বন্যায় সুনামগঞ্জে ২৭০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত

পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন লাখো মানুষ

বন্যা

সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ব্রিজ ঢাকা ট্রিবিউন

বন্যার কারণে সুনামগঞ্জে ২৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, জেলায় সবমিলিয়ে ১ হাজার ৪৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২২০টি বিদ্যালয় বন্যা কবলিত হয়েছে। জেলার ৮০% শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলমগ্ন থাকায় বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রমও।

সুনামগঞ্জের মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান, সুনামগঞ্জে ৩২৫টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৩৩টি বিদ্যালয় এবং ৯২টি মাদ্রাসা। বন্যার কারণে ৫০টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি জানান, মূলত জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্যাকবলিত হয়েছে।

সুনামগঞ্জের বাসিন্দা শাহজাহান চৌধুরী জানান, শহরের কিছু কিছু এলাকায় পানি উঠলেও বৃহস্পতিবার (১৯ মে) রাত থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে, বন্যার কারণে জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার এলাকার জনসাধারণ দুর্ভোগে রয়েছে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে ছাতক-সুনামগঞ্জ সড়কের দোয়ারাবাজার উপজেলাধীন দোহালিয়া ইউনিয়নের পানাইল গ্রামের পশ্চিমাংশের ব্রিজটি।

সুনামগঞ্জে পানিবন্দি দিন কাটাচ্ছেন লাখো মানুষ ঢাকা ট্রিবিউন

দোয়ারাবাজারের সাংবাদিক তাজুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার পাহাড়ি ঢল ও বন্যার তোড়ে নিমিষেই ভেঙে যায় ব্রিজটি।

একই ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর ব্রিজটিও আংশিকভাবে ধসে গেছে বলে তিনি জানান।

ফলে বন্ধ হয়ে গেছে জেলা শহর সুনামগঞ্জের সঙ্গে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ।

এছাড়া, গ্রামীণ এলাকার রাস্তাঘাটের প্রায় সব স্থানেই কোমর ও বুক সমান পানি থাকায় জেলা ও উপজেলা সদরের সঙ্গে ৯ ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

ফলে, পরিবার, পরিজন ও গবাদি পশু-পাখি  নিয়ে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন বগুলা, বাংলাবাজার, লক্ষীপুর, সুরমা, দোহালিয়া, নরসিংপুর ও দোয়ারা সদরসহ উপজেলার ৯ ইউনিয়নের লাখো মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অথৈ পানির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে সুরমা ইউনিয়নের বৈঠাখাই কমিউনিটি ক্লিনিক।

অন্যদিকে, পানিতে পঁচে গিয়ে বিনষ্ট হয়েছে বন্দেহরি, গোজাউড়া ও নাইন্দার হাওরসহ সবগুলো মাঠের অধিকাংশ বোরো ফসল ও মৌসুমি শাকসবজি।

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চাষ করা পাকা ধান ঘরে তুলতে না পারায় আহাজারি থামছে না প্রান্তিক বর্গাচাষীসহ ভুক্তভোগী কৃষকদের।

ঘরের মেঝেতে হাঁটু ও কোমর সমান পানি থাকায় চুলায় হাড়িও বসছে না অনেক পরিবারের। ভেসে গেছে অর্ধশতাধিক পুকুরের কয়েক কোটি টাকার মাছ ও মাছের পোনা।

ছাতকের সাংবাদিক সৈয়দ হারুনুর রশিদ জানান, বন্যার পানি কিছুটা কমলেও ছাতকের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

ছাতক শহরে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও নিম্নাঞ্চলের মানুষ অনেকটাই আশ্রয়হীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। বন্যার কারণে ছাতক উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৫ হাজার বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

জানা গেছে, ছাতকে বন্যাকবলিত অসহায় ও অসচ্ছল পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবারসহ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

এছাড়া, শুক্রবার ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।