রংপুরে নওগাঁর যুগ্ম-দায়রা জজসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

রংপুরে নওগাঁর যুগ্ম-দায়রা জজসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা – নয়া দিগন্ত

 


রংপুর মহানগরীর আদর্শ পাড়ায় আঁখি মনি (১২) নামে শিশু কাজের মেয়ের গোপনাঙ্গে ষ্টিলের খুন্তি গরম করে ছ্যাঁকার দিয়ে নির্যাতরে অভিযোগে নওগাঁয় কর্মরত যুগ্ম দায়রা জজ, তার চিকিৎসক স্ত্রীসহ চারজনের নামে মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় মামলা হয়েছে। শিশুটির মা বাদি হয়ে এই মামলা করেছেন।

রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রশিদ জানান, শিশু আইনে কিশোরগঞ্জের বড়ভিটা ইউনিয়নের মেলাবর গ্রামের তালিকাভুক্ত ভিক্ষুক মৃত বাছেদ আলী ফকিরের কন্যা আখি মনির মা শিরিনা খাতুন বাদি হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় নির্যাতনের অভিযোগে মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় এক জন দায়রা জজসহ ৪জনের বিরুদ্ধে শিশু আইনে মামলা দায়ের হয়েছে।

ওসি জানিয়েছেন, মামলায় বাদি অভিযোগ করেছেন তার মেয়ে আখি মনি কিশোরগঞ্জের বগুলাগাড়ি (আদর্শপাড়া) এলাকার জনৈক ডালিম চন্দ্র রায় নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে মাসিক একহাজার টাকা বেতনে গৃহকর্মী হিসেবে রংপুর মহানগরীর আদর্শপাড়ার যুগ্ম দায়রা জজ রেজাউল বারী রিপন ও স্ত্রী দন্তচিকিৎসক কার্ণিজ আফি কান্তা বেগমের বাসায় থাকতেন। ১২৫ টাকা চুরি সন্দেহে গত ২১ নভেম্বর রাত ১২টার দিকে আসামীরা আঁখিমনিকে মারধরের পর গোপনাঙ্গে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেয়। খবর পেয়ে ২৮ নভেম্বর বিকেলে ডালিম চন্দ্র রায়সহ আঁখিমনির মা শেরিনা বেগম রংপুরের ওই বাসায় যান। সেখানে গেলে তারা শেরিনাকে জানান, তার মেয়ে টাকা চুরি করেছে। তাই তারা তাকে আর বাসায় রাখবে না। এ অবস্থায় দন্তচিকিৎসক কার্ণিজ আফি কান্তা ও তার স্বামী একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মেয়েকে তার মায়ের হাতে তুলে দেন। মেয়েকে নিয়ে গ্রামে ফিরে যান শেরিনা। সেখানে গিয়ে মেয়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখতে পেয়ে গ্রামবাসীকে বিস্তারিত জানান মা শেরিনা বেগম। ৩০ নভেম্বর বিষয়টি জানার পর এলাকাবাসি জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে বিষয়টি জানায়।

পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে হাসাপাতালে ভর্তি না নেয়ায় তারা আবারও নিজ গ্রামে ফিরে যায়। পরে কিশোরগঞ্জ থানার এএসআই মো. মাসুদ রানার সহায়তায় তাদের শুক্রবার রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশে শনিবার দিবাগত রাতে যুগ্ম দায়রা জজসহ চারজনকে আসামি করে মামলা রেকর্ড করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মামুনুর রশিদ পিপিএম জানান, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশুটির জৈবিক পরীক্ষার কার্যক্রম চলছে। রোববার সন্ধায় এ খবর লেখা পর্য়ন্ত রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এর নিকট ১৬৪ কার্যবিধিতে জবান বন্দি রেকর্ড করা হচ্ছিল বলে তিনি আরো জানান।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মফিজুল হক জানান, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে আঁখি মনিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করি এবং একটি জিডি করি। ঘটনাস্থল রংপুর নগরী হওয়ায় পরে বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রথমে জিডি করে এবং বাদি মামলা দিলে সেটি আমরা মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় পাঠাই।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) শহিদুল্লাহ কাওছার জানান, কিশোরগঞ্জে থানা থেকে এজহার আসার পার সেটি আমরা রেকর্ড করি এবং বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। অপরাধী যেই হোক তদন্তে দোষি সাব্যস্ত হলে আমরা যথাযথ আইনি পদক্ষে নিবো।