Site icon The Bangladesh Chronicle

বঙ্গোপসাগর না মানবাধিকার?

বঙ্গোপসাগর না মানবাধিকার? – ফাইল ছবি

ভারত পক্ষ বদল করেছে। নতুন করে গ্লোবাল মেরুকরণ শুরু হয়ে গেছে। আর খুব সম্ভবত এটাই শেষ মেরুকরণ হয়ে থাকবে। অল্প কথায় বললে, দুনিয়াতে এটা গ্লোবাল অর্থনৈতিক লিডারের পালাবদলের সময়, যা প্রকাশ পেতে শুরু করেছে চলতি শতকের শুরু থেকেই। পুরান ও প্রথম নেতা, আমেরিকার প্রভাবাধীন দুনিয়া থাকার দিন শেষ হয়ে যাওয়া আর সে জায়গায় চীনের আসন নেয়ার সময়কাল এটা। এ ঘটনাই গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে আমেরিকা ও চীনের ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ নামে হাজির হয়েছিল। এটা অসমাপ্ত ও অমীমাংসিত হয়ে পড়েছিল, নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন কী করেন তা দেখার অপেক্ষায়। পরে বাইডেন নির্বাচিত হলে, তার প্রশাসনের আমলে প্রথম বৈঠক বসেছিল আলাস্কায় গত ১৯-২০ মার্চ যা খুব বড় কোনো অগ্রগতির চেয়ে বরং সঙ্ঘাতপূর্ণ কথাবার্তার লড়াই দিয়ে শেষ হয়েছে।

কিন্তু মূলত এতদিনের চেপে রাখা, আমেরিকার আরেক গোপন এক সামরিক খায়েস- হঠাৎ এর ইঙ্গিত বাইডেন প্রকাশ করাতে আর সাথে আরও কিছু কারণে ভারত আমেরিকান স্ট্রাটেজিক জোট ‘কোয়াড’ থেকে অঘোষিতভাবে বের হয়ে গেছে। ‘ছটঅউ’ চীনবিরোধী চার রাষ্ট্রের একটা জোট যার সদস্যরা হলো, আমেরিকা-ইন্ডিয়া-অস্ট্রেলিয়া-জাপান। ‘কোয়াড’ শব্দটা- সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে তৈরি করা কোনো নাম নয়। ইংরেজি কোয়াড শব্দের অর্থ চারমাথা অথবা চার বাহুবিশিষ্ট, আর তা থেকে এমন নাম। সেই কোয়াডের সদস্য ভারত গত ২৭ মার্চ তার বাকি কোয়াড বন্ধুদের অবস্থানের বিপরীতে চীন-রাশিয়ার জোটে চলে গিয়ে তাদের সাথে বার্মা ইস্যুতে প্রকাশ্যে মিয়ানমার বা বার্মার পক্ষে অবস্থান প্রকাশ করেছে। আর সে কারণে ব্যাপারটাকে দুনিয়া নতুন মেরুকরণের প্রকাশ হিসেবে দেখা শুরু হয়েছে।

সেটা হলো, মোদি-হাসিনার ঐক্য আমেরিকাবিরোধী চীন-রাশিয়ার যে জোট আছে তাতে প্রকাশ্যেই দ্বিধা ছেড়ে এবার যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে মূল তাৎপর্য হলো, গত ২০ বছর ধরে ভারত আমেরিকার সঙ্গ ছাড়ে নাই, এভাবেই এশিয়ায় আমেরিকার কৌশলগত মূল মিত্র থেকেই ভারত চীনের সাথে তার বিরোধিতাও করে গেছে। সর্বশেষ গত বছর চীনের সাথে লাদাখ সীমান্তে সেনা সমাবেশ, ভারতীয় সৈন্যের মৃত্যু আর সবশেষে, চীনের কাছেই ভূমি ও সৈন্য হারিয়েছিল ভারত। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর পরেই সামরিক দিক থেকে ভারত অনেক খাটো; তা স্বীকার করে নিয়ে চীনের সাথেই সব মিটমাট করেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত সৈন্য প্রত্যাহার করেছে। আর সাথে চীনও যাতে তাদের সেনা ফিরিয়ে নেয় সে ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এসব সত্ত্বেও মার্চ মাসের শেষেই উলটা চিত্র- চীনের কোলেই ঝাঁপিয়ে পড়া। যার মূল কারণ, বাইডেনের বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর মোতায়েনের ইচ্ছা।

