জীবনের হাফ সেঞ্চুরী ও কিছু বিক্ষিপ্ত ভাবনা 

Minar Rashid

জীবনের হাফ সেঞ্চুরী ও কিছু বিক্ষিপ্ত ভাবনা
===========================

এক .

জীবনের ৫০ টি বছর এক এক করে পার করে ফেলেছি । আজকের দিনটি এমনই একটি বিশেষ ফলক চোখের সামনে তুলে ধরেছে । মনের মধ্যে আজ অনেকগুলি বিক্ষিপ্ত ভাবনা ভর করেছে ।
অজস্র শুভাকাঙ্খীদের মধ্যে যারা এই দিনটিতে আমার জন্যে বিশেষভাবে দোয়া করেছেন এবং শুভেচ্ছা জানিয়েছেন , তাদের সবাইকেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ।

ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি , সেই ভাবনাটিও মনের মধ্যে উদয় হচ্ছে । আমাদের চেয়ে বিশ বছরের সিনিয়র ও লন্ডন প্রবাসী বিশিষ্ট কলামিস্ট ক্যাপ্টেন এফ আর চৌধুরী প্রশ্ন করেছিলেন , মিনার , আমি কি দেশের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনটি দেখে যেতে পারবো ? তাঁর এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে নিজের মনের মধ্যেও আজ একই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ।

পরবর্তি প্রজন্মকে আমরা কেমন একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে যাচ্ছি , এখান থেকে কখন কাঙ্খিত উত্তরণ হবে , সেই উত্তরণের জন্যে আমাদের আর কী কী খরচ করতে হবে , সেই চিন্তাটিও আজ মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে । কোনও চিন্তাশীল মনই এই চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে পারে না ।

আগেকার দিনে এক রাজাকে হত্যা না করলে অন্য রাজার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা থাকত না । রাজ সিংহাসনটা ছিল মানবজাতির জন্যে অভিশাপের মত । সেই অভিশাপকে বর্তমান রাষ্ট্রবিজ্ঞান আশীর্বাদ বানিয়ে ফেলেছে ।
তন্মধ্যে যারা রক্তপাত ছাড়াই শাসক শ্রেণী বা সরকার বদলানোর উপায় আয়ত্ত্ব করে ফেলেছেন – তারা এই দুনিয়ায় স্বর্গসুখ রচনা করে বসেছেন । আমরাও এই ধরণের ভাগ্যবান জাতির কাতারে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম । সেখান থেকেই আমাদেরকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে । এই সর্বনাশটি আমাদের কে বা কারা করেছে ? এদেরকে যেভাবেই হোক খুজে বের করতে হবে ।
এই অবস্থা থেকে জাতি আবার উদ্ধার পাক, বড় ধরনের কোনওরূপ ক্ষতি বা খরচ ছাড়াই সরকার পরিবর্তনের উপায়টি আবার ফিরে আসুক – প্রিয় জন্মভূমির জন্যে সেই কামনাটিই আজ করছি ।

দুই.

চোখ কান খোলার পর এই দেশ ও সমাজটিকে যেভাবে দেখতে পেয়েছিলাম , আজ অর্ধ শতাব্দী পার করার পর মনে হচ্ছে আমরা সামনে নয় , আরো ৪০/৫০ বছর পিছিয়ে গিয়েছি । আগে এদেশে সকল মত ও সকল পথের মানুষেরা সামান্য ঝগড়া -বিবাদ -কলহ করলেও এক সঙ্গেই অন্তত এই দেশটিতে থাকতে পারতো ।

কিন্তু সম্মুখের ৪০/৫০ বছর এমন ভাবে সবগুলি দল এক সঙ্গে এদেশে থাকতে পারবে কি না – তা নিয়ে আজ মনে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে । এখন এমন চেতনা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে যে একদল দেশে থাকলে অন্য দলকে দেশের বাইরে কাটাতেই হবে । এটাই এই জাতির নিয়তি হয়ে পড়েছে ।

