‘কেউ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হননি’

‘কেউ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হননি’

প্রথম আলো
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
১৬ জুন ২০১৯,

রুমিন ফারহানা

রুমিন ফারহানাবর্তমান সংসদ নির্বাচিত নয় বলে দাবি করেছেন সংরক্ষিত নারী আসনের বিএনপিদলীয় সাংসদ রুমিন ফারহানা। তিনি সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা কেউ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হননি।’

জাতীয় সংসদে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর রোববার সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে রুমিন ফারহানা এ কথা বলেন।

রুমিন বলেন, সংবিধানের ৬৫ (২) ধারায় বলা আছে, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হবে।… এখানে যারা আছেন তাঁরা কয়জন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন করুন।

সাংসদ রুমিনের এ বক্তব্যের সময় সরকারদলীয় সাংসদ ও জাতীয় পার্টির সাংসদেরা হইচই করেন।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেলে অধিবেশন শুরু হয়। পরে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়াও অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। সম্পূরক বাজেটের ওপর আওয়ামী লীগের পাঁচজন, জাতীয় পার্টির চারজন, বিএনপির তিনজন ও গণফোরামের একজন সাংসদ বক্তব্য দেন।

সাংসদ রুমিন ফারহানা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করে বক্তব্য শুরু করলে সংসদে উত্তেজনা দেখা দেয়। তখন রুমিনের উদ্দেশ্যে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘আপনাকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব, আপনি এমন কোনো কথা বলবেন না যেটাতে অপরপক্ষ উত্তেজিত হবে এবং সংসদ পরিচালনায় ব্যত্যয় ঘটবে। আমি চাই সংসদটা প্রাণবন্ত হোক।’

রুমিন বলেন, ‘যখন আমরা সংসদে যোগ দিই, তখন আমাদের বলা হয়েছিল আমরা আমাদের কথা বলতে পারব। কিন্তু আমার প্রথম দিনের বক্তব্য ছিল দুই মিনিট, আমি এক মিনিটও শান্তিতে কথা বলতে পারিনি। একই ঘটনা আজকেও ঘটছে। তাহলে আমরা কোন গণতন্ত্রের কথা বলি, কোন বাক স্বাধীনতার কথা বলি, কোন সংসদের কথা বলি। এভাবে তো একটা সংসদ চলতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি আমার দলের কথা বলব, তারা তাদের দলের কথা বলবে। কিন্তু আমি উঠে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সংসদ যদি এভাবে উত্তেজিত হয়ে যায় …। এ সময় স্পিকার রুমিনকে বাজেটের বাইরে কথা না বলার অনুরোধ জানান।

এ পর্যায়ে রুমিন ফারহানা বলেন, একটা সরকারের সক্ষমতা ক্রমশ বাড়ার কথা, কিন্তু এই সরকারের সক্ষমতা ধীরে ধীরে কমছে। ২০১০-১১ থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত বাজেটের মাত্র ৭৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। বাজেট বাস্তবায়নে ঘাটতি দেখতে পাই।

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে রুমিন বলেন, জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে যতগুলো স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করেছে, তাতে তাদের ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে গেছে।

বর্তমান সংসদ নির্বাচিত নয় দাবি করে রুমিন বলেন, ‘এরপরও আমরা সংসদে যোগ দিয়েছি। কারণ আমাদের মিছিল করতে দেওয়া হয় না, জনসমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। ভেবেছি আমরা সংসদে একটা জায়গা পাব। যেখানে আমরা দেশের কথা, জনগণের কথা, আমাদের নেতা-কর্মীদের কথা বলতে পারব।’ ৩০০ আসন লুট করে নেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে রুমিন বলেন, ‘তাঁদের এতটুকু ধৈর্য নেই যে, আমার মতো একজন সংসদ সদস্যের এতটুক কথা শুনবার।’

এ সময় স্পিকার বলেন, আপনি এমন কথা বলবেন না, যেটা এক্সপাঞ্জ করতে হবে। তখন রুমিন বলেন, ‘এটা আপনার (স্পিকার) এখতিয়ার, আমার কিছু করার নেই। এ সময় রুমিন দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা, মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, দেশে আইন আছে, আদালত আছে। কিন্তু আইনের শাসন নেই। গত এক মাসে ১৬৮ জন হত্যার শিকার হয়েছে। ১ বছরের শিশু থেকে ১০০ বছরের বৃদ্ধা ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

পরে স্পিকার বলেন, সম্পূরক বাজেটের বাইরে দেওয়া রুমিনের অসংসদীয় শব্দগুলো সংসদের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হবে।

রুমিনের আগে বক্তব্য দেন বিএনপি দলীয় সাংসদ হারুন উর রশীদ। তিনি নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বলেন, তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। তাদের সরিয়ে দেওয়া উচিত। তারা বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
হারুন উর রশীদ উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আজকে সংসদ নেতা এখানে আছেন। অনেকে আমাদের বলেন, আপনারা সংসদকে অবৈধ বলেছেন কেন? আজকে স্পষ্টভাবে বলছি, আমরা ছয়জন সংসদে প্রবেশ করার মধ্য দিয়ে এই সংসদের বৈধতা পাবে না, পাবে না, পাবে না।’
পরে বগুড়া থেকে নির্বাচিত বিএনপির সাংসদ মোশাররফ হোসেন বক্তব্য দেন। সংসদের বাজেট অধিবেশন সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।