বিএনপি কি আবারো পরাজিত হবে?

Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের অবস্থান। – ফাইল ছবি

বিএনপির রাজনীতিতে আমি নবাগত হলেও একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে দলটিকে দেখছি সেই ১৯৮৬ সাল থেকে। আমার বিএনপি দর্শন অন্যসব সাধারণ মানুষের মতো নয়। প্রথমে সাংবাদিক হিসেবে দেখেছি। তারপর বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে এবং সর্বশেষ দলটির একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে। আমি যখন বিএনপিতে যোগ দিই তখন দলটি ইতিহাসের এক গুরুতর সন্ধিক্ষণ পার করছিল। অন্য দিকে, আমার সাবেক দল তখন ক্ষমতার বলবীর্য এবং অন্যসব রসায়নে রীতিমতো অপরাজেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি বিএনপিতে যোগ দিই এবং আমার ত্রিমাত্রিক অভিজ্ঞতার আলোকে দলের জন্য কাজ শুরু করি।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রথম থেকেই দুটো ধারা ছিল। একটি ধারার রাজনৈতিক কর্মীরা মাঠে ময়দানে দিন-রাত পরিশ্রম করতেন। অন্য ধারায় ছিলেন লেখক-বুদ্ধিজীবী, বক্তা, চিন্তক, ধর্মবেত্তা এবং কূটনীতিতে পারঙ্গম ব্যক্তিরা। এরশাদের পতনের আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক অঙ্গনে দ্বিতীয় ধারাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত এবং নেতৃত্বের নিউক্লিয়াসরূপে প্রথম ধারাকে পরিচালনা করত। কিন্তু ১৯৯১ সালের পর থেকে রাজনীতিতে আমলা-ব্যবসায়ী এবং বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর মনোনীত এজেন্টরা ক্রমশ শক্তিশালী হতে হতে ২০২২ সালে এসে এতটা মহীরুহ আকার ধারণ করেছে যে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলে রাজনৈতিক কর্মীর দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে এবং রাজনৈতিক কর্মীদের নেতৃত্বদানকারী বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিতে মহামারি লেগে গেছে। ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সে শূন্যতা বিরাজ করছে তার অব্যবহিত পরিণতি হলো শূন্যতা পূরণের প্রাকৃতিক সূত্র।

বায়ুমণ্ডল, ভূ-মণ্ডল, নভোমণ্ডল কিংবা গভীর সমুদ্রের অতলান্তে যদি শূন্যতা সৃষ্টি হয় তাহলে ঝড়, ভূমিকম্প, উল্কাপাত কিংবা সুনামি যেমন অনিবার্য হয়ে পড়ে তদ্রূপ আমাদের দেশের রাজনীতির ময়দানের শূন্যতা পূরণের জন্য প্রকৃতি কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তা বর্তমান সময়ে বসে পক্ষাঘাতগ্রস্ত বুদ্ধিজীবীর দল কল্পনাও করতে পারছেন না। ফলে ‘ঝড়ে বক মরে হুজুরের কেরামতি বাড়ে’র মতো প্রবাদ প্রবচনের ঢঙে আমাদের দেশীয় রাজনীতিতে অনেক কিছু ঘটছে, যার কার্যকারণ নির্ণয়ে ব্যর্থতার কারণে আমরা এমন অনেক কিছুকেই ভয় পাচ্ছি যা মূলত ভয়ানক নয়। আবার অনেক কিছু নিয়ে হরদম ঠাট্টা মশকারা করছি যা কোনো অবস্থাতেই তুচ্ছতাচ্ছিল্যের বস্তু নয়।

বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে- সরকারি দল আওয়ামী লীগকে সবাই ভয় পায়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী লোকজন আওয়ামী লীগকে যতটা না ভয় পায় তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি ভয় পায় আওয়ামী লীগের লোকজন। সরকারি দলের মধ্যে নানান বিভক্তি দল ও উপদল সৃষ্টি এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের ক্ষেত্রে যারা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন তারা নিজ দলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে এমন অপতৎপরতা চালান যার কারণে আওয়ামী লীগের বিরাট অংশ যেভাবে হাহাকার করে যাচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

