বাজেটের কপি ছিঁড়ে সংসদ অবমাননা করেছেন বিএনপির এমপিরা : কাদের

আওয়ামী লীগের সাধালণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি দলীয় এমপিরা বাজেট প্রত্যাখ্যান করার নামে অনুমোদিত বাজেটের কপি ছিড়ে ফেলে দিয়ে সংসদের প্রতি চরম অবমাননা করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সংসদ ভবন এলাকায় তাঁর সরকারি বাসভবনে আয়োজিত আনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট অনুমোদন পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানাতেই এই সংবাদ সংম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, ‘বাজেট ছাড়া একটি রাষ্ট্র তারা দেখতে চেয়েছিলেন। তারা দেশে একটি হতাশাজনক অবস্থা দেখতে চেয়েছিল। আমরা মানুষের মধ্যে আশার আলোর সঞ্চার করতে পেরেছি, যা এই পেনডেমিক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত প্রয়োজন।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, বাঙালির সকল অর্জনের পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ শুধু বাংলাদেশের জন্য রাজনৈতিক স্বাধীনতাই এনে দেয়নি, এই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যা যা করা প্রয়োজন ছিল তার সবকিছুই করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশের জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়।

তিনি বলেন, মোটা দাগে বলতে গেলে, বাঙালি জাতি হিসেবে এ পর্যন্ত যা কিছু পেয়েছে, তার সবকিছুই দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ, দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং দূরদর্শী ও বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের সব অর্জন শেখ হাসিনার কারণেই। এ দেশের সব মানুষের কল্যাণের কথা, বিশেষভাবে দরিদ্র-অসহায় মানুষদের কথা, প্রিয় নেত্রীর চিন্ত-চেতনায় সবসময় থাকে। পিতার মতো এ দেশের মানুষকে ভালোবেসে তিনি তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এ বাজেট করোনার বিদ্যমান সংকটকে দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতিকে অধিকতর বহুমুখীকরণের সুযোগ সৃষ্টি ও নতুন সম্ভাবনায় রূপ দেওয়ার বাস্তবসম্মত প্রত্যাশার দলিল। করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে সংকটকালীন ও সংকট পরবর্তী সম্ভাব্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার গতিপথ নির্ণয়ের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই গৃহীত হয়েছে এবারের বাজেট।

তিনি বলেন, এটি জীবন-জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা সরকারের সময়োচিত সাহসী চিন্তার ফসল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শীর্ষক যুগোপযোগী ও জনকল্যাণমুখী বাজেট অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এমপিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি তিনি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা ও কর্মোদ্যোগ বিশ^খ্যাত দ্য ইকোনমিস্ট, ফোর্বস, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামসহ অন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। দ্য ইকোনমিস্ট গত ২ মে গবেষণামূলক এক প্রতিবেদনে ৪টি মানদ-ের ভিত্তিতে ৬৬টি উদীয়মান সফল অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রতিফলন ঘটেছে বাজেটে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে যে সাময়িক প্রয়োজন উদ্ভূত হয়েছে তা মেটানো এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে যে ক্ষয়-ক্ষতি সৃষ্টি হবে তা পুনরুদ্ধারের কৌশল বিবেচনায় নিয়ে এই বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭তম এবং বর্তমান মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট। এ বাজেটে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জীবন ও জীবিকা রক্ষার উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তাছাড়া, বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসৃজন ও সামাজিক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ৫.০১ শতাংশ। আক্রান্তের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার ১.২৬ শতাংশ। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ভারতে ৩.০৮, পাকিস্তানে ২.০৩, যুক্তরাজ্যে ১৪.০৩ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৫.০ শতাংশ। এই তথ্য-উপাত্ত প্রমাণ করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসজনিত মৃত্যুহার নি¤œ পর্যায়ে রাখা গেছে, যদিও একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য নয়। তবে, প্রকৃত মৃত্যুর হার এর চেয়ে আরও কম। বাংলাদেশে করোনা টেস্টের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে সুস্থতার হার বেড়ে যাবে এবং মৃত্যুর হার কমতে থাকবে। কারণ, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা কোন টেস্ট ও চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ্য হয়ে যাচ্ছেন, তাদের কোন তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসজনিত অর্থনৈতিক অভিঘাত হতে উত্তরণের লক্ষ্যে ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নির্বাহের জন্য রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাজেট সহায়তায় এগিয়ে এসেছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উন্নয়ন সহযোগী। তারা ইতোমধ্যে ৫.১৬ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং এ পর্যন্ত ১.৭৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ১৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা সরকারি খাতে জমা হয়েছে।

গত ২৯ জুন মহান জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত হয়। এর আগে ১১ জুন ২০২০ মহান জাতীয় সংসদে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষে তার অর্থমন্ত্রী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাসস