ঘুষের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটছে

ঘুষের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটছে

‘ট্রেস’ ঘুষবিরোধী একটি বৈশ্বিক সংস্থা। একটি দেশ কতটুকু ব্যবসাবান্ধব, ঘুষের ঝুঁকির নিরিখে তারা সেটি নির্ণয় করে থাকে। চারটি আলাদা ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি তারা পরিমাপ করে আসছে। প্রতিটির জন্য ১০০ করে মার্কস রয়েছে। স্কোর যত বেশি হবে, ঘুষের ঝুঁকির সম্ভাবনাও তত বেশি। সংস্থাটির সদর দফতর যুক্তরাষ্ট্রে। নিবন্ধন কানাডায়। এর কার্যক্রম অনেকটা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতোই। ২০১৪ সালে এটি ঘুষ গ্রহণের সূচক তৈরি করতে শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির তৈরি করা ঘুষের ঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশ একেবারে ওপরের দিকে রয়েছে। আমরা যুদ্ধবিধ্বস্ত ভঙ্গুর আফগানিস্তানকেও এবারের যাত্রায় পেছনে ফেলে দিয়েছি।

ব্যবসায়িক ক্লায়েন্টদের উদ্দেশ করে ট্রেস ঘুষের ঝুঁকির এ তালিকা তৈরি করেছে। সুতরাং এ তালিকা করতে গিয়ে তারা প্রধানত মাথায় রাখে, একজন বিনিয়োগকারী কোথায় কোথায় ঘুষ প্রদানের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ীরা এ থেকে এই বিষয়ে ধারণা পেতে পারেন। কোন দেশে বিনিয়োগ সহজ, এ তালিকা দেখে বোঝার চেষ্টা করেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বহু উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। অনেক বেশি ছাড় দেয়ার ঘোষণা দেয়া হচ্ছে।

‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ দেয়ার মাধ্যমে এক টেবিলে পূর্ণাঙ্গ সমাধানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারের এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের প্রচেষ্টার মধ্যে ট্রেসের জরিপে আমাদের দেশটিকে আকণ্ঠ ঘুষের ঝুঁকিতে নিমজ্জিত বলেই ধারণা দেয়া হচ্ছে। এ তালিকা দেখে একজন বিনিয়োগকারী বাংলাদেশকে ‘উচ্চ ঘুষের ঝুঁকির দেশ’ হিসেবে গণ্য করবেন। ফলে তারা এদেশে বিনিয়োগ কিংবা ব্যবসায় করার জন্য এগিয়ে আসবেন না। এখন পর্যন্ত বাইরের বিনিয়োগকারীদের যে ঝোঁক, তা ট্রেসের এ তালিকাকে সঠিকই প্রমাণ করে।

ট্রেস ‘ব্রাইবারি রিস্ক ম্যাট্রিক্স ইনডেক্স’ ২০১৯ তালিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশের মার্কস ৭২। বিশ্বে গড়পড়তা ঘুষ গ্রহণের ঝুঁকির মার্কস তাদের হিসাবে ৫১। সেই হিসাবে ঘুষে আচ্ছন্ন দেশগুলোর চেয়েও ২১ পয়েন্ট বেশি পেয়ে ‘এগিয়ে রয়েছে’ বাংলাদেশ। সবচেয়ে কম ঘুষের ঝুঁকির দেশ নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের কোনো তুলনাই চলে না। এ দেশগুলো স্বচ্ছ গণতন্ত্র ও উদার শাসনসংবলিত এবং মৌলিক মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সূচকেও আমরা দেখেছি, এ দেশগুলো প্রথম দিকেই রয়েছে। ঘুষ লেনদেনের ঝুঁকির ক্ষেত্রে আমরা প্রতিযোগিতা করছি ইয়েমেন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া ও ভেনিজুয়েলার মতো দেশের সাথে। এ দেশগুলো তালিকায় একেবারে তলানিতে।