এবার বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত হয়েছেন প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জন কেরি। আগামী ৯ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশে সফরে আসছেন; যার দৃশ্যমান কারণটা হলো, ক্লাইমেট ইস্যুতে বাইডেন ৪০ দেশকে ওয়াশিংটনে আমন্ত্রিত করতে চান, এরই দাওয়াত দিতে। এটা শেখ হাসিনা সরকারের জন্য একটু বেশি সম্মান পাওয়ার ব্যাপার হচ্ছে বলে মনে করা কারো চোখ এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু কেন? যেখানে আমেরিকার মানবাধিকার রিপোর্টে সরকারের সমালোচনা ইতোমধ্যেই বিধৃত হয়েছে! আরেক দিকে আমরা দেখছি কিন্তু রোহিঙ্গা-ইস্যুতে হাসিনা সরকারকে বাইডেনের ব্যাপক সমাদর প্রশংসাও কারো চোখে পড়েনি এমন নয়। এ থেকেই জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে যে, হাসিনা যদি ক্লাইমেট ইস্যুতে ওয়াশিংটনের দাওয়াত গ্রহণ করে আগামী ২২ এপ্রিল সেখানে উপস্থিত হন তবে কি এই প্রশংসার আড়ালে বাইডেন নিজের অন্য উদ্দেশ্য বের করবেন? এর মানে কী? আমাদের সরকার কি বাইডেনের বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর মোতায়েন রাখার প্রস্তাবকে জায়গা করে দিতে ও সামিল হতে বড় চাপের সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন?

সেটা আমরা ৯ এপ্রিল রাতের মধ্যে অনেকটাই স্পষ্ট জেনে যাবো, আশা করি। আবার যেমন জন কেরিকে আদৌ হাসিনা ২২ এপ্রিল ওয়াশিংটনে উপস্থিত থাকার প্রতিশ্রুতিই যদি না দেন, তাহলে আমরা অনেকটাই পরিষ্কার ধারণা করতে পারব।

সেটা দেখতে আমাদের আগামী ৯ বা ২২ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করার আগেই মেরুকরণের অনেক মহড়াই প্রকাশিত হয়ে গেছে। আমেরিকাবিরোধী চীন-রাশিয়া জোট এবার তুলনায় অনেকদূর এগিয়ে গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনুমান, মোদির ঢাকা সফরেই তারা কমন অবস্থান নিয়ে ফেলেছেন আমেরিকাকে বঙ্গোপসাগরের বাইরে রাখার জন্য। আর এতে ভারত কতটা সিরিয়াস মনস্থির এবং মোদি ও শেখ হাসিনা কতটা বাইডেনের খায়েসবিরোধী সম্ভবত এরই প্রমাণ দেখাতে ভারত প্রকাশ্যেই আমেরিকান স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ত্যাগ করেছে এবং তা প্রকাশ্য প্রদর্শন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আবার বলা যায়, সেটাই লুফে নিয়েছে চীন-রাশিয়ার জোট। তারাও এটা প্রকাশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে চিহ্নিত করে রাখতে সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২৬ মার্চ মোদি-হাসিনার আলোচনা ও সিদ্ধান্তের পরের দিন ছিল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ‘প্রতিষ্ঠা দিবস’। খুব বিশাল কোনো ‘আন্তর্জাতিক’ তাৎপর্য থাকার মতো দিন এটা নয় যদিও অভ্যন্তরীণভাবে বার্মার শাসকদের কাছে এর অনেক গুরুত্ব থাকতে পারে। কিন্তু এই দিনটাতে আমেরিকাবিরোধী চীন-রাশিয়ার জোটের সক্ষমতা দেখানোর মহড়া করা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতের আমেরিকা ছেড়ে তাদের পক্ষে যোগ দেয়ার দিন হিসেবে ঠিক এ দিনকেই তারা শোআপ বা প্রদর্শনের দিন হিসেবে নিয়েছেন। এমন মনে করার স্পষ্ট কারণ ঘটেছে; যদিও প্রকাশ্যে ভারত এখনো কোথাও বলেনি যে, সে কোয়াডকে বিদায় বলছে। কিন্তু বলা হচ্ছে, মিয়ানমারে অবস্থিত ৪২টি দেশের অ্যাম্বাসির মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস এবং রাশিয়া ও চীন- এভাবে আট রাষ্ট্রের মিলিটারি অ্যাটাসে মিয়ানমারের ওই অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে অংশ নিয়েছিলেন। আর সেখানে প্রধান অতিথি হয়েছিলেন রাশিয়ার ডেপুটি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেকজান্ডার ফোমিন।

