২০৪১ সালের আগে এই তাড়াহুড়া যমের জন্যে সংবিধান সম্মত হয় নি

২০৪১ সালের আগে এই তাড়াহুড়া যমের জন্যে সংবিধান সম্মত হয় নি
===============================
কম্যুনিষ্ট অধ্যুষিত দেশগুলিতে টপ লিডারদের মৃত্যু নিয়ে রহস্যজনক ভূমিকা পালন করা হয় । মৃত্যুর পরেও সেই ঘোষণাটি আসতে কয়েকদিন সময় লেগে যায় । এদেশের সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের মৃত্যুর সংবাদটি নিয়েও তেমনি রহস্যজনক ভূমিকা পালন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে । বেসরকারীভাবে রাতের প্রথম প্রহরে মৃত্যু হলেও সরকার এবং সংবিধানের “গুডিবয় ” মিডিয়া জগত সংবাদটি পরিবেশনে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে । বিডি টুডে সহ গুটিকয় অন লাইন পত্রিকা সাথে সাথেই এই মৃত্যু সংবাদটি প্রকাশ করলেও মূল ধারার মিডিয়া এবং এদেশে “ব্রেকিং নিউজ ” এর অগ্রপথিকরা সরকারের সাংবিধানিক ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন । বাচ্চার মুখ না দেখেই এদেশের যে মিডিয়া তার লিঙ্গ ঘোষণা করে বসে, তারাও এক্ষেত্রে অনেক বাসি করে এই মৃত্যু সংবাদটি প্রচার করেছে ।

মৃত্যু এক আজব জিনিস । সংবিধান প্রণেতা এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞের মৃত্যুও সংবিধান মেনে হয় না । আজরাইল বা যম এটি মেনে চলেন না । পুরো জাতিকে সংবিধানের জ্ঞান দিলেও নিজের যমকে শেখাতে পারেন নি । ২০৪১ সালের আগে এই তাড়াহুড়া যমের জন্যে সংবিধান সম্মত হয় নি । সংবিধানের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা থাকলে এই সংবিধান প্রণেতার মৃত্যু হওয়ার কথা ছিল দিনের বেলায় বা ওয়ার্কিং আওয়ারে । মৃত্যুর ঘোষণাটি যেহেতু অফিস খোলার পর সরকারিভাবে ঘোষণা করতে হয় , তাই রাতের বেলায় মৃত্যুটি অসাংবিধানিক কি না তাও জিজ্ঞেস করার মানুষ অন্তত একজন কমে গেছেন ।

কথা বলার স্টাইল এবং প্রতিপক্ষকে তীর্যক বাক্যবাণে ধরাশায়ী করার একই ধরণের প্রতিভা বা ক্ষমতা ছিল ফাঁসিতে দন্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা জনাব সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরীর ।
বাইরের সম্পর্ক সাপে-নেউলের মত হলেও সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরীর সাথে সুরঞ্জিত বাবুর নাকি একটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল । তবে অন্তরঙ্গ বা বাহিরাঙ্গ বন্ধু হলেও সময়ে খুব একটা উপকারে আসেন নি । তবে ঐশ্বরিক ব্যবস্থাপনায় অতি অল্প দিনের মধ্যেই সেই বন্ধুর সাথেই সাক্ষাতের ব্যবস্থা হয়ে গেছে । বেহেস্ত এবং স্বর্গ থেকে তাদের বর্তমান কথোপকথন জানতে পারলে তাদের মধ্যকার দুনিয়ার কথোপকথনের চেয়েও উপভোগ্য হতো বলে অনুমান করা যাচ্ছে ।

বাংলাদেশের মিডিয়া এবং রাষ্ট্রব্যবস্থায় কম্যুনিজমের প্রভাব সৃষ্টিতে সদ্য প্রয়াত এই আইনপ্রণেতার ভূমিকাটিও ডায়মন্ডের অক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে । কালো বিড়াল খ্যাত আর্থিক কেলেংকারিতে তাঁর একান্ত সহকারীর পাঁচ বছরের সাজা হলেও দেশের কানুন এই আইনপ্রণেতাকে যথোচিত সম্মান দেখিয়েছে । আজ পুরো জাতির স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি না থাকলেও নিজে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি উপভোগ করে গেছেন ।

সামনের ইতিহাস এক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকাও খুচিয়ে খুচিয়ে বের করবে । দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব অন্য একটি দেশের হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকাটুকুও আগামী কয়েক শতাব্দী ধরে আলোচনায় থাকবে ।
তারপরেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় কিংবা সংবিধিবদ্ধ সতর্কতায় পুরো জাতি তাঁর প্রতি সম্মান জানাতে বাধ্য ।