ইয়েমেন ও দক্ষিণ সুদান গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত দেশ। এসব দেশের আইন ও প্রশাসন অনেকটাই বিধ্বস্ত। এসব দেশে নিয়মকানুন কিছু নেই। যতটুকু প্রশাসন কায়েম রয়েছে, তাদের জবাবদিহিতা নেই। সোমালিয়া ভয়াবহ উগ্রবাদকবলিত। অন্য দিকে, উত্তর কোরিয়া দীর্ঘ দিন শাসনে রয়েছে স্বৈরাচারের। সেখানে সভ্য বিশ্বের আইনকানুন, রীতি-রেওয়াজ কিছুই মানা হয় না। এক ব্যক্তির ইচ্ছায় সব চলে। এ সুযোগের মধ্যে গড়ে উঠেছে একটা সুবিধাবাদী শ্রেণী। বঞ্চিত মানুষেরা দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরাচারী সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ দিয়ে যা সামান্য কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়া সম্ভব, তা আদায় করে নিতে পারে। বাকিরা ধরতে গেলে নির্যাতিত-নিপীড়িতই রয়ে গেছে।

ঘুষের ঝুঁকির ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে আমরা অনেক এগিয়ে রয়েছি। বাংলাদেশের অবস্থান ভারতের চেয়ে ১০০ পিছিয়ে। ভারতের অবস্থান শুধু ৭৮ আর আমরা ১৭৮। পাকিস্তানও আমাদের চেয়ে বেশ এগিয়ে, ১৫৩তম অবস্থানে। আমাদের সাথে কিছু প্রতিযোগিতা করতে সমর্থ হচ্ছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপের সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছ। তারা ঘুষের ঝুঁকির ক্ষেত্রে মধ্যম মানের দেশ। অর্থাৎ তারাও আমাদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ভুটানে ঘুষ গ্রহণের ঝুঁকি সর্বনিম্নপর্যায়ে। বিভিন্ন জরিপে সুখী মানুষের দেশ হিসেবে ভুটান চিহ্নিত হয়েছে। দেশটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র হলেও একটি সুন্দর রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে পেরেছে। বিশ্বের বৃহৎ দু’টি দেশ চীন ও ভারতের মাঝে অবস্থান করেও নিজেদের উচ্চ মানবিক অবস্থান বজায় রেখে চলেছে ভুটান। এদেশটি থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। দুর্ভাগ্য, আমাদের শেখার মানসিকতা নেই।

ট্রেস ম্যাট্রিক্স ব্যবসায় ঘুষের ঝুঁকি পরিমাপ করে চারটি উপাদান দিয়ে। প্রথমটি হচ্ছে, সরকারের সাথে ব্যবসায়ের বিষয়ে বোঝাপড়া। ম্যাট্রিক্সের হিসাবে এ বিভাগে বাংলাদেশের স্কোর ৮৬। কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এত বেশি মার্কস পাওয়ার অর্থ হচ্ছেÑ ঘুষের অতি উচ্চ প্রত্যাশা। সরকারের পক্ষের লোকেরা তাদের ব্যবসায় ক্লায়েন্টদের কাছে ঘুষ পাওয়ার অত্যধিক লোভ রাখেন। একজন ব্যবসায়ী, যিনি এদেশে ব্যবসায় করতে আসেন কিংবা দেশের মধ্যে থেকে যারা ব্যবসায় করতে চান, তাদের অনেক বিষয়ে সরকারি প্রশাসনের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। প্রশাসনের অনুমোদনের প্রতিটি পয়েন্ট একেকটি ফাঁদ।

সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা মনে করেন, এটা তাদের জন্য উপরি আয়ের একটা মহা সুযোগ। ব্যবসায়ীদের পেয়ে তাদের লোভ জেগে ওঠে। তার মানে দাঁড়ায়, ব্যবসায় করতে গিয়ে এ দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিতে হচ্ছে বেশি পরিমাণ ঘুষ। এ জন্য চাপানো আছে নিয়মকানুনের উচ্চ বাধ্যবাধকতা। প্রতিটি নিয়মকানুন ব্যবসায়ের কার্যক্রমকে মসৃণ ও নির্ঝঞ্ঝাট করার জন্য নয়; বরং ব্যবহৃত হচ্ছে ঘুষ গ্রহণের জন্য। এ বিভাগে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ মার্কস পেয়েছে। তাতে বোঝা যায়, বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসনে ঘুষ গ্রহণের প্রবণতা কত বেশি।