প্রথমত, মিয়ানমারের এমন এক অভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠানে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতি অবশ্যই যতটা জরুরি এর চেয়ে অনেক বেশি করে ফেলা বিশেষ ঘটনা বলে দেখার আছে। কিন্তু যদি ভারতের কোয়াড ছেড়ে পক্ষ-ত্যাগ বা গত ২০ বছরের ভারত-আমেরিকার স্ট্র্যাটেজির সাথে চলার সমাপ্তি দিন হিসেবে মার্ক করে রাখাকে দেখি তবে রাশিয়ান মন্ত্রীর উপস্থিতিকে খুবই ‘পারফেক্ট’ বলতেই হয়। আবার অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, সেটা চীন না হয়ে রাশিয়াইবা কেন? এর জবাবও স্পষ্ট। ভারতের কোয়াড ত্যাগ এখনো অঘোষিত হলেও এটাই ভারতের স্থায়ী অভিমুখ মনে হচ্ছে বলে আমরা ধরে নিতে পারি।

এ ঘটনার তাৎপর্য হবে সে ক্ষেত্রে যে, চীন-ভারতের বৈষয়িক স্বার্থসঙ্ঘাতের (যেটা গত মাস পর্যন্তও যতই তীব্র থাকুক) চেয়েও বঙ্গোপসাগরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের খায়েস রোধ করা ভারতের জন্য অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ। অবশ্যই। তাই চীন ও ভারতের বৈষয়িক স্বার্থসঙ্ঘাতকে আমেরিকাবিরোধী চীন-রাশিয়ার স্বার্থ জোটের স্বার্থের অধীনে রাখা ভারত খুবই জরুরি মনে করছে। আর এমন নিচে শীতল ও নিয়ন্ত্রিত করে রাখার ক্ষেত্রে মূল মধ্যস্থতাকারী, গ্যারান্টর ও প্রভাবকের ভূমিকা রাশিয়া ছাড়া আর কারোই বা হতে পারে!

আবার অন্য তাৎপর্য হলো, মূল হবু আর পুরান গ্লোবাল নেতা চীন ও আমেরিকার লড়াইয়ে নিজ নিজ জোটবদ্ধতা দেখানোর ক্ষেত্রে এতদিন আমেরিকা এগিয়ে বলে মনে করা হতো। বিশেষত ট্রাম্প আমল থেকেই কোয়াড আর ইন্দো-প্যাসিফিক উদ্যোগের নাম বেশি প্রকাশ করা হতো; যদিও কার্যত কোয়াডের বাইরে কেউ সরাসরি ইন্দো-প্যাসিফিক উদ্যোগের পার্টনার হয়েছে এমন নাম লেখানো দূরে থাক, আগ্রহ প্রকাশ করেছে সাউথ চায়না সি-এর এমন পড়শি কোনো দেশের নাম এখনো শোনা যায়নি।

এর তুলনায় তাই আমেরিকাবিরোধিতায় চীন-রাশিয়া তাদের পক্ষের রাষ্ট্রগুলোর নামের তালিকা প্রকাশ করে দেখিয়ে দেয়া অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন ভিয়েতনামের কথাই ধরা যাক। ভৌগোলিকভাবে সাউথ চায়না সিকে কেন্দ্র করে বিতর্কে চীন-ভিয়েতনাম সমুদ্রসীমা পড়শি ১০ দেশের মতোই অচিহ্নিত, ফলে অমীমাংসিত। আবার চীন সমুদ্রসীমার বিতর্ক ফায়সালা করতেই চায় না, ব্যাপারটা ঠিক তাও নয়। কিন্তু চীন কোনোভাবেই এ নিয়ে আমেরিকার কোনো চাপ তৈরি বা ইস্যু বানানোর মুখে কোনো আপস বা ছাড় দেবে না। ফলে আমেরিকান ক্যালকুলেশনে ভিয়েতনামকে এতদিন আমেরিকার পক্ষে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে অংশ নিতে চাওয়া সম্ভাব্য রাষ্ট্র মনে করা হয়ে এসেছে। কিন্তু সেই ভিয়েতনাম ২৭ মার্চ চীন-রাশিয়ার জোটে নিজের অবস্থান দেখিয়েছে। এটা অবশ্যই জো বাইডেনের বড় পরাজয়ের সূচনা।

বাইডেনের মানবাধিকারের ফুটা গর্ব
ওদিকে বাইডেন চীন-রাশিয়া পক্ষজোটের বিরুদ্ধে যদিও গর্ব করার চেষ্টা করছেন, তার নিজ-পক্ষজোটের ভিত্তি হলো ‘মানবাধিকার’। এর মানে যেন তার জোটের এথিক্যাল-পলিটিক্যাল ভিত্তি অনেক শক্ত।

