বিক্ষোভে উত্তাল শাবি, ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা

  • সিলেট ব্যুরো
  •  ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ২১:১৭

আলোচনার প্রস্তাব নাকোচ শিক্ষার্থীদের, রাষ্ট্রপতির কাছে খোলা চিঠি

– ছবি : নয়া দিগন্ত

পুলিশি হামলার প্রতিবাদ ও ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভে গতকালও উত্তাল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। টানা ৬ষ্ঠ দিনের মতো মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিভিন্ন হল থেকে একের পর এক মিছিল নিয়ে গোলচত্বরে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল সহকারে ভিসির বাসভবন ঘেরাও করে অবস্থান নেয়।

এ সময় আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীরা ‘এক দুই তিন চার ভিসি তুমি গদি ছাড়, ‘শিমুল ফুল শিমুল পুল, ভিসি তুমি করছো ভুলসহ বিভিন্ন শ্লোগানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ দাবি করেন।

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা
পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা দুই ৩০০ শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সোমবার গভীর রাতে এসএমপির জালালাবাদ থানার উপ-পরিদর্শক মো. আব্দুল হান্নান মামলাটি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু খালেদ মামুন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শাবির ড. ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ ভিসিকে উদ্ধার করতে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শিক্ষার্থী পুলিশের কর্তব্য-কাজে বাধা দিয়ে সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখসহ ও ১০ জন পুলিশ আহত হন বলে উল্লেখ করা হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওইদিন পুলিশ ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড ও ৩২ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুঁড়ে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। তবে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ মিথ্যে দাবি করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব বলেন, পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করেছে। গুলি ছুঁড়েছে। আমাদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এদিকে মামলা প্রত্যাহার না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল রাত সাড়ে ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মামরা প্রত্যাহারের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আলোচনার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বিকেলে আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনা করতে ভিসির বাসভবনের সামনে উপস্থিত হয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলসি কুমার দাশসহ সমিতির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়। তারা নানা ধরণের শ্লোগান দিতে দিতে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের আলোচনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।

রাষ্ট্রপতির কাছে খোলা চিঠি
সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট অফিসের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর লিখিত খোলা চিঠিটি পোস্ট করেন শাবির আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীরা। রাষ্ট্রপতি বরাবর খোলা চিঠি পাঠানোর ৪৮ ঘণ্টার ভেতরে ভিসির পতন নিশ্চিত না হলে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা বলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান। এরপর ভিসি বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রোড পেইন্টিং করে।

ভিসির পদত্যাগ দাবিতে গণস্বাক্ষর
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ও ভিসির পদত্যাগ দাবিতে শাবিপ্রবিতে চলছে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি। সকাল থেকে ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখ গোল চত্বরের পাশেই এই গণস্বাক্ষর কর্মসূচী চলছে। ইতোমধ্যে দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করেছেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে গণস্বাক্ষর কর্মসূচীতে স্বাক্ষর করেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আশফাক হোসেন, সিলেট মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা প্রমুখ।

আন্দোলনে সংহতি আওয়ামী লীগ নেতাদের 
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। এছাড়াও সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক হোসেন, সিলেট মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা। এ সময় শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, এক ব্যক্তির হাতে বিশ্ববিদ্যালয় জিম্মি হতে পারে না। সবগুলো দাবি যৌক্তিক, তা পূরণে শিক্ষার্থীদের কিছুটা সময় দেয়ার আহ্বান জানান। একই সাথে আলোচনার মাধ্যমে যাতে সমাধানে পৌঁছা যায় সেই পথ খোলা রাখারও আহ্বান জানান তারা।