today-is-a-good-day
Friday, March 29, 2024

বাংলাদেশের সাবমেরিন ঘাটি নিয়ে ভারত কেন দুশ্চিন্তায়?

কক্সবাজারের দক্ষিণে কুতুবদিয়া দ্বীপের পেকুয়াতে বাংলাদেশ সাবমেরিন ঘাটি করার কাজ চীনকে দিয়েছে।

অনেকটা বারুদের মতই ফুঁসে উঠেছে ভারত। তারা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। কেন উদ্বিগ্ন সেটি ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের ডিফেন্স নিয়ে আগ্রহী যারা তারা যখন MRCA নিয়ে দুশ্চিন্তায় তখন ভারত সামান্য সাবমেরিন ঘাটি নিয়ে এত চিন্তিত কেন হবে? আমাদের তো MRCA নেই। তাইলে আসল সমস্যাটি কোথায়?

সাবমেরিন যখন ক্রয় করা হয় এরপর ভারত অনেকটা প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করে এবং জানান দেয় যে তারা এই সিদ্ধান্তে রুষ্ট। ভারতের অধিকাংশ চ্যানেলেই টক শো শুরু হয়। টপিক বাংলাদেশ কেন চীন থেকে সাবমেরিন কিনল?

এমন একটি ভিডিও ইউটিউবে পাবেন যেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত বীণা সিক্রি, দুই জন সামরিক বিশ্লেষক বাংলাদেশের সাবমেরিন কেনা ভারতের জন্য কতটা হুমকি সেটা নিয়ে টক শো তে কথা বলতেছেন।

সমস্যা হল সাবমেরিন কেনার ব্যাপারটি যে হতে যাচ্ছে সেটি ভারত বুঝতে পারেনি অথবা আটকাতে পারেনি। অনেকটা হুট করেই চীন থেকে সাবমেরিন চলে আসে। সাবমেরিন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভারতের চরম হতাশার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেই বলেন আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোন দেশ থেকে কি অস্ত্র কিনব সেটা আমাদের নিজস্ব ব্যাপার, অন্য কোন দেশের কথা শুনতে বাংলাদেশ বাধ্য নয়।

এখন প্রশ্ন হল এত অস্ত্র থাকতে কেন সাবমেরিন নিয়ে এত উৎকণ্ঠা? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের ইউবোট গুলি মিত্র শক্তির বুকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। কারন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক জাহাজ গুলির নিরাপত্তা নিয়ে মিত্র শক্তিকে সব সময় দুশ্চিন্তা করা লাগত। অনেক ক্ষেত্রে যুদ্ধজাহাজ দিয়ে এসকোর্ট করেও রক্ষা পাওয়া যেত না।

হ্যা ঠিক ধরেছেন। সাবমেরিন কে স্ট্রাটেজিক ওয়েপন বলা হয়ে থাকে এর ভূমিকার জন্য। এমন মনে করার কোন কারন নেই যে সাবমেরিন দিয়ে শুধু শত্রু জাহাজ ধ্বংস করা হয়, আর কোন কাজ নেই এর। যুদ্ধের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সাপ্লাই চেইন ধ্বংস করা। যত শক্তিশালী দেশ হোক না কেন যদি সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ ব্যাবস্থা ধ্বংস হয় তাহলে সে দেশ মাথা নত করতে বাধ্য।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও আমরা বলতে পারি সাবমেরিন দিয়ে আমরা গভীর সমুদ্রে মিয়ানমারের সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজের উপর অবরোধ আরোপ করতে সক্ষম। গভীর সমুদ্রে মিয়ানমারের মত দেশের নৌজাহাজ খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না সেটা তাদের জাহাজের সি স্টেট কম থাকার কারনে। মিয়ানমার নৌবাহিনীতে যত জাহাজ আছে অধিকাংশ জাহাজ গভীর সমুদ্রে সর্বাবস্থায় মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম নয়। কিন্তু বাংলাদেশের বানানো তুলনামূলক কম ওজনের জাহাজের ডিজাইন ও এমন ভাবে করা যে সেটি সি স্টেট ৪ এর অধিক পরিবেশে অনায়াসে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে শত্রু দেশের নৌপথ বন্ধ করার সব থেকে বড় অস্ত্র হল সাবমেরিন।