কিন্তু না। আমাদের সবার জন্যই সবচেয়ে খারাপ কথা হচ্ছে, গ্লোবাল পালাবদলের কালে আমরা চীন-আমেরিকার পক্ষ-বিপক্ষ বলে যে দুটো জোট সাজতে দেখছি তাদের দু’পক্ষেরই এথিক্যাল ও রাজনৈতিক ভিত্তি খুবই দুর্বল শুধু নয়, ভিত্তিই নেই বলা যায়।

আর যদি তুলনা করি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাথে, তাহলে দেখব সেকালে দুইপক্ষের (হিটলারের পক্ষ ও বিরোধীপক্ষ) মেরুকরণের এথিক্যাল ও রাজনৈতিক ভিত্তি অনেক শক্ত ছিল। যেমন যুদ্ধোত্তর দুনিয়া কলোনিমুক্ত এক দুনিয়া হবে- এটা ছিল সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভিত্তি। এ ছাড়া রাষ্ট্রগুলোর গঠন বা পুনর্গঠন হবে নাগরিকের নাগরিক ও মানবিক অধিকারের ভিত্তিতে; আর এই ভিত্তিতে রাষ্ট্রগুলোর কাঠামো পরিবর্তিত হবে- এটাও খুবই শক্ত এথিক্যাল ও রাজনৈতিক ভিত্তি ছিল। এ কারণে আরো ছিল যেমন ১৯৪৮ সালের ইউএন হিউম্যান রাইটস্ চার্টার ঘোষণা এবং ১৯৫৩ সালে ইউরোপের ৪৭ রাষ্ট্রের নিজ নিজ রাষ্ট্র-পুনর্গঠন করে নেয়ার সম্মেলন ‘কাউন্সিল অব ইউরোপ’- সেটাও আরেক বিরাট অগ্রগতি ও এথিক্যাল-পলিটিক্যাল ভিত্তি।

এসবের তুলনায় পুরনো কমিউনিস্টদের মানবাধিকার বা তাদের রাষ্ট্রবিষয়ে চিন্তা ও চর্চায় নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে মারাত্মক অসঙ্গতি ও ঘাটতি এখনো আগের মতোই; তাই বলাই বাহুল্য, সেটা অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু এর বিপরীতে বাইডেনের মানবাধিকার অবস্থান আরো বিপজ্জনক। আজ বাইডেনের অবস্থানে মানবাধিকারের মানে হয়েছে, মানবাধিকারের প্রশ্ন তুলে সেটাকে চীন বা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের থেকে বৈষয়িক-বাণিজ্যিক সুবিধা আদায়ের উপায় হিসেবে ব্যবহার করা; আপস করে বিক্রি করে দেয়াই হলো ‘মানবাধিকার’।

মেরুকরণ খুবই দ্রুত বাড়ছে, আকার নিচ্ছে। বিশেষ করে বাইডেনের বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর মোতায়েন রাখার খায়েস প্রকাশ হয়ে পড়াকে কেন্দ্র করে মেরুকরণে গতি পেয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো- যখন আমরা দেখছি, বাইডেন এক হাতে বঙ্গোপসাগরের খায়েস নিয়েও অন্য হাতে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা তুলছেন। বঙ্গোপসাগর না মানবাধিকার- আসলে কোনটা তার অবস্থান? এ দুটো তো একসাথে হাতে তোলা যায় না! আর এটা কি কোনো অবস্থান হতে পারে? শেখ হাসিনাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে বাইডেন কি তাকে বঙ্গোপসাগরে অ্যাকসেস পেতে চাপ দেবেন? আর এটা দিয়ে তিনি কি মনে করেন, বিনিময়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার রেকর্ড ভালো করে দেবেন? সার্টিফিকেট দেবেন? এটাই তো ‘মানবাধিকার ব্যবসায়ী’র কাজ!

আজকের বার্মার রাজনৈতিক দুর্দশার পেছনে কি আমেরিকার এই একই মানবাধিকার ব্যবসা দায়ী নয়? মিয়ানমারের ২০০৮ সালের কনস্টিটিউশন কেন আমেরিকার মানবাধিকারের চোখে সায় পেয়েছিল যেখানে উদ্দেশ্য হিসেবেই লেখা আছে- সামরিক বাহিনী রাজনীতি করবে, এতে অংশ নেবে! আজকের বার্মার রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভকারী গুলি খেয়ে মরবে, এটাই তো সেসব অনুমোদন দিয়ে ব্যবসা বাগানোর পরিণতি, নয় কি?

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

Exit mobile version