অন্য দিকে, আওয়ামী লীগে একটি সুপার নিউমারারি গ্রুপ তৈরি হয়ে গেছে যারা কোনো ক্রমেই রাজনীতির মাঠের লোক নন। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান উত্থান এবং ক্ষমতালাভ তাদের সক্রিয় কর্মকাণ্ড, চিন্তাচেতনা ও দয়া-দাক্ষিণ্যের জন্যই হয়েছে। সুতরাং তারা দলটির রাজনৈতিক ভাণ্ডার শূন্য করে সেখানে অরাজনৈতিক চিন্তাচেতনা সারবস্তু প্রবিষ্ট করার যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যার ফলে দেশের প্রাচীনতম দলটিকে রাজনীতির ময়দানে নেতৃত্ব দেবার মতো জনবল এখন সঙ্কটাপন্ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই দলটি আজকে যে পর্যায়ে পৌঁছেছে প্রায় একই পর্যায়ে বিএনপি পৌঁছে গিয়েছিল সেই ২০০৬ সালে, যার বৃত্ত ও বলয় থেকে বের হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অবিরত চেষ্টার পরও কাক্সিক্ষত সাফল্যের দেখা মিলছে না।

আওয়ামী লীগের অস্তিত্বের জন্য সঙ্কটময় অবস্থা সৃষ্টি করেছে তাদের অহেতুক ভয়-আতঙ্ক-সন্দেহ এবং অহমিকা। দ্বিতীয়ত, তারা বিএনপিকে যে মাত্রায় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তা এক দিকে বিএনপিকে আত্মপ্রত্যয়ী বানিয়ে ফেলছে আর অন্য দিকে অতিরিক্ত তুচ্ছতাচ্ছিল্যকারীর যে অনিবার্য পরিণতি তা আওয়ামী লীগের জন্য মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি করে চলেছে। এখানে দুটো ঘটনার কথা বলে আজকের শিরোনাম নিয়ে আলোচনা শুরু করব। প্রথমটি হলো একটি উপদেশ বাণী। যেখানে বলা হয়েছে, প্রতিকূল সময় সর্বদা যোগ্য মানুষ তৈরি করে আর অনুকূল সময়ে বেশির ভাগ মানুষ অযোগ্য হয়ে পড়ে। আমরা যদি এই উপদেশবাণীর আলোকে কোনো অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাই তবে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, বিএনপির মধ্যে লড়াই সংগ্রাম করার যোগ্যতম নেতাকর্মী অনেক অনেক বেশি, যার সংখ্যার তুলনা কেবল আওয়ামী লীগের অযোগ্য সুবিধাভোগীদের সংখ্যার সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে।

অতিরিক্ত তুচ্ছতাচ্ছিল্যের ফলে কত বড় রাজনেতিক বিপর্যয় ঘটতে পারে তার একটি চমৎকার উদাহরণ রয়েছে পাকিস্তানের রাজনীতিতে। জুলফিকার আলী ভুট্টো যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তখন সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল জিয়াউল হক। ভুট্টো তাকে ডাকতেন মাই ডিয়ার মাঙ্কি জেনারেল অর্থাৎ আমার প্রিয় বান্দরমুখী সেনাপতি বলে। জেনারেল জিয়া সহাস্যবদনে ভুট্টোর সেই উপহাস সহ্য করতেন এবং নিয়তির নির্মম পরিহাসে সেই জিয়া যখন প্রেসিডেন্ট হলেন তখন ভুট্টোর ফাঁসির রায় বাস্তবায়নের এক দিন আগে জুলফিকার আলী ভুট্টোর স্ত্রী নুসরাত ভুট্টো গেলেন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে জিয়ার আনুকূল্য বা করুণাপ্রত্যাশী হয়ে। কিন্তু সারাটি দিন গেটের বাইরে অপেক্ষা করলেন। প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ তো দূরের কথা প্রাসাদের সদর দরজাটিও অতিক্রম করতে পারলেন না।

