সিটি নির্বাচনে অনিয়মের প্রমাণ তুলে ধরবে বিএনপির দুই প্রার্থী

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সিটি নির্বাচনে অনিয়মের প্রমাণ তুলে ধরবে বিএনপির দুই প্রার্থী – ছবি : নয়া দিগন্ত

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘কারচুপির ফল’প্রত্যাখান করে রোববার ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে বিএনপি। হরতালের সমর্থনে রাজধানীর কোথাও পিকেটিং দেখা যায়নি। তবে পরিবহন চলাচল ছিল সীমিত। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকে অবস্থান নিয়ে নেতা-কর্মীরা সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিয়ে ক্ষোভ প্রদর্শণ করেন। সিটি নির্বাচনে বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন এই বিক্ষোভে অংশ নেন।

হরতাল পালন শেষে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিক্ষোভ-সমাবেশের কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার রাজধানীর থানায় থানায় এই বিক্ষোভ হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা হরতাল আহ্বান করেছিলাম ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে প্রহসন করা হয়েছে, তামাশা করা হয়েছে তার প্রতিবাদে, নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। আমরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল বাতিল, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগরের থানায় থানায় বিক্ষোভ-সমাবেশের কর্মসূচি পালন করেবা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ‘ভোট কারচুপি, জালিয়াতি, ত্রাস সৃষ্টি, এজেন্টদের বের করে দেওয়া, ভয়ভীতি প্রদর্শন’সহ নানা ঘটনার তথ্য-প্রমাণ আগামীকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরবেন ধানের শীষের দুই প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন।

হরতালে সমর্থনে ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে নেতা-কর্মীরা পিকেটিং করার সময় তিন থেকে চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে উল্লেখ করে তাদের মুক্তির দাবিও জানান তিনি। স্বল্প সময়ের নোটিশে হরতাল সফলভাবে পালনের জন্য ঢাকাবাসীকে অভিনন্দনও জানান বিএনপি মহাসচিব।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে ধানের শীষের দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দলের কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামা ওবায়েদ, আজিজুল বারী হেলাল, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, হারুনুর রশীদ, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, আনোয়ার হোসেন, সুলতানা আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সকালে হরতালের সমর্থনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে ২০/৩০ জন নেতা-কর্মী সকাল ৬টা থেকে বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

রিজভী সকালে সাংবাদিকদের বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে যে ভোট জালিয়াতি হয়ে গেল তার প্রতিবাদ জানাতেই আমাদের এ কর্মসূচি। আমাদের নেত্রী এদেশের ১৬ কোটি মানুষের জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সরকার আটক করে রেখেছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি এই অন্যায়ের দুই বছর পূর্ণ হবে। আমরা এরও প্রতিবাদ করছি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকালে সাড়ে ৯টায় নয়া পল্টনে আসেন। তার সঙ্গে কার্যালয়ের ভেতরে ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তাইফুল ইসলাম টিপু ও বেলাল আহমেদসহ অফিস কর্মীরা।

সকাল ১১টায় নয়া পল্টনে আসেন দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি এসেই বিক্ষোভরত নেতা-কর্মীদের মধ্যে বসে যান। অনেকে তাকে পেছনে নেতাদের সঙ্গে চেয়ারে বসতে বললেও তিনি বসেননি। কর্মীদের পাশে বসে নিজেই স্লোগানের নেতৃত্ব দেন। তার সঙ্গে শতাধিক নেতা-কর্মী ফুটপাতে বসে বিক্ষোভ করেছে। তারা ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘আজকের হরতাল, চলছে, চলবে’, দাবি আদায়ের হরতাল চলছে চলবে’. ভোট চোর ভোট চোর, শেখ হাসিনার ভোট চোর’ ‘সংগ্রাম, সংগ্রাম, রাজপথে সংগ্রাম চলছে, চলবে’, ‘প্রহসনের নির্বাচন মানি না, মানবো না’ ইত্যাদি শ্লোগান দেয়।

১২টার কিছু আগে মতিঝিলের সহকারি পুলিশ কমিশনার জাহিদুর রহমান সোহাগ এসে তাদের ফুটপাত থেকে তুলে দেন। তিনি বিএনপি নেতাদের বলেন, আপনারা ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি করতে পারবেন। আপনাদের কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। বেলা ১২টার দিকে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোরত ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী ইশরাকসহ নেতা-কর্মীদের পুলিশ তুলে দেয়। বেলা ২টায় আবার তারা সেখানে সমবেত হয়ে হরতালের সমর্থনে নানা শ্লোগান দিতে থাকেন। ঢাকা উত্তরের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালও এসে তাতে অংশ নেন। তিনি দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে শ্লোগানে অংশ নেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বসে শ্লোগানের নেতৃত্ব দেন ইশরাক।

সেখানে ইশরাক বলেন, সিটি নির্বাচন হয় নাই, এটা নির্বাচনের নামে তামাশা হয়েছে। ভোট কারচুপির প্রতিবাদের ভাষায় হিসেবে জনগণ হরতালকে বেছে নিয়েছে।

তাবিথ বলেন, এই মুহূর্তে আমরা জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়ে আছি, জনগণের সাথে দাঁড়িয়ে আছি। জনগণ দাবি তুলেছে যে, উনাদের পক্ষে এবং উনারা এই নির্বাচনের প্রক্রিয়াতে সন্তুষ্ট না। এর প্রতিবাদে হরতাল হচ্ছে।

এসময় ফুটপাতে বসা শতাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, নিপুণ রায় চৌধুরী, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও সুলতানা আহমেদ।