দ্বিতীয় উপাদান বা টুলটি হচ্ছে, ঘুষ প্রতিরোধে শক্তি প্রয়োগ। ট্রেস ম্যাট্রিক্সের গণনায়, এই অংশে বাংলাদেশের মার্কস ৬৩। তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ঘুষ নিরুৎসাহিত করা এবং ঘুষ রোধে শক্তি প্রয়োগের প্রচেষ্টা বাংলাদেশে দুর্বল। দুর্নীতি দমন কমিশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান অবশ্য বাংলাদেশে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি দমনে এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সফলতাই দেখাতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারের লেজুড় বলে জনগণের বিরাট অংশ বিশ্বাস করে। বিগত এক দশকে দেশে বড় বড় লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। এ মহাদুর্নীতি অনেকটাই ঘটেছে প্রকাশ্যে।

বড় বড় দুর্নীতির কাজ হতে পেরেছে সরকারের শীর্ষপর্যায়ের কিছু ব্যক্তির আনুকূল্যের কারণে। এ ধরনের আনুকূল্য প্রদান ঘুষ ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু দুদক বা দুর্নীতি দমন কমিশনকে দেখা গেছে ‘চুনোপুঁটি’দের পেছনে দৌড়ঝাঁপ করতে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি দুর্বল হয়ে পড়া, বিরোধী দলের নেতাদের দুর্নীতি দমনে অতি উৎসাহ দেখিয়েছে। অথচ বাংলাদেশের বিরোধী দলের নেতারা কোনো ক্ষমতা ও প্রভাবের অধিকারী নন। বিগত এক দশকে বাংলাদেশে বিরোধী দলীয় রাজনীতিকেরা সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। এই সময়ে তাদের দুর্নীতি করার সক্ষমতা থাকার কথা নয়। অন্য দিকে সরকারি দলের যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, দুদক তাদের অনেকের পক্ষে সাফাই গেয়ে সনদ দিয়েছে। এমন উল্টো নীতি ঘুষ গ্রহণের ঝুঁকিকে স্বাভাবিকভাবেই বাড়িয়ে দিয়েছে।

সরকার পরিচালনা ও প্রশাসনের সেবায় স্বচ্ছতা, অংশে বাংলাদেশ পেয়েছে ৬০। কার্যত সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে শুরু করে একেবারে নিচের পর্যায় পর্যন্ত কোথাও কার্যকর জবাবদিহিতা নেই। দেশ পরিচালনায় সরকার ও ক্ষমতাসীন দল মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এ দলের লোকেরা প্রশাসনের কেন্দ্রে রয়েছে। তারা কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়বদ্ধতা দেখান না। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, দেশের মালিক জনগণ। সব ব্যাপারে সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ বলে সংবিধানে লেখা রয়েছে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন নেই। বিগত এক দশকে এক্ষেত্রে চূড়ান্ত অবনতি ঘটেছে। ফলে প্রশাসন সেবাদানের পরিবর্তে সবার জন্য এক প্রকার ফাঁদ পেতে রেখেছে। যারাই তাদের কাছে সেবার জন্য যান, তাদের ওপর খড়গ নেমে আসছে। এর অর্থ হচ্ছে, সরকারের কার্যক্রমে কাক্সিক্ষত মানের স্বচ্ছতা নেই। লোভের লকলকে জিহ্বা দিন দিন লম্বা হচ্ছে।

চতুর্থ মানদণ্ড হচ্ছে, সুশীলসমাজের তদারকি কিংবা মতামত প্রদান। এই অংশে বাংলাদেশের প্রাপ্ত মার্কস ৬৪। এর মানে হচ্ছে, এ দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিম্নপর্যায়ে রয়েছে। একই সাথে সুশীলসমাজের ভূমিকাও সামান্য। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রবল হুমকির মধ্যে রয়েছে। নতুন জারিকৃত, তথ্যপ্রযুক্তি আইন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে আরো সঙ্কুচিত করেছে। এ আইনের বলে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর সরকার সহজে চড়াও হতে পারে। নিছক সন্দেহের বশবর্তী হয়ে সাংবাদিকদের আটক করতে পারে। নিয়মকানুনের দোহাই দিয়ে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালানোর সুযোগ মিলছে।

