সেইন্ট_মার্টিন_নিয়ে_বার্মা_কেন_এত_আগ্রহী?

সেইন্ট_মার্টিন_নিয়ে_বার্মা_কেন_এত_আগ্রহী?

Image may contain: ocean, sky, mountain, outdoor, nature and water

by Defence Research Forum   1 October 2019

পোস্টটি বাংলাদেশের পক্ষে হয়ে নয় বরং বার্মিজদের পক্ষ হয়ে লেখা। ওদের কেন এত জ্বালা সেটি একটু ওদের ধারনা অনুযায়ী ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব।

সেইন্ট মার্টিন দ্বীপে যারা গেছেন তারা জানেন কতটা সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ এটি। এই দ্বীপের উপর বার্মিজদের নজর কিন্তু নতুন কোন ঘটনা নয়।

আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিয়ে যখন যুক্তিতর্ক চলছিল তখনো বার্মা দাবি করে যে এই দ্বীপটি তাদেরকে দেওয়া হোক। কিন্তু যুক্তিতে তারা পারেনি। অবশেষে তারা দাবি তোলে দ্বীপ কে ভেঙ্গে অর্ধেক বার্মার অধিনে বাকি অর্ধেক বাংলাদেশকে দেয়া হোক। সেই দাবিও তাদের পক্ষে আসেনি।

কি কারনে এই ছোট্ট দ্বীপ নিয়ে ওদের এত মাথা ব্যাথা?
এর প্রধান কারন হল সমুদ্রসীমার বিশাল একটি অংশ হাতছাড়া হয়ে গেছে শুধুমাত্র এই দ্বীপটির কারনে। প্রশ্ন আসতে পারে কেন?

সমুদ্রসীমার ম্যাপের দিকে দৃষ্টি রাখুন। দেখবেন যে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশ মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন সাগরের গভীরে একটি অংশ। দ্বীপটির কথা বাদ রাখুন। এবার দেখেন যে বাংলাদেশের টেকনাফে মূল ভূখন্ড যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে নদীর মোহনার ওপার থেকেই বার্মার সমুদ্র উপকূল। কিন্তু দ্বীপ টি বাংলাদেশের অধিনে থাকার কারনে মোহনা থেকে সেইন্ট মার্টিন পর্যন্ত বাংলাদেশের ভূখন্ডের কোন সংযোগ না থাকা সত্ত্বেও বার্মার সমুদ্র উপকূল থেকে বার্মার সীমানা ১ নটিকাল মাইলের থেকেও কম। মানে টেকনাফ থেকে সেইন্ট মার্টিন পর্যন্ত দীর্ঘ এই পথে বার্মার সমুদ্র শুরু হলেও নিয়ম অনুযায়ী ১২ নটিকাল মাইলের একান্ত সমুদ্র অঞ্চল থেকে বার্মাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সেইন্ট মার্টিন দ্বীও পার হয়েও সমুদ্র সীমারেখা যেভাবে টানা হয়েছে তাতে একটি নির্দিষ্ট অংশ পর্যন্ত বার্মার ১২ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র সীমা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

যেহেতু সমুদ্র আদালতে দুটি উপায়ে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের কথা বলা হয়। একটি হল সমদুরত্বের ভিত্তিতে অন্যটি ন্যায্যতার ভিত্তিতে। বাংলাদেশের অবস্থানের দিকে তাকালে আমাদের সমুদ্র দেশের ভূখন্ড থেকে দক্ষিণমূখী। কিন্ত বার্মার অবস্থান থেকে তাকালে তাদের সমুদ্র তাদের ভূখন্ড থেকে পশ্চিম মূখী। ফলে এই দুটি দেশের ক্লেইম একটা অন্যটাকে ক্রস করে গেছে। যদি বাংলাদেশকে দক্ষিন মূখী পুরটায় দেয়া হয় তবে বার্মার ক্ষেত্রে উপকূল থেকে সমুদ্রসীমা ১২ নটিক্যাল মাইলের থেকেও কম ভাগে পড়ে। ২০০ নটিক্যাল মাইলের হিসাব অনেক দুরের ব্যাপার। আবার যদি বার্মাকে পশ্চিমমুখী পুরটা দেয়া হয় তবে বাংলাদেশের সীমানা ১০০ নটিক্যাল মাইলের থেকেও কমে যায়।

এর জন্যই বাংলাদেশ আবেদন জানায় ন্যায্যতার ভিত্তিতে এর সমাধান হোক। বার্মা আবেদন জানায় এটা সমদূরত্ব অনুযায়ী হোক। যদি সমদুরত্ব অনুযায়ী হত তাহলে আমাদের অবস্থা খারাপ হত।

এদিকে বাংলাদেশের ভূখন্ডের সর্বশেষ অংশ হিসাবে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ কে আদালত বিবেচনায় নেয়। ফলে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সেইন্ট মার্টিন থেকে শুরু করে হিসাব করা হয়েছে। দ্বীপ টি ছোট হলেও এর জন্য বিশাল সমুদ্রসীমা বার্মার হাতছাড়া হয়েছে। নীচের ছবি দেখলেই বুঝবেন যে লাল রঙ্গের তির চিহ্নিত এলাকায় বার্মার উপকূল থাকা সত্ত্বেও সমুদ্রসীমা ১-২ নটিক্যাল মাইলের বেশি ভাগে পায়নি। শুধুমাত্র এই দ্বীপটি পরিবর্তন করে দিয়েছে সব। এর জন্যই বার্মাকে বিশাল একটি অংশ হারাতে হয়েছে যেহেতু দ্বীপটি বাংলাদেশ ভূখণ্ড হতে দূরে এবং বার্মার পেটের ভেতর।

যাহোক, আলোচনাটি হয়ত অনেকে বুঝেন নাই। আমার বোঝানোর ক্ষমতা যতটুকু সেভাবে চেষ্টা করেছি। তবে সময় পেলে আরো বিস্তারিত লিখব।

এখন এই দ্বীপ টির জন্যই বাংলাদেশকে নেভি সব থেকে বেশি শক্তিশালী করা লেগেছে। নেভিতে যদি আমরা আপার হ্যান্ড ধরে রাখতে না পারি তাহলে আমাদের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। কেন?

কারন হল বার্মা বাংলাদেশ যদি কখনো সংঘর্ষ হয় তখন এই দ্বীপ টিকে রক্ষা করার জন্য শুধুমাত্র নেভির প্রয়োজন হবে। এখানে সেনাবাহিনী মূভ করার মত অবস্থা নেই। বিমানবাহিনী ও এখানে ভূমিকা সীমিত।
।এসব বিষয় মাথায় রেখেই বাংলাদেশের দুই থেকে চারটি নেভি শিপ সব সময় মোতায়েন করা থাকে এই দ্বীপে।

বাংলাদেশ জানে এই দ্বীপটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে বার্মা আরো ভাল ভাবে জানে যে ছোট্ট একটি দ্বীপের কারনে তাদের সমুদ্রসীমার বিশাল অংশ ১-২ নটিক্যাল মাইলের বাধায় আটকা।

বাংলাদেশের উচিত হবে নেভিকে আরো শক্তিশালী করে তোলা। আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সমুদ্রে অন্যবাহিনীর তুলনায় নেভির প্রয়োজন সব্ থেকে বেশি। আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং সমুদ্রকেন্দ্রীক হুমকি মোকাবিলায় নেভিই পারবে সস্থি দিতে। আর অবস্থানগত কারনেই আমাদের মূল হুমকি এই সমুদ্রপথেই।

No photo description available.

This article appeared in the FACEBOOK entry of Defence Research Forum- DefRes on 1 October 2019