সিঙ্গেল ইউনিটের চমৎকার এই জাতি রাষ্ট্রটিকে এভাবে বিভাজিত করার ক্ষেত্রে পাশের দেশের সুবীর ভৌমিকদের ভূমিকায় খুব একটা রাখঢাক নেই । সুবীর ভৌমিকরা এই দেশে এক দলকে অন্য দলের বিরুদ্ধে , এক বাহিনীকে অন্য বাহিনীর বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে বড়ই প্রশান্তি অনুভব করে । রাজাকার -মুক্তিযাদ্ধা বিভেদ এদেশবাসীর গলার কাটা হলেও সুবীর ভৌমিকদের জন্যে তা আশীর্বাদ হিসাবে দেখা দিয়েছে ।

সুবীর ভৌমিকদের দেশে চরম মৌলবাদী একটি দল ক্ষমতায় এসেছে । তজ্জন্যে গণতন্ত্রকে বিদায় জানিয়ে তারা মৌলবাদকে মোকাবেলা করে নি । সুবীর ভৌমিকরা জানেন যে কার্য কর গণতন্ত্র চালু থাকলে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি ঠিকভাববে কাজ করলে উগ্রবাদী চিন্তাভাবনাও একটি রাষ্ট্রের কোনও ক্ষতি করতে পারে না । অথচ এরা সেই জুজুর ভয় দেখিয়ে আমাদের দেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করার সকল ব্যবস্থা করে দিয়েছে । এরা গণতন্ত্রের যে মেওয়াটি খাচ্ছে তা আমাদেরকে খেতে দিচ্ছে না ।

এত হতাশার মাঝেও কিছু আশার প্রদীপ দেখা যাচ্ছে ।
আমাদের সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করার সুবীর ভৌমিক ও মোজাবাবু গংদের আরো একটি চক্রান্ত বোধহয় নস্যাৎ করা হয়েছে । এবার হাতে নাতে ধরা খেয়েছেন । এই সুবীর ভৌমিককে তার এই কর্মটিতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছেন ও তার সাক্ষাত্কার প্রচার করেছেন ৭১ টিভির এক উপস্থাপিকা । সেই সাক্ষাৎকারে সুবীর ভৌমিক গর্ব ভরে জানিয়েছেন , তিনি ঘাষ কেটে সাংবাদিক হন নি যে তার প্রকাশিত সংবাদটি মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়ে পড়বে ।

আজ প্রমাণ হয়েছে এই সুবীর ভৌমিকরা সব সময় না হলেও মাঝে মাঝে ঘাষ কাটেন । এই ঘাষ তারা কাটেন আমাদের দেশের সকল মানুষকে আবাল জ্ঞান করে । এরা মনে করে এদেশের মানুষ ঘাষ খেয়েই বড় হয় ।

আমরা দেখেছি , রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে পুরো জাতির মধ্যে এক ধরনের ঐক্যবোধ সৃষ্টি হয়ে গেছে । এটাকেই সুবীর ভৌমিকরা তাদের জন্যে অশনি সংকেত জ্ঞান করলেন । এটাকে প্রতিহত করতে এসে সুবীর ভৌমিকরা আরো নগ্নভাবে ধরা খেয়েছেন । এই ঘটনাটি জাতীয় ঐক্যের বোধ ও তাগিদটিকে আরেক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে ।

এই সুবীর ভৌমিক এবং তাদের এদেশীয় দোসর মোজা আর গোজা বাবু ও হলুদ সাংবাদিকতার গ্ল্যামার গার্লদের পাশ কাটিয়ে পুরো জাতির মধ্যে এক ধরণের ঐক্য সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে । এই শুভ বোধ ও ভাবনাটি তার কাঙ্খিত জায়গায় পৌছে যাক , এই কামনা করছি ।