এ অবস্থায় খবর প্রকাশে সংবাদমাধ্যমের হাত-পা বাঁধা পড়ে গেছে। খবর প্রকাশের সুযোগ সীমিত হওয়ার মূলত ঘুষ গ্রহণের সুযোগকে আরো বাড়িয়ে দেবে। অন্য দিকে, এদেশের সুশীলসমাজ ভারসাম্যপূর্ণভাবে বিকশিত হয়নি। জনগণের পক্ষে কথা বলার চেয়ে দলীয় চিন্তাভাবনার মধ্যে তারা বেশি খাবি খায়। যারা জনগণের পক্ষে বিভিন্ন সময় অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করেছেন, তাদের কঠোরভাবে দমানো হয়েছে। এ দেশে মূলত একটি দমবন্ধ হওয়া পরিবেশ বিরাজ করছে। ঘুষের মতো অবৈধ কারবার তাই বেশ উৎসাহের সাথে বিস্তার লাভ করাই অনিবার্য।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতি সূচকেও বাংলাদেশ প্রথম দিকে রয়েছে। সেখানে আমরা রয়েছি ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪৯ অবস্থানে। এ ব্যাপারে আমরা প্রতিযোগিতা করছি আফ্রিকার নাইজেরিয়া, মৌরিতানিয়া ও কেনিয়ার সাথে। তবে এ দেশগুলোতে আমাদের দেশের চেয়ে কম দুর্নীতি হয়। দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশ ২০০১ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। অর্থাৎ সব দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ দুর্নীতিপ্রবণ হিসেবে গণ্য হয়েছিল। এর পর টানা পাঁচ বছর বাংলাদেশ এ তালিকায় এক নম্বর অবস্থানে ছিল। প্রথম অবস্থান থেকে সরে এলেও বাংলাদেশে দুর্নীতি কমে গেছে, এটা বলার সুযোগ নেই। বরং দুর্নীতি আগের মতো রয়েছে কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে সেটা বেড়েছে। তালিকায় এক নম্বর দেশ থেকে অবনমনের কারণ, সম্ভবত কিছু ভঙ্গুর দেশের এ তালিকায় অন্তর্ভুক্তি। ওইসব দেশে সরকার পরিচালনা ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং অভ্যন্তরীণভাবে ভেঙে পড়া রাষ্ট্রব্যবস্থার দরুণ এমনটি হচ্ছে। আফ্রিকার দেশ সুদান ও সাউথ সুদান, পূর্ব এশিয়ার দেশ উত্তর কোরিয়া, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ও আফগানিস্তান- এসব দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা হুমকির মুখে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় নেই কোনো স্থিতিশীলতা। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে তাদের রাষ্ট্রকাঠামো।

বাংলাদেশ এক ইউনিটবিশিষ্ট রাষ্ট্র। এ দেশের মানুষ ধর্ম-বর্ণ-জাতপাতের ভিত্তিতে বিভক্ত নয়। তবে ইতিবাচক দিকটিকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন আমাদের রাজনীতিকেরা। যেখানে কোনো বিভাজন নেই, সেখানে তারা বিভাজন তৈরি করার অপচেষ্টা করেন নিজেদের সঙ্কীর্ণ ও হীনস্বার্থে। কেবল ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য তারা সৃষ্টি করে চলেছেন কথিত ‘পক্ষ’ ও ‘বিপক্ষ’। ঘৃণা ও উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সব জায়গায়। আর প্রশাসনকে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘যাচ্ছেতাই’। ট্রেস ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সূচকে এরই প্রতিফলন ঘটছে। আমরা দুর্নীতি করার সুযোগ পাচ্ছি, তাই দুর্নীতি করছি।

ঘুষ খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি, তাই ঘুষ খাচ্ছি। একটি শান্ত স্থিতিশীল দেশ হওয়ার পরও দুর্নীতি, তথা ঘুষের ইস্যুতে আমরা বিশৃঙ্খল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর কাতারেই রয়ে গেছি। আমরা আজ প্রতিযোগিতা করছি সুদান, সিরিয়া, ইয়েমেন ও আফগানিস্তানের সাথে। আমরা উত্তর কোরিযার মতো নিম্নপর্যায়ের এবং রুচিহীন শাসনকেও ছাড়িয়ে যেতে পারছি না। অবস্থার উন্নতির ক্ষেত্রে কোনো আলো এখনো দেখা যাচ্ছে না। জনগণের পক্ষ থেকে অবস্থার পরিবর্তনের আকাক্সক্ষা রয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়নে কোনো রাজনৈতিক শক্তি নেই।

jjshim146@yahoo.com