আমি বলির পাঁঠা হয়েছি: সামিয়া রহমান

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আজ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সামিয়া রহমান। এ সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ও আইনজীবী তুরিন আফরোজ উপস্থিত ছিলেন

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আজ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সামিয়া রহমান। এ সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ও আইনজীবী তুরিন আফরোজ উপস্থিত ছিলেন
ছবি: মোশতাক আহমেদ

একাডেমিক গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির ঘটনায় শাস্তি হিসেবে পদাবনতি হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান বলেছেন, তাঁকে  ষড়যন্ত্র করে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাননি। এ বিষয়ে প্রকৃত সত্য উদ্‌ঘাটন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কঠোর নির্দেশ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেও আছেন।

আজ সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সামিয়া রহমান এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলন আরও উপস্থিত ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ এবং আইনজীবী তুরিন আফরোজ।

সামিয়া রহমান দাবি করেন, শিকাগো জার্নালের অ্যালেক্স মার্টিন নামে যে ব্যক্তির চিঠির (ই-মেইল) কথা বলে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে, পদাবনতি করা হয়েছে, সেই চিঠিটি আদতে ভুয়া। ই-মেইলটিও ভুয়া।

এ সময় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিসহ প্রশাসনের কারও কারও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সামিয়া রহমান। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি শুরু থেকেই প্রতিহিংসাপরায়ণ ছিল। তদন্ত কমিটি ও সিন্ডিকেট সম্পূর্ণ একপেশে, বিদ্বেষপ্রসূত ও পক্ষপাতদুষ্ট শাস্তির ব্যবস্থা করেছে।

এই ঘটনায় গঠিত ট্রাইব্যুনালের এক সদস্যের বক্তব্যের সূত্র ধরে সামিয়া রহমান বলেন, সিন্ডিকেট চাইলে ট্রাইব্যুনালের সুপারিশ লঘু বা মওকুফ করতে পারে, কিন্তু ট্রাইব্যুনালের বাইরে গিয়ে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত দিলে সেটি ন্যায় বিচারের পরিপন্থী হয়।

সামিয়া রহমান বলেন, এ ঘটনার জন্য জার্নালের রিভিউয়ার ও বোর্ডের শাস্তির সুপারিশ ছিল। তিনি বলেন, ‘তাঁদের শাস্তি হয় না, কারণ তাঁরা প্রতিষ্ঠিত বলে বিশ্ববিদ্যালয় তা সুকৌশলে এড়িয়ে যায়, আর বলির পাঁঠা হই আমি। প্রতিহিংসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাজনীতির নোংরামির চরম শিকার হলাম আমি।’

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদাবনতি দিয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে তিনি পদোন্নতির জন্য আবেদন করতে পারবেন না। আর শাস্তি পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান এখন শিক্ষা ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে আছেন। ছুটি শেষে ফেরার পর তিনি পদোন্নতি পেয়ে যেতেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভাগে যোগ দেওয়ার পর তাঁকে আরও দুই বছর প্রভাষক পদে চাকরি করতে হবে।

জানা যায়, সামিয়া ও মারজানের শাস্তি নির্ধারণে গঠিত ট্রাইব্যুনাল দুজনের একটি করে ইনক্রিমেন্ট বাতিলের শাস্তি প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিন্ডিকেট সেই প্রস্তাব নাকচ করে দুজনকে পদাবনতি দিয়েছে।

অভিযোগটি তদন্তে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) নাসরীন আহমাদকে প্রধান করে একটি কমিটি করে সিন্ডিকেট। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৯ সালে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সামিয়া-মারজানের চৌর্যবৃত্তির অভিযোগটির সত্যতা মিলেছে। তবে কমিটি কোনো শাস্তির সুপারিশ করেনি। সামিয়া-মারজানের শাস্তি নির্ধারণের জন্য গত বছরের অক্টোবরের সিন্ডিকেট সভায় আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য মো. রহমত উল্লাহকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল ইনক্রিমেন্ট কাটার মতো ‘লঘু শাস্তির’ সুপারিশ করলেও সিন্ডিকেট তা নাকচ করে দিয়েছে।