আলোচনার এই পর্যায়ে আমরা আজকের শিরোনাম নিয়ে বিস্তারিত লিখব। কিন্তু তার আগে পরিষ্কার করে নেয়া ভালো যে, মানুষ কেন সব আলোচনায় কেবল বারবার বিএনপিকে নিয়েই কথা বলছে। কেন তাদের মাথায় একটিবারের জন্য আওয়ামী লীগের কথা আসছে না যেখানে পুরো জাতির মাথার ওপর দলটি চেপে বসে আছে। এই প্রশ্নের উত্তরে খুব সহজ করে বলা যায় যে, যেহেতু আওয়ামী লীগ মানুষের হৃদয়-কণ্ঠনালী-জিহ্বা এবং মস্তিষ্ক ভেদ করে ঊর্ধ্বগামী হতে গিয়ে মানুষের মাথার বোঝায় পরিণত হয়েছে সেহেতু সেই বোঝা নামিয়ে ফেলা অথবা বোঝার ভার থেকে উদ্ধার পাওয়ার আশা ছাড়া এই রাজনৈতিক দল নিয়ে মানুষের অন্য কোনো চিন্তা মাথায় আসে না।

অন্য দিকে মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ের সব আবেগ উচ্ছ্বাস, নির্যাতন, মানুষের আহাজারি, প্রতিবাদ অথবা কণ্ঠস্বর কিংবা আকুতি বিএনপির কণ্ঠে ধ্বনিত হোক এমন আশা নিয়ে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন ঘুমাতে যায় অথবা ঘুম থেকে জাগ্রত হয়। আওয়ামী লীগকে নিয়ে মানুষের হতাশা আছে। আছে রাগ ক্ষোভ ঘৃণা ও আতঙ্ক। অন্য দিকে বিএনপিকে নিয়ে মানুষের রয়েছে বহু আবেগ-আশা-আকাঙ্ক্ষা ও একরাশ স্বপ্ন। ফলে ক্ষমতাধররা বিএনপিকে যতই আঘাত করে ততই দলটির উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং দলের নেতাকর্মীরা বহুমুখী তাপ-চাপ মোকাবেলা করতে করতে রাজনীতির ময়দানে লড়াই করার সংগ্রামে কতটা পারঙ্গম হয়ে উঠেছে তার একটি মহড়া আমরা সম্প্রতি দেখতে পেয়েছি বরগুনাতে। মহরম আলী নামে এক পুলিশ কর্তার নেতৃত্বে অল্প কয়জন পুলিশ লাঠি হাতে যেভাবে শত শত ছাত্রলীগ কর্মীকে বেধড়ক পিটিয়েছে এবং পুলিশের মৃদু লাঠিচার্জে তারা যেভাবে প্রাণপণ দৌড়ে পালিয়েছে তার সঙ্গে যদি বিএনপিবিরোধী পুলিশি নির্যাতন, মামলা, হামলা, গুম, হত্যার তুলনা করা হয় এবং সামান্য কিছু নমুনা যদি জেলায় জেলায় প্রদর্শন করা হয় তাহলে কিসব দৃশ্য সৃষ্টি হবে তা চিন্তা করলে অনেকেরই আবেগে কান্না চলে আসবে।

উল্লিখিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নিয়ে মানুষের হতাশা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিএনপি নিয়ে আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হলো, দল হিসেবে বিএনপি কি সেই আশা-আকাক্সক্ষা ধারণ করার ক্ষমতা রাখে! অথবা তারা কি তাদের অতীত ভুল এবং অতীত পরাজয়ের কারণগুলো সুনির্দিষ্টভাবে মূল্যায়ন করে অনাগত দিনের সম্ভাব্য বিপত্তি এড়িয়ে অথবা তাদের রাজনৈতিক শত্রুরা যে পরাজয়ের ফাঁদ তাদের জন্য তৈরি করে রেখেছে সেই ফাঁদে পা না দিয়ে বিজয়ের মাকামে পৌঁছাতে পারবে? এ ব্যাপারে আমি সরাসরি মন্তব্য না করে আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় বিএনপির জয়-পরাজয়ের কিছু খতিয়ান তুলে ধরলেই সম্মানিত পাঠক খুব সহজে বুঝতে পারবেন যে, বিএনপি কি আবারো পরাজিত হতে চলেছে, নাকি মহাবিজয় তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

