সিনহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে যা বললেন এমপি হারুনুর রশিদ

সিনহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে যা বললেন বিএনপি’র হারুনুর রশিদ – ছবি : সংগৃহীত


বিএনপি’র এমপি হারুনুর রশিদ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন।

তিনি জানান, সংসদে নবম অধিবেশনে মাননীয় স্পিকারের কাছে সাংবাদিকদের অন্ততপক্ষে সংসদ ভবনের ফটকের কাছে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

বক্তব্যে তিনি গত ৩১ জুলাই অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, তার মৃত্যু কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার বিচারের জন্য তার পরিবার আদালতে মামলা দায়ের করেছে সেটি এখন বিচারাধীন রয়েছে। এই ক্ষেত্রে সরকার একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্তকমিটি গঠন করেছিল। সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সেই রিপোর্টটি দাখিল করেছে। তিনি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ‘নয়া দিগন্ত’ ও ‘প্রথম আলো’র শিরোনাম উল্লেখ করে বিষয়টির উপর আলোকপাত করেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে যা জানা যাচ্ছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন রয়েছি। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী এত গূরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে সরকার যেন পূর্ণাঙ্গ সঠিক তথ্যটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয়ের মাধ্যমে মিডিয়ার ও জনগণের কাছে তুলে ধরে। এ সময় তিনি দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার প্রতিবেদন উল্লেখ করেন। সেখানে লেখা আছে, ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধ ও একটি সুষ্ঠ তদন্তের জন্য একটি যৌথ বাহিনী গঠনসহ ১৩ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। যেটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের আদলে পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, র‌্যাব ও বিজিবিসহ অন্যন্য বাহিনীর সমন্বয়ে একটি বিশেষ দল। তবে এ বিষয়ে পুলিশের প্রবল আপত্তি রয়েছে। তদন্ত কমিটিতে থাকা পুলিশ প্রতিনিধি বিষয়টি নিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, এতে বোঝা যায় নিসন্দেহে ঘটনাটি পুলিশই ঘটিয়ে ছিল।

প্রথম আলোর শিরোনামটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি আরো উদ্বেগের। তারা পুলিশের বক্তব্য তুলে ধরেছে যেটি আমার বেশি চিন্তার কারণ। ‘প্রশ্নের জবাব খুঁজতে ‘ফৌজদারি তদন্ত’ করার সুপারিশ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে প্রথম আলো লিখেছে তদন্ত কমিটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণারয়ের নির্দেশেই প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি এটি পুরো রাষ্ট্রের ভিত্তিকে নাড়া দিয়েছে। বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড আজকে যেভাবে রাষ্ট্রে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং আইন কর্মীর পরিচয়ে এদেশের নাগরিকদের উঠিয়ে নিয়ে হত্যা ও গুম করা হচ্ছে আমরা তা নিয়ে চিন্তিত। বিভিন্ন পেশার মানুষ আজকে হত্যা ও গুমের শিকার হচ্ছে, যে কারণে আমরা আমাদের জায়গা থেকে এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

একই সাথে আমরা সরকারের কাছে গুম ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিসঙ্ঘ যে সনদ তৈরী করেছে তাতে সরকারকে স্বাক্ষর করার দাবি জানাচ্ছি। জাতিসঙ্ঘের ওই সনদে সরকার এখনো স্বাক্ষর করেনি তাহলে কি আমরা ধরে নেব সরকার এই হত্যাকাণ্ডের সমর্থন করছে! তাই অবশ্যই সনদে স্বাক্ষর করার জন্য সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে করোনার এই বেহাল দশায় জনগণ বলছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হোক। কিন্তু সরকার এখনো মন্ত্রীকে তার পদে বহাল রেখেছেন। চিকিৎসাক্ষেত্রের অবস্থা দেখে দেশের জনগণ তো তাকে রাখার জন্য আলাদা জাদুঘর নির্মাণের কথা বলছে!

আমি সোমবার নবম পার্লামেন্ট অধিবেশনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, ‘মহাদয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী অনুগ্রহ করে বলবেন কি- মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায়ে যারা ভর্তি হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা?’ আমার প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী সরাসরি বলেছেন, মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় কোনো অসদুপায় অবলম্বন করা হয়নি। অথচ, গত ২৪ জুলাই প্রথম আলো, মানবজমিনসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। সিআইডিও বলছে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, কিছু অভিযুক্তদের কারাগারে আটক করা হয়েছে, অনেককে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে, তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন। কিন্তু জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী মহাদয় একটি সম্পূর্ণ অসত্য ও মিথ্যা কথা বললেন। আবার সংবাদকর্মীসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরতদের নানাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে।

আমি বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার কাছে অনুরোধ করছি জাতির এই ক্রান্তিকালীন সময়ে আপনারা সাহসিকতার সাথে জনগণের সামনে এই বিষয় ও সত্যিগুলো তুলে ধরুন।

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আদালত মামলা গ্রহণ করার পরও এই তদন্ত কমিটির গঠন বিচার কাজকে প্রভাবিত করবে কিনা আমি জানি না। অদালতের চার্জশিট যখন দাখিল করা হবে ও সেটি প্রকাশ করা হবে তার ফলাফলের সাথে তদন্ত কমিটির সঙ্ঘর্ষ হবে বলে তিনি সন্দেহ পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয় উচ্চ পর্যায়ের যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে তারা নাকি ওসি প্রদীপের কোনো ফোনালাপ পায়নি। যেখানে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ফোনালাপে এখনো দেখা যাচ্ছে। তাদের এ ধরণের মন্তব্যে আমি তদন্তের ফলাফল নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছি।

আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে চাই এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার হোক। জনগণ সঠিক তথ্য যেন জানতে পারে এই বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এই প্রেস বিফ্রিং’এ বিএনপি’র সাংসদ হারুনুর রশিদের সাথে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া-৪ আসন থেকে মোশারফ হোসেন, চাপাইনবাবগঞ্জ-২ থেকে আমিনুর ইসলাম।