ইউ সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক নেতাই সেই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। সেই সম্মেলনের একটি ঘটনা মি: লি কুয়ান ইউ তার লিখিত আত্মজীবনী বইতে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন ।

সেই সম্মেলনে মি: লি কুয়ান ইউ তাঁর হোটেল রুম থেকে দেখতে পান যে একটি বিমান যতদিন সম্মেলন চলছে ঠিক ততদিন ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেই বিমানটিতে চড়ে তৃতীয় বিশ্বের একজন রাষ্ট্রনায়ক এসেছেন। এই ডাট ( মি লি যে শব্দটি উল্লেখ করেছেন তার সঠিক অনুবাদ হবে বাংলা ভাষার এই ডাট শব্দটি ) দেখিয়ে সেই রাষ্ট্র নায়ক বিশ্ব সভায় নিজের দেশের জন্যে খয়রাতের আহ্বান জানিয়েছিলেন !
অথচ মি: লি নিজে গিয়েছিলেন নিজ দেশের একটি যাত্রীবাহী বিমানে করে। সেই রাষ্ট্রনায়কের নাম ও দেশটিও তিনি তাঁর সেই বইটিতে স্পষ্ট করে উল্লেখ করে গেছেন । একটু কষ্ট করে যে কেউ তা দেখে নিতে পারেন । সৈয়দ মুজতবা আলীর অমর সৃষ্টি আব্দুর রহমানের মত উচ্চারণ করতে হয়, ইনহাস্ত ওয়াতনাম। এই তো আমার জন্মভূমি।

কাজেই আজ যারা সিঙ্গাপুর বনে যাবার স্বপ্ন দেখছেন এই ইতিহাসটুকু তাদের জেনে রাখা দরকার । তাদের আরও জানা দরকার , কী কারণে বিজ্ঞ সিঙ্গাপুরবাসী এই লোকটির হাতে তাদের দেশের শাসনভার স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমেই বার বার তুলে দিয়েছিলেন । তাঁকে কিন্তু ৫ই জানুয়ারীর মত কোন ম্যাজিক দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করতে হয় নি । পুলিশ ও প্রশাসনকে সংকেত দিতে হয় নি যে তোমরা যা ইচ্ছে করার করো , শুধুমাত্র সরকারের বিরোধিতা করো না । সারা দেশ ও সরকারের উপর তাঁর যে নিয়ন্ত্রণ ও নৈতিক প্রভাব তৈরি হয়েছিল – তারই সঠিক ব্যবহার করেছেন এই মেধাবী ও ক্ষণজন্মা সাহসী মানুষটি । তার এই প্রভাব এতটুকুই শক্তিসালী ছিল যে দেশের যুবক যুবতীগণ তাঁর কাছ থেকে জানতে চাইতেন কখন বিয়ে করা দরকার, কখন সন্তান নেয়া দরকার। দেশের অধিকাংশ মানুষ একজন পীরের মত তাঁর এই ধরনের সকল নির্দেশ মন থেকেই মেনে চলত ।

ছাত্র জীবনে তিনি পুরো মালয়েশিয়া ( সিঙ্গাপুর তখন মালয়েশিয়ার সাথে যুক্ত ছিল) থেকে পাবলিক পরীক্ষায় টপ স্টুডেন্ট হয়েছিলেন । তারপর লন্ডনে গিয়ে কেম্ব্রিজের মত প্রতিষ্ঠানেও সেই অবস্থান ধরে রাখেন । তিনি সেখান থেকে আইন শাস্ত্রে Double starred first class honors সহ উত্তীর্ণ হন । ব্যারিষ্টার ডিগ্রীও অর্জন করেন। তারপর আমাদের অনেক টপ স্টুডেন্টদের মত চরম স্বার্থপর না হয়ে দেশ সেবায় নেমে পড়েন । বাকি ইতিহাস সবার জানা।

তিনি যেটা করেছেন সেটার নাম হতে পারে মেরিটোক্রেসি । মন্ত্রনালয়ের সবচেয়ে মেধাবী ও তুখোড মানুষটি এখানে মিনিষ্টার হন , দ্বিতীয় জন হন সচিব। আমাদের মত সবচেয়ে অঘা ,ব্যক্তিত্বহীন ও তেলবাজ মানুষগুলো কখনই এমপি ,মিনিষ্টার হয় না । সবচেয়ে অপদার্থ ও অযোগ্য মানুষগুলো প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি হয় না । এটা আমাদের দেশে নতুন করে শুরু হয়েছে , তা বলছি না। কিন্তু অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে গিয়ে এটা আগের চেয়ে আরো শত সহস্রগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমাদের দেশে যা শুরু হয়েছে , তার নাম নেহারয়েত গুন্ডাক্রেসি। আর এই গুন্ডাক্রেসি দিয়ে স্বপ্ন দেখছি সিঙ্গাপুর বনে যাবার!
অন্য যা কিছু করার করেন , এই ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতরামি বন্ধ করুন। সত্যি অসহ্য লাগছে।