বাংলাদেশে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

5 August 2018

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
Image captionবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশে গত ২৯ জুলাই দুই বাসের প্রতিযোগিতায় বিমানবন্দর সড়কে দুইজন শিক্ষার্থী নিহত হবার পর থেকে শুরু হয়েছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ঘটনার সাতদিন পর আজ প্রথমবারের মত বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সকালে গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি পৌনে এক ঘণ্টা কথা বলেন, এর মধ্যে প্রায় ১৫ মিনিটই তিনি এ বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

ঘরে ফেরার আহ্বান

এ সময় তিনি অন্তত ছয়বার শিক্ষার্থীদের প্রতি ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।

সেই সঙ্গে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আহ্বান জানান। কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের কোন ধরণের ক্ষতি হবার আশংকাও ব্যক্ত করেন কয়েকবারই।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত থেকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
Image captionআন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত থেকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লাইসেন্স পরীক্ষা নিয়ে

বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হয়েছে। “কারণ আমাদের ছোট বাচ্চারা করেছে, খুব ভালো কথা। কিন্তু এখন আর তাদের দেখার দরকার নেই। তারা যদি কেউ ভলান্টিয়ার করতে চায়, পুলিশকে বলেছি তাদের কাজে লাগাতে পারে।”

“কিন্তু প্রত্যেকটা গাড়ি চেক করা, গাড়ির কাগজ-ফিটনেস দেখা, সবকিছু দেখা, এটা পুলিশের দায়িত্ব। আমরা ট্রাফিক সপ্তাহ চালু করেছি, এটা তারা দেখবে।”

গুজব নিয়ে

তিনি শনিবারের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং গুজব সম্পর্কে কথা বলেন।

“যেহেতু আমরা দেখতে পাচ্ছি একটা শ্রেণী আছে যাদের কাজই হচ্ছে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা। যারা চেষ্টা করে যাচ্ছে, এমন একটা পরিস্থিতিতে একটা অবস্থান তৈরি করা যায় কিনা।”

“যেমন কালকে তারা ফেসবুকে রিউমার দিল, যে আওয়ামী লীগ অফিসে নাকি চারজনকে মেরে লাশ রেখে দেয়া হয়েছে। এবং আওয়ামী লীগ অফিসের ওপর আক্রমণ। তো এই আক্রমণটা কারা করলো?”

আরো পড়তে পারেন:

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন: কী ঘটেছিল ধানমণ্ডিতে?

নিরাপদ সড়ক: জিগাতলায় মিছিলে কাঁদানে গ্যাস

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে ‘সুজন’ সম্পাদকের বাড়িতে হামলা

নেতারা আওয়ামী লীগ অফিসে জিম্মি হয়ে ছিলেন?

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আওয়ামী লীগের ১৭/১৮ জন কর্মী আহত হয়েছেন, তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তিনি বলেন তার কাছে খবর গিয়েছে যে অফিসে সমানে ঢিল মারা হচ্ছে এবং অফিসের ভেতর কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ছোড়া ঢিলে আহত হচ্ছে।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “তারা ছাত্র যদি হয়, তাহলে তাদের ব্যাগে বই থাকবে। পাথর থাকবে কেন? আর সেই পাথর আওয়ামী লীগ অফিসে তারা ছুড়ে মেরেছে।”

“আমার কাছে বারবার ফোন আসছে যে, আমরা তো অফিসে জিম্মি হয়ে আছি, আমি বলেছি ধৈর্য ধরো। বলছে আমরা তো আহত হয়ে যাচ্ছি, আমি বলেছি হোক আহত। ধৈর্য ধরে থাকো-কতটুকু কি করতে পারি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৈঠক করে। এরপর শিক্ষার্থীদের একটি দলকে আওয়ামী লীগ অফিস ঘুরিয়ে দেখানো হয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা কিছু খুঁজে পায়নি। যারা গুজব ছড়িয়েছে তাদের কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে

তিনি গুজব ছড়ানোর জন্য কিছু গণমাধ্যমকে দায়ী করে প্রশ্ন তোলেন, “মিথ্যাচার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার কি অধিকার তাদের আছে?”

“কিন্তু অপপ্রচার চালিয়ে দেশের মধ্যে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা—যারা এইগুলা করতে পারে তারা এই কোমলমতি শিশুদের ওপর যে আঘাত করবে না, বা তাদের কোন ক্ষতি করবে না, যারা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়, যেকোনো একটা ভয়াবহ অবস্থা তারা করতে পারে।”

‘তারা যেটুকু করেছে যথেষ্ট’

প্রধানমন্ত্রী গুজবে কান দিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ারও আহ্বান জানান।

“সেজন্য আমি সব অভিভাবক, পিতামাতাকে আমি অনুরোধ করবো আপনাদের শিশুকে, ছেলেমেয়েকে আপনারা ঘরে রাখেন। তারা যেটুকু করেছে যথেষ্ট। আমরা তাদের বাধা দিইনি। কিন্তু এখন যখন এই তৃতীয় পক্ষ নেমেছে, যদি কোনো অঘটন যদি ঘটায়, তার দায়-দায়িত্ব কে নেবে?”

“সেজন্য আমি আপনাদের সতর্ক করতে চাই যে, দয়া করে আপনারা আপনাদের ছেলে মেয়েদেরকে স্কুলে পাঠান। কারণ পড়াশোনা তাদের দায়িত্ব এবং প্রত্যেকটি স্কুলের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলকে আমি অনুরোধ করব, আপনারা আপনাদের ছাত্রদের ক্লাসে ফিরিয়ে নেন।”

আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষাখাতে অনেক অবদান রেখেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আন্দোলনকারীরা বয়সে অনেক তরুণ উল্লেখ করে, প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের এক পর্যায়ে কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “আমি চাইনা আর কোন মায়ের কোল খালি হোক, কেউ সন্তানহারা হোক। কারণ হারানোর বেদনা আমার থেকে বেশি কেউ জানেনা।”

শাহবাগ থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি জিগাতলার দিকে যেতে চেয়েছিল

সম্পর্কিত বিষয়