বিএনপি নামক দলটির প্রতিষ্ঠা এবং জনপ্রিয়তার পেছনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কঠোর পরিশ্রম, সততা, বুদ্ধিমত্তা এবং যোগ্য স্থানে উপযুক্ত লোকদের নিয়োগদান গুরুত্বপূর্ণ কারণ। দ্বিতীয়ত, বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ়তা। কথা দিয়ে কথা রাখার সুনাম, মোনাফেকি, ভণ্ডামি ও আর্থিক কেলেঙ্কারিমুক্ত থাকার ইমেজ তৈরি এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নিন্ধনীয় পন্থা অবলম্বন না করার চেষ্টার কারণেও দলটি সারা বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। অন্য দিকে দলটির বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতা লাভ আমার কাছে অলৌকিক বলে মনে হয়। আবার যেভাবে তারা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে তাও আমার কাছে নিয়তির নির্মম খেলা বলেই মনে হয়।

জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা লাভ ছিল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নেয়ামত। অন্য দিকে ১৯৯১ সালে এবং ২০০১ সালে বিএনপির ক্ষমতা লাভের পেছনে দুনিয়ার রাজনীতির কোনো হিসাব নিকাশ মেলাতে পারবেন না। পেছনের দরজার চক্রান্ত ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি বা ভারতের বিতর্কিত হস্তক্ষেপে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে এমন দুর্নাম ইবলিশও দিতে পারবে না। অন্য দিকে, প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যু, প্রেসিডেন্ট সাত্তারকে জিম্মি করে এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে পরাজয় এবং ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি কুখ্যাত ১/১১-এর ঘটনা আমার কাছে মহাভারতের নিয়তিনির্ভর যুদ্ধ বিগ্রহ এবং গ্রিক সাহিত্যের ট্র্যাজেডির মতোই মনে হয়। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট ভুল মারাত্মক অপরাধগুলো জনগণের হক নষ্ট কিংবা রাজনীতির ব্যাকরণ উল্টে দেয়ার মতো কুকর্মের জন্য বিএনপি কোনোকালে ক্ষমতাচ্যুত হয়নি।

আমার মতে, ২০০৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কালে বিএনপি একধরনের পরিবেশ ও পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে এবং ১/১১-এর পর থেকে আজ পর্যন্ত যে ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ তারা পেয়েছে সেখানে অতীতের মতো নিয়তি দ্বারা দলটি লাভ বা ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি। বরং নিজের কর্ম ভুল ভ্রান্তি-সিদ্ধান্তহীনতা ইত্যাদি কারণে একের পর এক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। তাদের প্রথম ভুল ছিল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসম্বরের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা এবং না করা নিয়ে দলের মধ্যে বিভক্তি। পরে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তারা যে একটি তুলনামূলক ভালো গণতান্ত্রিক পরিবেশ পেয়েছিল সেটিকে কাজে না লাগিয়ে জোটভুক্ত শরিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেক কাজ করেছে, যার একটিও সুবিবেচনাপ্রসূত ছিল বলে আমার মনে হয় না। এরপর ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা যেমন ভুল ছিল তেমনি তার চেয়েও বড় ভুল ছিল ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত।

২০১৪ সালে বিএনপি একধরনের আবেগ এবং আশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল বলেই আমি মনে করি। আর অন্য দিকে ২০১৮ সালে তারা একধরনের স্বপ্ন, একধরনের নস্টালজিয়ায় তাড়িত হয়েছিল। তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি মরুভূমির মধ্যে যেমন মরীচিকা দেখতে পায়, সমুদ্রে পথ হারানো নাবিক যেমন মৎস্য কুমারীর সাক্ষাৎ পায় তদ্রূপ ২০১৮ সালের ঐক্যফ্রন্ট-যুক্তফ্রন্টের সাক্ষাৎগুলোও তেমনি ছিল বলেই মনে হয়। ফলে সেই ২০০৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিটি রাজনৈতিক বাঁকে বিএনপি যে ভুল করেছে তা চলমান সময়ে যদি ইতিহাসের চরম বাস্তবতা দ্বারা পর্যালোচিত হয় তবে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, বিএনপির যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে। হয়েছে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা। রাজনৈতিক যুদ্ধের সুদীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে দলের নেতাকর্মীদের যে সক্ষমতা দৃঢ়তা এবং দলের প্রতি আনুগত্য বারবার প্রমাণিত হয়েছে তা যদি চলমান কূটতালে পর্যুদস্ত হয় অথবা বিএনপি যদি আবারো একই ভুল করে তবে অপমানিত পরাজয় নয়; বরং রাজনীতি থেকে নির্বাসিত হওয়া অনিবার্য হয়ে পড়বে।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য