দেশে চলছে ‘উল্টে পাল্টে দে মা, লুটেপুটে খাই’: রিজভী

দেশে চলছে ‘উল্টে পাল্টে দে মা, লুটেপুটে খাই’: রিজভী

প্রথম আলো
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা    ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবিরুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবিদেশে এখন শুধু ‘উল্টে পাল্টে দে মা, লুটেপুটে খাই’ অবস্থা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, লুটপাটের কারণে গত কয়েক মাসে শেয়ারবাজার থেকে বিদেশিরা ৬০০ কোটি টাকা পুঁজি তুলে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের লোকজন লুটপাট আর দুর্নীতিকে তাদের নীতি করে নিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। দলটির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, দুর্নীতি এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। আর্থিক খাত আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ধুঁকছে। বাংলাদেশ খেলাপি ঋণের ব্যাপারে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে, যা ১২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষক ধান পুড়িয়ে দেয়, কোরবানির চামড়ার ন্যায্য মূল্য না পেয়ে মানুষ চামড়া মাটিতে পুঁতে রাখে, অথচ দেশের সরকারি বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় চলছে হরিলুট। ব্যাংকগুলো পরিণত হয়েছে লুটেরাদের মানিব্যাগে। দেশে বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। টাকা পাচারকারী, ব্যাংক ডাকাত আর ঋণখেলাপিদের বেপরোয়া লুটপাটে দেশের ব্যাংকগুলো প্রায় দেউলিয়া। শেয়ারবাজারের লুটপাটের কারণে গত কয়েক মাসে শেয়ারবাজার থেকে বিদেশিরা ৬০০ কোটি টাকা পুঁজি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, কেবল ব্যাংক আর শেয়ারবাজার নয়, দুর্নীতির দুরন্ত গতি চলছে সরকারের সব প্রকল্প এবং প্রতিষ্ঠানজুড়ে। চারদিকে শুধু ‘উল্টে পাল্টে দে মা, লুটেপুটে খাই’ অবস্থার বিস্তার ঘটেছে। গত মে মাসে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬ হাজার ৭১৭ টাকায় একেকটি বালিশ ক্রয়ের মহাদুর্নীতিসহ ৩৬ কোটি টাকার বেশি লুটপাট হয়েছে। এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর এবার দুর্নীতির বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ফরিদপুর হাসপাতাল রোগীকে আড়াল করার একটি পর্দা কিনতে দাম দেখিয়েছে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। হাসপাতালটির যন্ত্র ও সরঞ্জাম কেনাকাটাতেই অন্তত ৪১ কোটি টাকার দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নানা প্রকল্পের নামে ক্ষমতাসীন দলের লুটেরাদের কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হয়ে এখন প্রশাসনের লোকজনও জড়িয়ে পড়েছে স্বেচ্ছাচারিতা আর দুর্নীতিতে। হারিয়ে গেছে জবাবদিহি আর শৃঙ্খলার সব রীতিনীতি। পুকুর কাটা শিখতে রাজশাহীর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করে ইউরোপ সফরে যাচ্ছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের এটা আসলে অভিজ্ঞতা সফর, নাকি ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যরাতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ব্যালট বাক্স ভরে দেওয়ার পুরস্কার, তা জানা দরকার।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সরকারবিরোধী নেতা-কর্মীর পেছনে বেপরোয়াভাবে ছোটাছুটি করলেও দেশের প্রতিটি সেক্টরে যখন দুর্নীতি মহামারি আকার ধারণ করেছে, তখন তারা নীরব। আমরা মনে করি, দুদকের হাত-পা বর্তমান শাসক দলের কাছে বাঁধা রয়েছে। আমরা এও মনে করি, শাসক দলের লোকজন প্রতিটি দুর্নীতি আর লুটপাটে জড়িত। মধ্যরাতের নির্বাচন করে দম্ভে ও গর্বে সরকার আত্মস্ফীত, সে জন্য লাগামহীন দুর্নীতি হচ্ছে—সরকারের টিকে থাকার ভূষণ। প্রতিটি ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে সরকারের ঊর্ধ্বতনরা।’