ভীতি যুদ্ধের অনেক বড় একটি অংশ। আপনি শত্রুকে ভীত করে দিয়ে মনোবল ধ্বংস করে দিতে পারেন যা আপনার যুদ্ধ জয়কে ত্বরান্বিত করবে। এক স্কোয়াড্রন মাল্টিরোল বিমান যতটুকু ভয় সঞ্চার করতে পারে শত্রুর মনে একটা সাবমেরিন তার থেকে অনেক বেশি ত্রাস সৃষ্টি করতে সক্ষম। আমরা MRCA নিয়ে লাফালাফি করলেও যারা সামরিক এনালিস্ট (বাংলাদেশ বা ভারতের) তারা ঠিকি বুঝতে পেরেছেন এই স্ট্রাটেজিক ওয়েপন থাকার হুমকি কতটুকু।

এর আরেকটি দিক হল, শত্রু যদি নৌ অবরোধ দেয় সেটা ভাঙ্গতেও সব থেকে বড় ভূমিকা এই সাবমেরিনের যেটা MRCA আপনাকে দিতে পারবে না।

এজন্যই বঙ্গোপসাগরে চীনের যুদ্ধজাহাজ প্রবেশ করলেই সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে ভারত। এখন সেই ভীতির সাথে যুক্ত হয়েছে সাবমেরিন ঘাটি। ডেফ্রেস সাবমেরিন ঘাটি করবে বলে অনেক আগেই পোস্ট করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল আনুমানিক ১০-১২ টা সাবমেরিন ভীড়তে পারে এমন ভাবেই আমাদের বেজ তৈরি করা হবে।

প্রশ্ন হল চীনের মত দেশ যখন এই ধরনের ঘাটির কাজ পায় তখন প্রশ্ন থেকেই যায় বঙ্গোপসাগরে কি ভারত তার প্রভাব হারায়ে ফেলবে??

কূটনৈতিক ভাষা খুব মজার। এখানে ভাবখানা এমন যে কারো কিছুই হয়নি। ঠিক তেমনি ভাবে বাংলাদেশ বলেছে এই সাবমেরিন ঘাটি চীনের স্ট্রিং অব পার্লসের অংশ নয়। চীন ও দাবি করছে না যে এটা তাদের স্ট্রিং অব পার্লসের অংশ। কিন্তু ভারত ঠিকি দুশ্চিন্তায় মরছে। অথচ বেশ নীরবে কোন উচ্চবাচ্য না করেই বাংলাদেশ এরকম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কাজ চীনকে দিয়ে দিল। ভারতের দুশ্চিন্তা হয়ত একটু কম হত যদি বাংলাদেশ সাবমেরিন চীন থেকে না কিনে অন্য দেশ থেকে নিত। কিন্তু বাংলাদেশ চীন থেকেই সাবমেরিন সংগ্রহ করেছে আবার চীনকে দিয়েই ঘাটি নির্মাণ করছে। চীন ভারত সম্পর্ক ভাল নয়। ভারত স্বাভাবিক ভাবেই মনে করছে এর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে চীনের উপস্থিতি আরো বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ অন্যান্য ফোর্স থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে নেভিকে। কেন সেটা অনেক পোস্টে ব্যাখ্যা করেছি। সমুদ্র আমাদের জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে যদি বলা হয় সমুদ্র হল বাংলাদেশের স্বাধীনতা তাহলে সেটা অত্যুক্তি হবে না। ল্যান্ড লকড নেপাল বা ভুটান ভাল করেই জানে একটা সমুদ্র কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ভারত আমাদের তিন দিক ঘিরে রাখলেও আমাদের সমুদ্রের কারনে আমাদের উপর নিয়ন্ত্রন করা কঠিন হবে। আর এই সমুদ্রের নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রয়োজন নেভির সক্ষকতা বৃদ্ধি যেটা বাংলাদেশ নেভিকে ত্রি মাত্রিক ফোর্সে রুপান্তর করার মধ্যমে প্রমাণ করেছে।