একাত্তরে নারী সরবরাহ বনাম মুরগী সরবরাহ

Minar Rashid

গোলাম মাওলা রনি আবারও হাটে হাড়ি ভেঙেছেন। সঠিক করে বলতে গেলে বলতে হয় আগের ভাঙা হাড়িটিই তিনি আরেকবার ভেঙেছেন। জনৈকা ঘাদানিক নেত্রী বিষয়টি প্রথমে জাতির গোচরে এনেছেন। ঘাদানিক নেতা ও বর্তমানে নাম্বার ওয়ান মুক্তিযোদ্ধা জনাব শাহরিয়ার কবির ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় ক্যান্টনমেন্টে নাকি মুরগী সরবরাহ করতেন। জনাব রনি এমন মুন্সীয়ানায় আগের ভাঙা হাড়িটি দ্বিতীয়বার ভেঙেছেন যে তাতে অাওয়াজ প্রথম বারের চেয়ে একটুও কম হয় নি। দেশের অধিকাংশ মানুষের মন…ের খেদ,যন্ত্রণা ও বিরক্তিটুকু জনাব রনির কয়েকটি বাক্যে অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।

আমার মনে হয় জনাব শাহরিয়ার কবিরের পুরো কাহিনীটুকু আমাদের জানা হয় নি। ফলে তাঁর প্রতি এক ধরনের অবিচার করা হচ্ছে। হয়তোবা সামনে তাঁর সেই অবদানকে সঠিকভাবে মূল্যায়ণ করা হবে।
কারণ সেই সরবরাহকৃত মুরগীতে তিনি আসলে গোপনে গোপনে বিষ মিশিয়ে দিতেন। সেই বিষের ক্রিয়ায় অনেক পাক সেনা সদস্যের পেট খারাপ হয়েছে, কারো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিনষ্ট হয়েছে। তাতে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। তার সেই ইতিহাস এখনও কেউ লিখে নি। শুধু সম্মুখ সমরে মাত্র নয় মাস সময়ের মধ্যে এমন শক্তিসালী সেনাবাহিনীকে হারানো সম্ভব হয় নি। জনাব শাহরিয়ার কবিরদের বিষযুক্ত মুরগী দিয়ে বিশেষ যুদ্ধও আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছে।

কোন কোন কবি নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের গোপনে গোপনে কবিতা লিখে পাঠাতেন। ফলে যুদ্ধের নয় মাস দৈনিক পাকিস্তানের সম্পাদনা করলেও পরবর্তিতে কোন বালা মুসিবতে পড়তে হয় নি। অধিকন্তু মুক্তিযুদ্ধের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর হিসাবেই সারা জীবন বিশেষ মর্যাদা ও পরিচিতি পেয়েছেন।
শুধু তাই নয়। ১৯৭১ সালে টগবগে যুবক থাকার পরেও কেউ কেউ যুদ্ধে যান নি বলে কড়া সমালোচনা করা হয়। বলা হয় ১৯৭১ সালের বড় একটা সময় তারা খাটের উপরে নয়, খাটের নিচেই শুইয়েছিলেন। কিন্তু তারা জানেন না এই খাটের নিচে শুইয়ে শুইয়ে চিন্তা করতেন কীভাবে নিজেকে নিরাপদ রেখে এই পাক হানাদারদের খতম করা যায়।
আর এই মনীষীর সেই খাটের নিচের চিন্তার ফসল থেকেই বেরিয়ে এসেছে আজকের ড্রোন – অর্থাৎ মনুষ্যবিহীন যুদ্ধবিমান।